বৈধতার সঙ্কট

  • ড. আবদুল লতিফ মাসুম

বৈধ বা অবৈধ বিষয়টি অতি সাধারণ। যে কেউ যেমন ভালো মন্দ বোঝে, তেমনি বৈধ অবৈধ সম্পর্কে ধারণা রাখে। যে কাজটি ন্যায় বা সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই মেনে নেয়, সেটি বৈধতার প্রমাণ বহন করে। আবার যা কিছু অন্যায় মানুষ তা বোঝে। সেভাবেই তার বিচার বিবেচনা চলে আসে। যেমন ধরুন একটি জমি নিয়ে ঝগড়া। সে জমির মালিক একজন সাধারণ মানুষ। আর অসাধারণ একজন দলিল, রেকর্ড পর্চা জাল করে সে জমি দখল করতে চায়। তখন পাড়া প্রতিবেশী বলে জাল দলিলের দাবি অবৈধ। আসলে বৈধ মালিক সেই সাধারণ মানুষ যে প্যাঁচগোজ বোঝে না, সহজ সরল মানুষ। অনেক সময় ক্ষমতার জোরে মানুষ কথা বলে না। কিন্তু সত্য মিথ্যা সবাই বোঝে। বৈধ অবৈধের নীরব সাক্ষী মানুষজন। রাজনীতির পিতৃপুরুষ এরিস্টটল বলেছেন, আপনি নিজ চেহারাটি ছোট আয়না দিয়ে দেখতে পারেন, আবার বড় আয়না দিয়েও দেখতে পারেন। ছোট আয়না যদি হয় ব্যক্তি তাহলে বড় আয়না হতে পারে রাষ্ট্র। আমার শিক্ষক পিতা বলতেন, রাষ্ট্র রাজনীতি বোঝা অত কঠিন বিষয় নয়। নিজের পরিবার, পরিজন ও প্রতিবেশ দেখলেই রাজনীতি বোঝা যায়। আর গাঁওগ্রামের রাজনীতি বুঝতে ‘ভিলেজ পলিটিক্স’-এর নাম বদনাম তো আছেই। আমরা ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রে এবং স্টেট পলিটিক্স থেকে ভিলেজ পলিটিক্সে যেতে চাই।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় বৈধ অবৈধের বিবিধ ব্যাকরণ আছে। এই ব্যাকরণের প্রথম কথাটি হলো, জনগণের সহজ সরল আনুগত্য। গার্নার যেমন রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ‘হেবিচুয়াল ওবিডিয়েন্স’ বা রাষ্ট্রের প্রতি সতত আনুগত্যের কথা বলেছেন; তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ওয়েন গ্রান্ড জনসাধারণ কর্তৃক সরকার নিঃসৃত আদেশ, আইন ও নির্বাচনের মতো ব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থা, আনুগত্য ও বিশ্বাসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বৈধতার সংজ্ঞাটি মূলত সমাজতত্ত্ববিদ ম্যাক্স ওয়েবারের তত্ত্বকথা থেকে এসেছে। ওয়েবার ক্ষমতা এবং ক্ষমতা প্রয়োগের ভিত্তি হিসেবে বৈধতার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বৈধতা হলো সেই ব্যবস্থা যা নাগরিকদের ওপর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নৈতিক সীমা নির্ধারণ করে। তিনি যুক্তি দেখান ক্ষমতার উৎস যাই হোক না কেন- রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র- কোনো না কোনোভাবে তাকে বৈধতার ভিত্তি নির্মাণ করতে হবে। ‘থিউরি অব ডিভাইন ওরিজিন’ বা বিধাতার সৃষ্ট মতবাদ দ্বারা রাজতন্ত্রকে জায়েজ করা হয়। সম্পদের দ্বারা অভিজাততন্ত্রের ন্যায্যতা দাবি করা হয়। আর গণতন্ত্র দ্বারা প্রজাতন্ত্রের বৈধতার মীমাংসা করা হয়। ম্যাক্স ওয়েবার অবশ্য বৈধতার ভিত্তি আরো বিস্তৃত করেছেন। ঐতিহ্য, সম্মোহনী নেতৃত্ব এবং আইনি ব্যবস্থার দ্বারা সৃষ্ট কাঠামোকে তিনি বৈধতার মালিক মোক্তার বলেছেন। এই বৈধতার শর্তে যে বা যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন তারা- নাগরিক সাধারণকে আদেশ, নিষেধ ও নির্দেশ দেয়ার অধিকার অর্জন করবেন। তবে শর্ত হলো এই যে, ওইসব আদেশ-নিষেধ তথা আইনকানুন অতি অবশ্যই নৈর্ব্যক্তিক হতে হবে। ব্যক্তি, নেতৃত্ব, দল বা গোষ্ঠী বৈধতার ধারক ও বাহক হবে না। রাষ্ট্র এবং একান্তভাবেই রাষ্ট্র ন্যায্যতা বা বৈধতার সর্বময় মালিক।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রের অনিবার্য উপাদান হিসেবে যে সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয় তার নিয়ামক সরকার নয়, জনগণ। সেই নিয়ামক কিভাবে নির্ধারিত হবে- সেটাই প্রশ্ন। শত শত বছরব্যাপী রাজনৈতিক উন্নয়নের পর আজ এটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এই যে সময়ান্তরে একটি জনসমাজের সম্মিলিত রায় নির্ধারণ করবে- কে বা কারা হবে রাষ্ট্রক্ষমতার বৈধ কর্তৃত্বের অধিকারী। সাদামাটা ভাষায় নির্বাচন হচ্ছে জনগণের সম্মতির নিদর্শক। শক্তি নয় সম্মতিই জনগণের আস্থা বিশ্বাস ও আনুগত্যের ভিত্তি।

এই যদি হয় বৈধ অবৈধতার ব্যাকরণ তাহলে এই নিরিখে আমরা বিবেচনা করতে পারি গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে। আমরা বলতে বাধ্য যে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনটি ছিল শক্তি প্রয়োগের নিকৃষ্ট নমুনা। শাসক দলের মূল নির্ধারক ‘ডামি’ শব্দটি ব্যবহার করে নিজেই বৈধতার সঙ্কটের সূচনা করেছেন। এর আগে নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে প্রধান এবং গরিষ্ঠ প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করে তিনি একতরফা খেলার ব্যবস্থা করলেন। অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল যে প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়ে বোগাস নির্বাচনে নিজ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রমাণ করতে হয়। এর পরে নির্বাচন নিয়ে প্রথাগত প্রশ্ন ১. ভোটার উপস্থিতি, ২. সহিংসতা, ৩. ভোটকেন্দ্র দখল, ৪. জাল ভোট, ৫. কালো টাকার ছড়াছড়ি ইত্যাকার অভিযোগ তাদের মনোনীত প্রার্থীরাই করেছেন। যেখানে সব বিরোধী দল, গরিষ্ঠ নাগরিক সাধারণ নির্বাচনের বাইরে থেকেছে সেখানে নির্বাচন নিয়ে ওইসব ঠুনকো বিষয় বিবেচনার অপেক্ষাই রাখে না। মূলত এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি।

বশংবদ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটের কোনো সমাধান না শুধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য একটি ফরমায়েশি নির্বাচন করিয়েছেন। ২০১৪, ২০১৮ এর পর লোকজন আলাপ আলোচনা করছিল ২০২৪ সালের নির্বাচন কোন ফর্মুলায় অনুষ্ঠিত হবে? আওয়ামী কুশলতার প্রশংসা করতে হয়। ভোটারবিহীন নির্বাচন, নিশীথ রাতের নির্বাচন অবশেষে তারা ডামি নির্বাচনের নিদর্শন উপস্থাপন করল। বছরখানেক আগে থেকেই সে প্রস্তুতি চলছিল। যখন নির্বাচন কমিশন গঠনে বশংবদদের পছন্দ করা হয় তখনই অনুমান করা গিয়েছিল যে, ডাল মে কুচ কালা হায়। আওয়ামী কুশলতার বড় একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। আপনাদের মনে করিয়ে দেই কমিশন করার জন্য তারা একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের ফলে মনে হলো যেন আসল লোক আসবে। কিন্তু তাদের কারসাজিতে নকল লোক নির্বাচিত হলো। আইনকে কিভাবে বেআইনি প্রয়োগ করা যায় তখন থেকেই তা বোঝা গেল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এদিক সেদিক কথাবার্তা বললেও অবশেষে বন্দুকের নলের কাছে পরাজিত হয়েছেন অথবা আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জনরব রয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সুরাহা করার জন্য দেশে এবং বিদেশে চাপ থাকলেও সরকার তা পাত্তা না দিয়ে একক নির্বাচনের পথ খোলাসা করে। একক নির্বাচন করেও রক্ষা নেই। এই কলামে বলা হয়েছিল ডামি ব্যবস্থাটি খোদ আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হতে পারে। ৬২ জন বিদ্রোহী বা ডামি প্রার্থীর বিজয় কী প্রমাণ করে? নৌকার বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগাররা যেখানে ডামি প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী, সেখানে আসল প্রার্থী অর্থাৎ বিরোধীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাদের কী পরিণতি হতো তা সহজেই অনুমেয়। এখন আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ যে যুদ্ধ চলছে তা সারা দেশে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এই বিভাজন তাদের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

ক্ষমতা এবং শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্যই যে আওয়ামী লীগের আস্ফালন, তা প্রমাণ করে তাদেরই কার্যাবলিতে। একসময় ১৪ দল করে, সিকি দু’আনি মিলে ষোলো আনা হয়েছিল। এবার ১৪ দলকে দেয়া হয়েছে ছয়টি আসন। তাহলে ভাগের ভাগ একটি দল আধা আসনও পায়নি। হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জনগণের ভোটে নয় কারচুপির ভোটে তাকে পরাজিত করা হয়েছে। অনিয়ম ও অন্যায়ের অভিযোগ এসেছে ক্ষমতাসীন দলের তথাকথিত মিত্র জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে। জি এম কাদের বুদ্ধি করে রওশন এরশাদকে পরাজিত করতে পারলেও এখন তিনিই পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। ২৬ আসন বরাদ্দ নিয়ে কার্যত ১১ আসন পেয়েছেন। দ্বৈধতা ও সুবিধার নীতি জাতীয় পার্টিকে অস্তিত্ব বিলোপের সম্মুখীন করেছে। সব কৃতিত্ব ‘তার’। তিনি সরকারি দল এবং একই সাথে বিরোধী জাতীয় পার্টিরও নাকি কর্ণধার হিসেবে কাজ করেছেন। নির্বাচনের আগে অনৈতিকভাবে অর্থ ও ভীতির বিনিময়ে যে কিংস পার্টি বা রাজকীয় দল তৈরি করেছেন, তারাও নির্বাচন-পরবর্তী কালের বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন। খোদ নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়ে নির্বাচনে কারসাজির অভিযোগ করেছেন। কেউ বা বলেছেন, সরকারি সিদ্ধান্তে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। আওয়ামী ঘরানার লোকেরাই ডামি প্রধানমন্ত্রী ও ডামি পার্লামেন্টের কথা বলছেন। এসব কথার দ্বারা প্রমাণিত হয়, নির্বাচনটি বৈধতার দাবি করতে পারে না।

বৈধতার যে সংজ্ঞা আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ব্যাকরণে দেখেছি, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কথা বলা হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, প্রধান প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় অন্তত ৭০ ভাগ মানুষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থেকেছে। যে কৃত্রিম নির্বাচন হয়েছে সেখানে এবার ৪১.৮ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে, তার মানে ৬০ শতাংশ মানুষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভোট দিতে আসেনি। আসলে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। সুতরাং গরিষ্ঠ মানুষের বৈধ অংশগ্রহণের বিষয়টি ধরে নিলে নির্বাচনটি ছিল অবৈধ।

তথাকথিত এই নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি একক দলেরই বাহারি নামের বহিঃপ্রকাশ। ভোটে বিভিন্ন দল অংশ নিলেও ২৮টি দলের মধ্যে ২৩টি দলের কোনো প্রার্থী জয়লাভ করেনি। অবশেষে হিসাব নিকাশ করে দেখা গেছে যে, ৩০০ আসনের ২৯৮টিই তাদের। জানাই ছিল যে ডামি এমপিরা সরকারি দলে যোগদান করবে। গৃহপালিত বিরোধী দল বলে খ্যাত জাতীয় পার্টি নামকা ওয়াস্তে বিরোধী দল হতে পারবে কিনা সন্দেহ। হাস্যকরভাবে অন্যরা তাকিয়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে বিরোধী নেতা হওয়ার জন্য। ‘সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক প্রভাব আমরা অস্বীকার করতে পারি না। নির্বাচনটি যেমন অভ্যন্তরীণভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তেমনি গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই একতরফা ও সাজানো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে জাতিফঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অন্যান্য রাষ্ট্র। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের পক্ষ থেকে তার মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সেটো নিনো বলেছেন, জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশে কী ঘটছে তা অব্যাহতভাবে অনুসরণ করছে। বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ আমলে নিয়েছে। মুখপাত্র আরো বলেন, বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে যে, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে সম্মান করা হচ্ছে। গণতন্ত্র সুসংহত এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এটি অপরিহার্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নির্বাচনের সব দল অংশ না নেয়ায় তারা হতাশ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, গণতন্ত্রের প্রতি তাদের উচ্চ আকাক্সক্ষা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। বিরোধী হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত যে, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ প্রশ্নে তাদের গৃহীত ও অনুসৃত নীতি কৌশলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে কারণে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছে সরকার।

দেশে এবং বিদেশে যখন বৈধতার সঙ্কট তখন নবগঠিত সরকারের তরফ থেকে প্রদত্ত বক্তব্যে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের কোনো ইঙ্গিত নেই বরং বিরোধী দলকে সমূলে নির্মূল করার আরো হুমকি আসছে শীর্ষ পর্যায় থেকে। নির্বাচনের মাধ্যমে সৃষ্ট বৈধতার সঙ্কট নিরসনে সরকারের তরফ থেকে নমনীয় ও মানবিক আচরণের পরিবর্তে বিরোধী শক্তিকে নির্মূলের হুমকি দিচ্ছে সরকার। এটি আরো ভীতি, অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরি করবে। রাজনৈতিকভাবে সঙ্কটের মোকাবেলা কেবল সংলাপের মাধ্যমেই সম্ভব। সরকারকে অবশ্যই একটি উপায় বের করতে হবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সামনে হয়তো আরো দুর্দিন আসতে পারে। সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ আসবে আমরা জানি। বিদেশ থেকে চাপ আসবে অর্থনীতিকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রও আছে। সরকারের শীর্ষ নেতাদের এই যখন স্বীকারোক্তি তখন সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে বৈধতার সঙ্কট উত্তরণে ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন’ বা জাতীয় সমঝোতার অনিবার্য পথ কেন তারা অনুসরণ করবেন না?

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com