বেনজীরের ক্লাব নেশা বোট ক্লাবে ক্ষমতার থাবা

mzamin

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে নিয়ে দেশ জুড়ে নানা আলোচনার মধ্যেই সামনে এসেছে তার ক্লাব নেশা। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, বনানী ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের মতো অভিজাত সব ক্লাবেরই সদস্য তিনি। এসব ক্লাবের সদস্য হতে গিয়ে তাকে গুনতে হয়েছে অন্তত তিন কোটি টাকা। অবসরে যাওয়ার কিছুদিন আগে মাস খানেকের ব্যবধানে তিনি চারটি অভিজাত ক্লাবের সদস্য হন। শুধুমাত্র গুলশান ক্লাবের সদস্য হতে তার খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকার মতো। আর বাকি তিন ক্লাবের জন্য ৫০ লাখ করে আরও দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যদিও এই টাকা তিনি তার নিজের পকেট থেকে দিয়েছেন নাকি অন্য কেউ পরিশোধ করেছে সেই তথ্য জানা যায়নি। তবে তার ক্লাব নেশা শুরু হয় আরও আগে থেকে। ২০১৫ সালে ঢাকা বোট ক্লাব কর্তৃপক্ষ আচমকা তাকে সদস্য করে ইসি কমিটিতে স্থান দেয়। এরপর ক্লাবের উন্নয়ন, সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

তার অনুরোধেই ৫ বছর করে টানা দুইবার তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সদস্যরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেন তাতে গুড়েবালির মতো অবস্থা হয়েছে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বোট ক্লাবের দখল নেন। কুক্ষিগত করে রাখেন ক্লাব সদস্যদের। নিজের মতো করে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে অনেক কাজ করেছেন যেগুলো ইসি কমিটির অন্যান্য সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা মেনে নিতে পারছেন না। সদস্যদের ভালোলাগার ক্লাবটি এখন বেনজীরের জিম্মি হয়ে আছে। ক্লাবের ফান্ডে থাকা ২৬০ কোটি টাকার বিষয়েও খোঁজ বা পাত্তা পাচ্ছেন না ক্লাব সদস্যরা।

 

সাম্প্রতিক সময়ে বেনজীর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের খবর চাউর হওয়ার পরেই সোচ্চার হয়েছেন সাভারের আশুলিয়ার বিরুলিয়ায় তুরাগ নদের তীরে নির্মিত ঢাকা বোট ক্লাবের কয়েক হাজার সদস্য। ২০১৪ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরপরই ক্লাব সদস্যরা বেনজীর আহমেদকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চপদস্থ অন্তত ২০০ জন কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান অনেক ভিসিসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক, সাবেক-বর্তমান ২০ জনের মতো মন্ত্রী, এমপি, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক ডজনখানেক সচিব, শতাধিক শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সিনিয়র সাংবাদিক, সম্পাদক, নানা শ্রেণি-পেশার সদস্যদের এই ক্লাব। তারা সভাপতি হিসেবে বেনজীরকে দেখতে চান না। সভাপতি হিসেবে আধিপত্য বিস্তার, ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বেপরোয়া কর্মকাণ্ডসহ নানা কারণে ক্লাব সদস্যরা বেনজীরের ওপর ক্ষুব্ধ। সাধারণ সদস্যরা বলছেন, বর্তমানে সামাজিক এই ক্লাবটিতে বিব্রতকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বেনজীরের অপকর্ম জানাজানির পর তার সিন্ডিকেটের সদস্য ছাড়া আর কোনো সদস্যই চাচ্ছেন না তিনি সভাপতি হিসেবে থাকেন। সবাই চান তিনি নিজে থেকে সরে যান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীরের বেপরোয়া আচরণ, ইসি সদস্যদের তোয়াক্কা না করার কারণে কেউ ক্লাবের বিভিন্ন সভায় উপস্থিত হতে চান না। মাঝেমধ্যে যারা উপস্থিত হন তাদের জন্য সেটি সুখকর হতো না। কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজের মনমতো সিদ্ধান্ত নেন বেনজীর। তার এসব সিদ্ধান্তে সাপোর্ট করতেন গোটাকয়েক ইসি সদস্য। তারমধ্যে বোট ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলাম সাহেদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) বিভাগ থেকে চাকরিচ্যুত উপ-পরিচালক ও বোট ক্লাবের এডমিনিস্ট্রেশন মেম্বার বখতিয়ার আহমেদ খান ও নৌবাহিনী কর্মকর্তা র‌্যাবে চাকরিকালীন চাকরিচ্যুত ও বোট ক্লাবের সেক্রেটারি লে. কমান্ডার তাহসিন আমিনকে নিয়ে তিনি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। তাদেরকে হাতে রেখেই ক্লাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নেন। মূলত তারা চারজন মিলেই ক্লাব চালান। গুরুত্বপূর্ণ সকল সিদ্ধান্ত নেন তারা। এক্ষেত্রে অন্যান্য ইসি সদস্যদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না।

ক্লাব সদস্যরা জানান, ঢাকা বোট ক্লাবে কোনো প্রোগ্রামের আয়োজন হলে বেনজীর একাই ১৫০ থেকে ২০০টি টিকিট নিজের নামে ইস্যু করতেন। এক্ষেত্রে অন্যান্য সদস্য ও ইসি কমিটির সদস্যরা কোনো অতিথিকে দাওয়াত দিতে পারতেন না। টিকিটবিহীন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হতো না। এ নিয়ে সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ। বেনজীর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্লাবের দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। ২৬০ কোটি টাকা ক্লাবের ফান্ডে ছিল। সেই টাকা এখন কী অবস্থায় আছে সেটি ইসি সদস্য থেকে সাধারণ সদস্য কেউই জানেন না। আধিপত্য বিস্তার, নিজের সিন্ডিকেট শক্তিশালী করার জন্য কতো পছন্দের মানুষকে বেনজীর বিনা টাকায় এবং কাউকে কম টাকায় সদস্য করেছেন তার হিসাব  নেই। ক্লাবের গঠনতন্ত্র বেনজীর, বখতিয়ার, সাহেদ ও তাহসিন ছাড়া আর কারও কাছে ছিল না। ইসি’র প্রত্যেক সদস্য ও সকল সাধারণ সদস্যদেরকে গঠনতন্ত্র দেয়ার কথা থাকলেও কাউকে দেয়া হতো না। নিজের প্রয়োজনে তিনি যখন খুশি গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধন করে নিতেন। প্রতি বছর অডিটের মাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট প্রত্যেক সদস্যদের কাছে পাঠানোর কথা থাকলেও কোনো অডিট হতো না। নিজেরাই ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেন। বাৎসরিক সাধারণ সভা করার কথা থাকলেও সেটিও হয় না। বিশেষ প্রয়োজনে এক্সটা সাধারণ সভা করার নিয়ম থাকলেও সেটি করেন না। এসব নিয়ে কেউ ভয়ে কথা বলেন না। যারাই কিছু বলার চেষ্টা করেন তাদেরকে অপমান অপদস্থ করেন। বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন। বিভিন্ন সময় ক্লাবে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার কোনো প্রতিকার করেননি বেনজীর। এ নিয়ে কোনো জবাবদিহিতাও করেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাকরিরত অবস্থায় বেনজীর যখন বোট ক্লাবে যেতেন সব সময় পুলিশি ক্ষমতা ব্যবহার করতেন। তার সঙ্গে আশপাশের সকল থানার ওসি, জোনের ডিসি, এডিসি, এসিসহ পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত হতেন। তখন তার আশেপাশে ভিড়তে পারতো না কেউ। ইসি’র কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, একবার কনস্ট্রাকশনের কিছু কাজ চলছিল। তখন সড়কের পাশে কিছুটা এলোমেলোভাবে নির্মাণ সামগ্রী রাখা ছিল। ক্লাবের সামনের রাস্তা রূপনগর থানা হওয়াতে ওই থানার এক এএসআই এসে জিজ্ঞেস করেছিলেন নির্মাণ সামগ্রী কেন রাস্তায় রাখা হয়েছে। সেই খবর চলে যায় বেনজীরের কানে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রূপনগর থানার ওই এএসআই, একজন কনস্টেবল ও একজন সরকারি গাড়ি চালককে বহিষ্কার করেন। র‌্যাবের ডিজি ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হওয়াতে তিনি সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ক্লাব সদস্যরা অনেক অনুরোধ করেছিলেন যাতে তাদেরকে চাকরিচ্যুত না করা হয়। কিন্তু তিনি শুনেননি। বলেছিলেন একবার এটা করলে আর কেউ সাহস পাবে না।

সূত্রগুলো জানায়, গত রোজার ঈদে ক্লাবের পক্ষ থেকে সেহরি নাইটের আয়োজন করা হয়। গভীর রাতে ক্লাবের সদস্যরা পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। এরমধ্যে বেনজীর আহমেদও তার পরিবার নিয়ে হাজির হন। কিন্তু তার হাজির হওয়াটা ছিল একটু ব্যতিক্রম। অন্য সদস্যেদের মতো তিনি আসেননি। তার উপস্থিতিতে ক্লাবে ভিন্ন এক পরিবেশ তৈরি হয়। সদস্যদের পরিবার, সন্তানরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে যান। অবসরকালীন সময়েও তিনি ৬ জন অস্ত্রধারী বডিগার্ডের প্রটোকলে সেখানে প্রবেশ করেন। তার প্রবেশের রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। এ নিয়ে ইসির অন্য সদস্যদের কাছে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু বেনজীরের ভয়ে এর কোনো বিচার হয়নি। আনন্দের সেহরি নাইট বিষাদে পরিণত হয়েছিল সদস্যদের। সদস্যরা বলেন, ক্লাবে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ সকল সদস্য, ব্যক্তি ও অতিথিদের জন্য নিষিদ্ধ। অথচ বেনজীর ক্ষমতার প্রভাবে এসব করেন। তিনি সভাপতি হিসেবে এসব নিয়মনীতির বাস্তবায়ন করার কথা, কিন্তু তিনি তার উল্টোটা করেন।

ইসি কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, ২০২০ সালে ইসি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। তখন ইসির সংবিধান ও আইন সদস্য সোয়েব আহমেদের এক প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। তার প্রস্তাবনাটা ছিল যদি এনবিআরের উচ্চপদস্থ কাউকে ফ্রি সদস্যপদ দেয়া হয় তবে ভ্যাট-ট্যাক্সের বিষয়ে ক্লাব লাভবান হওয়ার সুযোগ ছিল। ফ্রি সদস্যপদ দেয়া ও এ বিষয়ে আরও কিছু কথাবার্তার একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে যান বেনজীর। তখন রাগান্বিত হয়ে টেবিল থাপড়িয়ে বেনজীর বলেন, আমি লাইসেন্সধারী মাস্তান, ইয়াবা দিয়ে তুলে আনবো। তার এমন আচরণ দেখে স্তম্ভ্ভিত হয়ে যান উপস্থিত সবাই।

বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা বলেছেন, প্রতিষ্ঠার পরেই প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান রুবেল আজিজ। তিনি ১ বছরের মতো দায়িত্ব পালন করেন। তারপরেই ক্লাবের উন্নয়ন, সদস্যদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ইসি কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত মতে বেনজীরকে সদস্য করা হয়। পরে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। যদিও তার নামটি বিবেচনার পেছনে বেনজীর নিজেই সদস্য হওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আর প্রথম সভাপতি রুবেল আজিজকে ক্লাবের উপদেষ্টার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পরও বেনজীর আরও ৫ বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করেন। সদস্যরা সেটি মেনে নেননি। পরে উকিল নোটিশসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা তাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরান। এ বছরের জুনে তার ১০ বছর পূর্ণ হলেও তিনি ৩ মাস পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।

২০২১ সালের ৮ই জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর চালান চিত্র নায়িকা পরীমনি। ওই রাতের ঘটনা দেশ জুড়ে আলোচিত হয়। তখনই ক্লাবটির সভাপতি আইজিপি বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব পালন করছেন বলে শোনা যায়। একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে কীভাবে এরকম একটি ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছেন বেনজীর এই আলোচনা সংসদ পর্যন্ত গড়ায়। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন টকশোতেও এনিয়ে বহু সমালোচনা হয়। কিন্তু পিছু হটেননি বেনজীর। এনিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলেও সদুত্তর মিলেনি।

ঢাকা বোট ক্লাবের ফাউন্ডার ও ইসি কমিটির সদস্য নাসির ইউ মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পেছনে আমার অনেক অবদান আছে। প্রথম সাতজনের একজন আমি। শুধু ইসি কমিটিতে আছি তা নয়, আমি ডেভেলপমেন্ট কমিটির তিনজনের একজন। যত উন্নয়ন হয়েছে তাতে আমার উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ আছে। অথচ বেনজীর আহমেদ আমার সঙ্গে যা করেছেন সেটি অন্যায় করেছেন। বিশেষ করে পরীমনি ইস্যুতে আমাকে তিনি ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে কোরবানি দিয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে তিনি আমার সঙ্গে যা করেছেন সেটি কখনই ভুলবো না। পুলিশি ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে। আমি যা করিনি, যা বলিনি সেগুলো আমার মাধ্যমে বলানো হয়েছে। সেগুলো রেকর্ড করা হয়েছে। বিনা অপরাধে আমাকে আইনি ঝামেলায় ফেলে হয়রানি করা হয়েছে। তিনটি বছর আমাকে ক্লাবে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমি ইসির বৈঠকে বসতে পারিনি। সিকিউরিটি দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আমার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে রাখা হয়েছিল। আমি যাতে সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বোট ক্লাবে টাকা খরচ করে কিছু কিনতে না পারি। সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে তিনি আমার সঙ্গে এগুলো করেছেন। পরে আমি ২টা উকিল নোটিশ দিয়েছি। ইসিতে ১টা চিঠি দিয়েছি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি সবকিছু স্বাভাবিক করে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমার কারণেই তিনি সেপ্টেম্বরে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তার পরিকল্পনা ছিল আরও ৫ বছর সভাপতির দায়িত্বে থাকার। সেই পাঁয়তারাও তিনি সুন্দরভাবে করেছিলেন। তবে তা পণ্ড হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বোট ক্লাবের ইসি সদস্য প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, এটা সামাজিক একটা ক্লাব। সমাজের নামিদামি বহু শ্রেণি-পেশার লোক এখানকার সদস্য । বেনজীর আহমেদকে নিয়ে উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সকল সদস্য বিব্রত। এখন তার উচিত নিজে থেকে সরে যাওয়া। ঢাবির ৩২ জন শিক্ষকও তার অপসারণ চান।

পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বোট ক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং উপদেষ্টা রুবেল আজিজ মানবজমিনকে বলেন, বোট ক্লাবটি সমষ্টিগত ওনারশিপ। এটি ব্যক্তিগত কারও কিছু না। ওনি যদি ক্লাবকে ভালোবাসেন তবে তার উচিত এখনই বিদায় নেয়া। কারণ এখন সিচুয়েশন আগের মতো না। আমার নিজের কারণেও যদি ক্লাবের ক্ষতি হয় তবে আমিও বিদায় নিতাম। বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে মানুষেরা আসে। সদস্যরাও তাদের স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসেন। তাই ক্লাবের সভাপতি সম্পর্কে যদি এমন বিষয় সামনে আসে তখন পরিস্থিতিটা অন্যরকম হয়ে যায়।

manabzamin