বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলল বিশ্বব্যাংক

আজকের পত্রিকা

অনলাইন ডেস্ক

ফাইল ছবিফাইল ছবিবাংলাদেশ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকলেও চলতি অর্থবছরে জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়বে বলে ছয় মাস আগের পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখেছে বিশ্বব্যাংক। তবে অর্থবছরের ৯ মাসের হিসাব দিয়ে সরকার বলছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ হবে।

গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস ছিল। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই পূর্বাভাস বহাল রেখেছে সংস্থাটি। আগের অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

শিল্প পরিস্থিতি
বিশ্বব্যাংক বলেছে, কয়েক মাস ধরে আমদানিতে কড়াকড়ির কারণে কাঁচামাল আমদানি কমার পাশাপাশি তীব্র জ্বালানিসংকটে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।

শুধু বাংলাদেশই নয়, আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য আনতে এবং বিনিময় হারের চাপ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও এমন ব্যবস্থা নিয়েছিল। তবে এখন আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হচ্ছে। তবু উৎপাদনে তার বড় প্রভাব রয়ে গেছে।

আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেশ কিছু খাদ্যপণ্য রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বব্যাংক বলছে, এখন বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম কমে এলেও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বছরের শেষ পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে।

বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের উন্নতি হলেও পরিবারের প্রকৃত উপার্জন এখনো মহামারির আগের পর্যায়ে যেতে পারেনি বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আর্থিক খাতে উচ্চ ঝুঁকি
উচ্চ মাত্রায় খেলাপি ঋণ, পুঁজির ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের দুর্বলতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের আর্থিক খাতে উচ্চ ঝুঁকি রয়ে গেছে। এসব দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে, পাশাপাশি করপোরেট খাতে সুশাসনের দুর্বলতা ও পুঁজির সংকটও আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

লাগামহীন সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, আর্থসামাজিক উত্তেজনা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে আর্থিক সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব সংকট শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, এই অঞ্চলের দেশগুলোতে আর্থিক নীতির কঠোরতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে সীমা আরোপিত থাকায় অর্থনীতিতে তার সুফল পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমবে
সর্বশেষ গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে তাদের পূর্বাভাস আগের তুলনায় বাড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২৪ সালে তা আরও কমে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।

দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কঠোর মূল্যস্ফীতিবিরোধী পদক্ষেপের সম্মিলিত প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

একই সঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের দারিদ্র্যবিরোধী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোকে নতুন ঋণসংকটের ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দারমিত গিল বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতি একটি অনিশ্চিত অবস্থানে রয়েছে। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণের চাপ বাড়ছে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা ইতিমধ্যে অনেক নিম্ন আয়ের দেশকে ঋণসংকটে ফেলেছে।