বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও আমাদের পরিস্থিতি

ফরিদা আখতার : বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৯ থেকে ১৫ অক্টোবর, ২০২৩, মারাকেশ, মরোক্কোতে। এই সভা বিশ্বব্যাংক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান–  যাদের একযোগে  বলা হয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ (ডব্লিউবিজি)– তাদের বিশ্বময় কার্যকলাপের আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়। বিশ্বব্যংক এই সম্মেলনে বাসযোগ্য পৃথিবীতে দারিদ্র খতম করার আকাঙ্ক্ষা ব্যাক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠা লগ্ন (১৯৪৬) থেকেই গরিবী দূর করা ও উন্নয়নের কথা বলে আসছে; এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি; কাজেই উন্নয়নের কথা বলার পাশাপাশি বাসযোগ্য পৃথিবীর কথা যুক্ত করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, বিশ্বব্যাংক এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকার করতে হচ্ছে যে পৃথিবী আর বাসযোগ্য নেই।

সম্মেলন স্থানটির নাম বাব ঈগ্লী (Bab Ighli); শহর থেকে একটু বাইরে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির ওপর এক বিশাল অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এই স্থাপনায় বেশির ভাগ সাদা রংয়ের কাঠ ব্যবহার হয়েছে। সম্মেলন স্থলের একটি স্টলের দায়িত্বে থাকা মরক্কোর এক তরুণী বললেন, এই কাঠের নাম বোয়িস রোউগ। স্থাপনাটি এমনভাবে বানানো যে, বাইরে তীব্র গরম থাকলেও ভেতরে তেমনটি বোঝা যায় না; প্রত্যেকটা মিটিং রুম এসি লাগানো ছিল এবং বেশ ঠাণ্ডা। এভাবে শত শত রুম তৈরি করা হয়েছে ।

বাইরে বসার জায়গা সবুজ ঘাসের গালিচা দিয়ে ঢাকা। বালির ওপর এ গালিচা বসানো হয়েছে, আবার তুলে নেওয়া যাবে। মাঝখানে একটি বিশাল আকারের গালিচায় সঙ্গীতের ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে সেখানে আরবি ভাষায় গান হচ্ছে। জানতে চেয়েছিলাম এই সম্মেলন শেষে এই স্থাপনার কী হবে? উত্তর এলো, এগুলো খুলে নিয়ে যাওয়া হবে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য।

বিশ্বব্যাংকের এই সম্মেলনে আমাদের মতো এক্টিভিস্ট সংগঠনের অংশগ্রহণ খুবই সাম্প্রতিক। আগে সিভিল সোসাইটির কথ কেউ বিশেষ কানে তুলতো না। আজকাল বৈশ্বিক সংকট যতোই তীব্র হতে শুরু করেছে এবং ভূ-রাজনীতির নানান টানাপোড়েনে বিশ্ব যখন মেরুকরণে বিভক্ত হতে চাইছে, তখন আমাদের অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে মূলতঃ বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ এর কর্তারা তাদের বাৎসরিক কাজের দিক নির্দেশনা ঠিক করেন। বিশ্বব্যাংক দাতা সংস্থা হিসেবে কাজ করলেও ঋণ যখন দেয়, তখন তাদের শর্ত মেনে চলতে বাধ্য করে। সেই সকল শর্তের ফলে দেশের জন্য মঙ্গল সেই রকম উন্নয়নের নীতি গ্রহণ করা গরিব ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাদের নির্দেশ মোতাবেক উদারনৈতিক নীতি মেনে চলার বাধ্যবাধকতার কারণে মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরণের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়ে।

নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক সংস্কারের আগে থেকেই সরকারের মালিকানাধীন কলকারখানা ও সম্পদ বেসরকারিকরণের নীতি গ্রহণ করা হয়। নয়া উদারনীতিবাদী অর্থনীতির সারকথা হচ্ছে, মানুষ বেঁচে থাকলো না মরলো সেটা রাষ্ট্রের দেখভালের বিষয় না; বাজারের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই সেটা নির্ণয় করবে। বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ সীমিত। প্রাইভেটাইজেশন মানে মানুষের জীবনের যা কিছু প্রয়োজন বা চাহিদা তা মেটাবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো দায় নাই, বাজারে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সকলে টিকে থাকতে হবে। সেবা পেতে হলে টাকার বিনিময়ে সেবা পেতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের শর্ত এবং নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতির কারণে বিভিন্ন দেশে ধনী-গরিব ব্যবধান বাড়ছে। দারিদ্র বিমোচনের জন্য নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া হলেও গরিবের হার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি । তাই বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা হচ্ছে প্রচুর। এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, এবং বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে বিশ্ব ব্যাংকের স্ট্রাকচাররাল অ্যাডজাস্টমেন্ট পলিসি বা কাঠামোগত সংস্কারের নীতি মারাত্মক ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশেও এই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু এর ফলাফল ভাল হয় নি। তাই প্রতিবাদ হচ্ছে।

কিন্তু ইদানিং বিশ্বব্যাংক নিজেও সম্ভবত বুঝতে পেরেছে তাদের কাজের পর্যালোচনা করতে হবে এবং যারা এর বিরোধিতা করছে তাদের কথা শুনতে হবে। বিশেষত তাদের কার্যক্রমের ফলাফল নিয়ে সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজ কী ভাবছে, সেটা শোনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে তারা। সে কারণে এই বিশাল স্থাপনার মাঝে সিভিল সোসাইটির জন্যে কিছু রুম রাখা হয়েছে, যেখানে সিভিল সোসাইটির কথা শোনার জন্যে বিশ্ব ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন (স্বশরীরে কিংবা ভার্চুয়াল) এবং প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কোনো সময় এই কথার আদান-প্রদান তর্কে রূপ নিয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু আলোচনা বা মতবিনিময় অবশ্যই হয়েছে। এই মতবিনিময়ের ফলে বিশ্ব ব্যাংকের নীতিতে আদৌ কোনো পরিবর্তন হবে কিনা সেটা বোঝা মুশকিল, কিন্তু নাগরিক সমাজ বা সিভিল সোসাইটির জন্য এই সুযোগ তৈরি হওয়াতে একটি দরজা খুললো বলা যেতে পারে।

আমি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম সেটা হচ্ছে– খাদ্য নিরাপত্তায় বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে। আমরা জানি, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগেই ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে আধুনিক কৃষি বা সবুজ বিপ্লবের প্রবর্তন করেছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শেই। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর আবারও বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা নিতে গিয়ে ‘সবুজ বিপ্লব’ নামে কৃষিতে ‘আধুনিক’ জাতের বীজ ব্যবহার এবং তার সাথে প্যাকেজ হিসেবে আসা রাসায়নিক সার (বিশেষ করে ইউরিয়া), কীটনাশক, মাটির তলার পানির ব্যবহার ইত্যাদি করতে হয়েছে। সঙ্গে ছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। মানুষের সংখ্যা কমানোর নীতি। বাংলাদেশ ৫০ বছর ধরে কৃষিতে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এখন অপূরণীয় প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ ঝুঁকি, মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি, স্থানীয় বীজের ব্যবহার কমে যাওয়া, মাটির তলার পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে শুষ্কতা তৈরি হওয়া ইত্যাদি নানান কঠিন সমস্যায় ভুগছে। তথাকথিত ‘আধুনিক’ কৃষি আর আধুনিক নেই, এখন তা ‘পশ্চাৎপদ’ এবং ‘ক্ষতিকর’ কৃষিতে পরিণত হয়েছে। সবুজ বিপ্লব কালো বা ধূসর হয়ে গেছে।

এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ব্যাংকের নতুন প্রস্তাবনা হচ্ছে ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচার’। জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষিতে অনেক পরিবর্তন আসছে, মৌসুমের ঠিক নাই, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, খরা, লবণাক্ততা– প্রকৃতির বিপুল ওলট-পালট ঘটছে, যা নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব ভিন্ন কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ মার্কা দৃষ্টিকোণ থেকে সবাইকে এখন ‘স্মার্ট’ হবার পরামর্শ দিচ্ছে। অর্থাৎ, কোম্পানির তৈরি প্যাটেন্ট করা প্রযুক্তি ব্যবহার, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা নিজের মতো করে নির্ধারণ করে জলবায়ুর দুর্যোগ মোকাবেলার পরামর্শ দিচ্ছে। ‘স্মার্ট’ অর্থ বুদ্ধিমান, তাহলে কৃষকের মতো বুদ্ধিমান আর কে আছে, যারা মৌসুম ধরে মাটিতে বীজ বপন করে খাদ্য উৎপাদন করে আসছেন হাজার বছর ধরে? আর প্রকৃতি তার চেয়েও বেশি স্মার্ট। তাই নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির প্রযুক্তি ব্যবহার করা স্মার্ট হওয়ার লক্ষণ না, স্মার্টের ভান ধরবার লক্ষণ। ‘আধুনিক’ থেকে ‘স্মার্ট’ এই নামের পরিবর্তনে কৃষি ও কৃষকের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর কোনো বদল ঘটে নাই। পু্রানা বোতলে নতুন পানীয় দিয়ে কাজ সারবার কথা চলছে, যাতে কৃষি কোম্পানির স্বার্থ স্মার্ট কায়দায় উসুল করে নেওয়া যায়।

সারাবিশ্বে এখন এগ্রোইকোলজি বা প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষির প্রয়োজনীয়তার কথা উঠেছে। কারণ জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কার্বন নির্গমন কৃষিখাত থেকেই বেশি হচ্ছে। কিন্তু এই কৃষি ক্ষুদ্র কৃষকদের কৃষি নয়, এই কৃষি হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর ইন্ডাস্ট্রিয়াল কৃষি। যেখানে শুধু মাংস উৎপাদনের জন্য ব্রাজিলে বন ধ্বংস করে দেওয়া হয়, বাণিজ্যিক চাষাবাদের সুবিধার জন্য একাট্টা ফসল উৎপাদন করে বৈচিত্র্য নষ্ট করা হচ্ছে। সার কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর চেয়ে  বাড়ানো হচ্ছে। নতুন নতুন ক্ষতিকর প্রযুক্তি জোর করে প্রবর্তন করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সম্মেলন কেন্দ্র বাব ঈগলীর বাইরে শহরের ভেতরে মেদিনায় আরো একটি আয়োজন ছিল, তার নাম ছিল কাউন্টার সামিট। এখানে অনেক দেশের এক্টিভিস্টরা এসেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের নীতি দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা তাদের কথা বলেছেন। একটি প্রতিবাদ মিছিলও তারা করেছেন। এই সম্মেলনেও আমি যোগ দিয়েছি। দেখা হয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত The World Bank: A Critical History এর লেখক Eric Toussaint এর সাথে। বইটি তার কাছ থেকে নিয়েছি।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর নয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্যে ব্রেটন উডস সম্মেলন থেকে যে দুটি মহা শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠান– বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ– গড়ে উঠেছে, তার পুরো ইতিহাস তিনি লিখেছেন। গত ৩০ বছর ধরে তিনি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। বইটি লেখা শুরু হয় ২০০৪ সালের মার্চ মাস থেকে। এই বইতে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে তা বিশ্ব ব্যাংকেরই দলিলপত্র, প্রায় ১৫০০০ (পনের হাজার ) পৃষ্ঠা তাকে পড়তে হয়েছে। এছাড়াও, তিনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের দলিলপত্র সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে জনগণের পক্ষে যাচ্ছে না, তা বোঝার জন্য বিশ্বব্যাংকের দেওয়া বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য দেখলেই বোঝা যায়। পুঁজি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে, যেখানে একটি ক্ষুদ্র পুঁজিপতি অংশ ফুলে ফেঁপে ধনী হচ্ছে, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গরিব হতে থাকছে। বিশ্বের ১০% মানুষ মোট সম্পদের ৫২.১% ভোগ করেন, আর ৫০% গরিবরা ভোগ করেন ৯.৭%। এই তথ্য নেওয়া হয়েছে ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ডেটাবেজ থেকে।

এই উন্নয়ন শুধু যে গরিবের প্রতি বৈষম্যমূলক তা নয়, এই উন্নয়নের নীতি ও ধরণ উভয়ই একান্তই পুরুষতান্ত্রিক। এরিক দেখিয়েছেন যে, পুঁজিতন্ত্রের অধীনে নারীকে শুধু শ্রমের পুনরুৎপাদনের কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে; সস্তা শ্রম, কিংবা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার মতো কাজগুলোই নারীদের জন্যে রাখা হয়েছে। নারীকে গার্মেন্ট শিল্প, চিংড়ি রপ্তানি শিল্পে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সস্তা এবং শ্রমঘন কাজে।

আফ্রিকার দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তারা বলছে নয়া উদারনৈতিক নীতির কারণে আফ্রিকা মহাদেশে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। অ্যাকশন এইড একটি ছোট প্রতিবেদন তৈরি করেছে ‘ফিফটি ইয়ারস অফ ফেইলর’ শিরোনামে। বিশ্বব্যাংক তাদেরকে কৃচ্ছতার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের ঋণগ্রস্ততা থেকে মুক্তির পথ না দেখিয়ে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তাদের মৌলিক সেবাগুলো আর দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরছে। মরক্কোতে বিশ্ব ব্যাংকের এই সভায় আফ্রিকার দেশের মানুষ বেশি সোচ্চার ছিলেন।

কাউন্টার সামিটের বিভিন্ন সেশনে খাদ্য সার্বভৌমত্বের ওপর আলোচনা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কৃষিতে রপ্তানি মুখী কৃষি ফসল উৎপাদনে বাধ্য করা  হয়। যেমন– মরক্কোর মরুদ্যানে (ওয়েসিস) তরমুজ চাষে বাধ্য করা হয়, যার জন্য প্রচুর পানি ব্যবহার করতে হয়। এক মরুদ্যানে পানি সংকট হলে তরমুজ চাষ অন্য মরুদ্যানে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। নারী কৃষকরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মরুদ্যানগুলোতে মানুষের জীবন খুব শান্তিপুর্ণ ছিল, কিন্তু বাধ্যতামূলক এবং চাপিয়ে দেওয়া কৃষি তাদের জীবনে সংকট বয়ে এনেছে। নারীরা যৌন হয়রাণীর শিকার হচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ উন্নয়নে সহযোগিতা দেবে এটাই তাদের কাজ; কিন্তু যেসব নীতি তারা চাপিয়ে দিচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এখন আর তা নিতে পারছে না। আমরা আশা করবো বিশ্বব্যাংক জনগণের কথা শুনবে এবং জনগণের পক্ষে কাজ করবে।


লেখক: প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী

TBS