বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক  bonikbarta.net

সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৩

কভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট সরবরাহ সংকটের কারণে ২০২০ সালের পর থেকেই হঠাৎ বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে খাদ্যপণ্যের বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে খাদ্যপণ্যের দাম। গত আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যের দাম দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ্যের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘ফুড প্রাইস ইনডেক্স’ প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।

সংস্থাটির্‌ আগস্ট মাসের খাদ্যমূল্য সূচকে দেখা যায়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্য সূচক ছিল ৯৮ দশমিক ১ পয়েন্ট। সেটা ২০২১ সালে বেড়ে হয় ১২৫ দশমিক ৭ পয়েন্ট। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে তা আরো বেড়ে ১৪৩ দশমিক ৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। যদিও চলতি বছরের আগস্ট মাসে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্য সূচক এসে দাঁড়ায় ১২১ দশমিক ৪ পয়েন্ট। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এছাড়া ২০২২ সালের আগস্টে ১৩৭.৬ পয়েন্ট, সেপ্টেম্বরে ১৩৬ পয়েন্ট, অক্টোবরে ১৩৫.৪ পয়েন্ট, নভেম্বরে ১৩৪.৭ পয়েন্ট এবং ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্য সূচক ছিল ১৩১.৮ পয়েন্ট। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ সূচক ছিল ১৩০.২ পয়েন্ট, ফেব্রুয়ারিতে ১২৯.৮ পয়েন্ট, মার্চে ১২৭ পয়েন্ট, এপ্রিলে ১২৭.৭ পয়েন্ট, মে মাসে ১২৪.১ পয়েন্ট, জুনে ১২২.৭ পয়েন্ট এবং জুলাই মাসে ১২৪ পয়েন্ট ছিল। অর্থাৎ গত এক বছরে খাদ্যমূল্য সূচক কমেছে ১৬ দশমিক ২ পয়েন্ট।

দুগ্ধজাত পণ্য, তেলবীজ, মাংস, দানাজাতীয় খাদ্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের খাবারের দামই কমেছে। যদিও চাল রফতানিতে ভারতের বিধিনিষেধের কারণে বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়েছে। আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার শস্যচুক্তি বাতিল হলেও গম বা ভুট্টার বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

পণ্যবাজারের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের (পিংকশিট) সেপ্টেম্বর সংস্করণের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৮৮৭ ডলার। কিন্তু গত আগস্টে তা ছিল ১ হাজার ১২৭ ডলার। ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রতি টন ভুট্টার দাম ছিল ৩৪২ ডলার। যদিও গত আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ২০৭ ডলারে। গত বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রতি টন গমের দাম ছিল ৪৯২ ডলার। কিন্তু গত মাসে তা নামে ৩১৫ ডলারে।

বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বরং প্রতিনিয়ত দেশে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারে সাথে সাথে বেড়ে যায়। কিন্তু বিশ্বাবাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে কমে না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর এক্ষেত্রে তদারকির অভাব রয়েছে। আবার যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় সেক্ষেত্রে ট্যারিফ কমিশন থেকে চিনি, সয়াবিন তেল ও গমসহ সাতটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এটা তারা এনালাইসিস করে নির্ধারণ করে। এই সিদ্ধান্ত ট্যারিফ কমিশন এবং আমদানিকারকরা মিলে নেন। কিন্তু আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম বাইরের প্রতিনিধি রাখার জন্য। এক্ষেত্রে ভোক্তা ও গণমাধ্যম থেকে প্রতিনিধি রাখা যেতে পারে। তাহলে বোঝা যেত কিসের ভিত্তিতে এ দাম নির্ধারণ করা হয়।