বিশ্বকাপে আর দেখা যাবে না সাকিবকে

মুখরতার মধ্যেও যে তখন নীরবতার সুর লেগে ছিল, কে জানত! শ্রীলঙ্কাকে মাত্রই মাঠে হারিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান– কথায় সংবেদনশীল অথচ প্রতিস্পর্ধীও। টাইমড আউটের ব্যাপারটি যে আইনসিদ্ধ, সেটাই বলে যাচ্ছিলেন সাকিব। তখন কে জানত, বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটা মাত্রই জিতে এলেন তিনি! কে জানত, ব্যাটিংয়ের সময় বাঁ-হাতের তর্জনীতে যে আঘাত লেগেছিল, সেখানেই এক্স-রে রিপোর্টে চিড় ধরা পড়বে এবং সে ইনজুরিই তাঁকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেবে! ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পোর্ট অব স্পেনে বিশ্বকাপের যে যাত্রা তিনি শুরু করেছিলেন, দিল্লিতে এসে সেই অভিযানের সমাপ্তি হবে। লঙ্কাকে হারানোর পর তিনিই বলেছিলেন, পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে নামতে পারব। পুনেতে সাকিবের সেই ম্যাচ আর খেলা হচ্ছে না। গতকালই ঢাকায় ফিরে এসেছেন তিনি। আপাতত তিন থেকে চার সপ্তাহের বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। যার অর্থ, এ মাসেই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজেও থাকছেন না অধিনায়ক। সাকিবের সঙ্গে এদিন লিটন কুমার দাসও দিল্লি থেকে ঢাকার ফ্লাইট ধরেছেন। পারিবারিক সমস্যার কারণে তাঁকে বিশ্বকাপের মাঝে এভাবে দু’দফায় দেশে ফিরতে হয়েছে।

বাংলাদেশ দলে সাকিবের শূন্যতা পূরণ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তো আর সম্ভব নয়। তার পরও দিল্লি থেকে যখন টিম ম্যানেজমেন্ট একজন ব্যাটারকে পাঠাতে বলেন, তখন ঢাকা থেকে নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু কেবল একজনকেই খুঁজে পান– এনামুল হক বিজয়। জাতীয় দলের ‘ফাস্টএইড’– যখনই দলে কাউকে নেওয়ার জরুরি তলব পড়ে, তখনই বিজয়কেই পাঠিয়ে দেন প্রধান নির্বাচক। যুক্তি অবশ্য তৈরিই থাকে– ঘরোয়া ক্রিকেটে হাজার হাজার রান এই বিজয়ের। আজই ঢাকা থেকে পুনেতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন বিজয়। আট বছর পর ফের বিশ্বকাপে ডাক পাচ্ছেন তিনি। ওপেনার তানজিদকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট এখন এতটাই বিরক্ত, তাঁর বদলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এনামুল হক বিজয়কে খেলাতে পারেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। অবশ্য এই পুনেতেই ভারতের বিপক্ষে একটা হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তানজিদ হাসান তামিমের। সেই যুক্তিতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (সাকিবের অনুপস্থিতিতে তিনিই অধিনায়কত্ব করবেন) যদি তানজিদকে একাদশে রাখতে চান, তাহলে হয়তো কেউ আপত্তি তুলতে পারবেন না।

নিজের ফর্ম নিয়েও নিজেরই সঙ্গে লড়েছিলেন তিনি এই বিশ্বকাপে। এ কারণেই ঢাকায় এসে নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে দু’দিন নেটসেশন করেছেন। সাকিব খুব করে চাইছিলেন এমন একটা ম্যাচ জিততে, যেখানে তিনি সামনে থেকে পারফর্ম করবেন। তাঁর সেই মনের ইচ্ছাটাই বুঝি পূরণ হয়েছে দিল্লিতে। চার বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে ১৩৩২ রান করা সাকিবের জন্য হয়তো শুরু আর শেষের ম্যাচটিই বইয়ের মলাটের মতো আগলে রাখবে। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ৯৪ বলে ৫৩ রান দিয়ে সাকিবের আগমন ঘটেছিল বিশ্বকাপে, ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮২ রানের ইনিংস এবং ‘টাইমড আউট’– এ সমাপনী হলো সেই যাত্রার। বছর ছত্রিশের সাকিব নিজেও নিশ্চয় চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ খেলার চিন্তা করেন না। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, একটি একটি করে ফরম্যাট থেকে তিনি অবসরে যাবেন।