বিপুল ব্যয়ে ভবন নির্মাণ করে ফেলে রাখার ‘উন্নয়ন মডেল’

মানিকগঞ্জে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) স্থাপনা নির্মাণের পর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয় ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর। এ বছর প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে একজন অধ্যক্ষ ও তিনজন প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি
মানিকগঞ্জে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) স্থাপনা নির্মাণের পর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয় ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর। এ বছর প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে একজন অধ্যক্ষ ও তিনজন প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবিছবি: আব্দুল মোমিন

যথাযথ পরিকল্পনা, সমীক্ষা ও সমন্বয় ছাড়াই অবকাঠামো নির্মাণ যেন বাংলাদেশের চলমান ‘উন্নয়ন মডেলের’ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন সুদৃশ্য ভবন বা অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে, কিন্তু যে উদ্দেশ্যে ভবন বা অবকাঠামোগুলো নির্মিত হচ্ছে, সেসব উদ্দেশ্য অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। জনগণের করের অর্থে এই ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণকাজে বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানা ধরনের ফায়দা হাসিল হলেও যথাযথ লোকবল, সরঞ্জাম ও জবাবদিহির অভাবে এগুলো জনগণের কাজে লাগছে না।

২৯ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে, গত ৬ বছরে দেশের ১৪ জেলায় ১৫টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) নির্মাণ করেছে সরকার। মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস এবং প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য বহুতল ভবন। এসব স্থাপনা নির্মাণে প্রতিটির পেছনে গড়ে ৩৫ কোটি টাকা হিসাবে ১৫টির জন্য মোট খরচ হয়েছে ৫২৫ কোটি টাকার মতো। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে জনগণের অর্থ ব্যয় করে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, সেই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট তৈরির কার্যক্রমই ঠিকঠাক মতো চলছে না এসব প্রতিষ্ঠানে। কারণ, প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকই নিয়োগ হয়নি, কেনা হয়নি প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও সরঞ্জাম।

একেকটি আইএইচটি পরিচালনায় প্রশিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে গড়ে ১৬৫ জন হিসাবে ১৫টি আইএইচটিতে মোট ২ হাজার ৪৭৫ জন জনবল লাগলেও নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে মাত্র ৫০ জনের। কোথাও কোথাও ধার করে দু-একজন প্রশিক্ষক এনে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ফলে যে অল্প কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের নিয়মিত ক্লাস হয় না, বহুতল ভবনগুলোর বেশির ভাগ কক্ষই থাকছে অব্যবহৃত।

স্বাস্থ্য খাতে রোগীর রক্ত, মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে করাসহ বিভিন্ন রোগ পরীক্ষার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করাই যদি এসব ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা না করেই কীভাবে এগুলো নির্মিত হলো! ফলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এসব ভবন নির্মাণের মুখ্য উদ্দেশ্য কি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, নাকি জনগণের করের অর্থ ব্যয় করে বিশেষ কিছু গোষ্ঠীর অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করা ও সেই সঙ্গে নতুন নতুন বহুতল ভবন দেখিয়ে উন্নয়নের মাহাত্ম্য প্রচার!

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মানুষের দ্রুত চিকিৎসার জন্য সারা দেশে বিভিন্ন মহাসড়কের পাশে ২১টি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর ১০টি ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ও ১১টি ২০১০ সালে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২৫ মার্চে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন (২১ ট্রমা সেন্টার: শুধু ভবন হয়েছে, নেই চিকিৎসা) অনুসারে, অন্তত ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ট্রমা সেন্টারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম বরাদ্দ না করায় এগুলো অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

২১টি ট্রমা সেন্টারের ১৬টির কোনো কার্যক্রম নেই, ২টির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি, ২টিতে শুধু বহির্বিভাগ চালু হয়েছে আর ১টি জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবহার না থাকায় ট্রমা সেন্টারগুলোর অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে, কোথাও কোথাও ভবনের মালামালও চুরি হয়েছে। এভাবে জনগণের করের অর্থ অপচয়ের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ট্রমা সেন্টার ধারণাটি নাকি বাস্তবসম্মত নয়, নির্মিত ভবনগুলো কীভাবে লাগানো যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জনগণের করের অর্থ ব্যয় করে ভবন নির্মাণ করে ফেলে রাখার ঘটনা শুধু এই হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট বা ট্রমা সেন্টারেই সীমাবদ্ধ নেই। গত ১০ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদন (হাসপাতাল আছে, চিকিৎসা নেই, কেন্দ্র আছে, প্রশিক্ষণ নেই) অনুসারে, স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত ২৩৩টি স্থাপনা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৫৮টি ভবন ও স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের ১৭৫টি ভবন রয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ এসব ভবন নির্মাণ করেছে। গত ৮ বছরে নির্মাণ করা ১৯৮টি ভবন তারা বুঝিয়ে দিলেও সেগুলো কবে চালু হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একদিকে শত শত কোটি টাকা খরচ করে ভবন নির্মাণ করে ফেলে রাখছে, অন্যদিকে দেশের সব সরকারি হাসাপাতালে আইসিইউর মতো জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। ২৮ এপ্রিল প্রথম আলোর আরেকটি খবর থেকে জানা যায়, দেশের ২২ জেলায় সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নেই। আবার যেসব জেলায় আছে, সেখানেও পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেই। বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবার খরচ অনেক বেশি হওয়ার কারণে মারাত্মক অসুস্থ ও জীবন বিপন্ন, এমন দরিদ্র নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই অর্থের অভাবে আইসিইউ সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না।

শুধু স্বাস্থ্য খাত নয়, স্থাপনা নির্মাণ করে অব্যবহৃত রাখা কিংবা যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে, তার চেয়ে ভিন্ন কাজে ব্যবহারের নজির রয়েছে অনেক খাতে। উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রমে গতি আনতে ২০১২ সালে দেশের ৪৭০টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ জন্য খরচ ধরা হয় ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এসব ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা দোকান করে ভাড়া দেওয়ার জন্য এবং তৃতীয় তলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস ও সম্মেলনকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৪০৬টি ভবন নির্মিত হলেও প্রথম আলোর ৫ জুন ২০২২ এর প্রতিবেদন অনুসারে, এগুলোর বেশির ভাগই অব্যবহৃত বা তালাবদ্ধ হিসেবে পাওয়া গেছে।

পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সমতলের মানুষের পারস্পরিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যের কথা বলে রাজধানীর বেইলি রোডে ১৯৪ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের দৃষ্টিনন্দন প্রশাসনিক ভবনটি উদ্বোধন করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর। কিন্তু ৩ অক্টোবর ২০২২ সালের প্রথম আলোর খবর প্রকাশিত হয় যে, ভবনটি খালি পড়ে আছে, দামি আসবাবে পড়েছে ধুলার আস্তরণ। ভবন নির্মাণ ও আসবাব কেনাকাটায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের যত আগ্রহ ছিল, নির্মাণের পর কীভাবে তা পরিচালিত হবে, সেদিকে মন্ত্রণালয়ের মনোযোগ না থাকার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

দোকান ও জায়গা ভাড়া দিয়ে বিপুল আয়ের কথা বলে ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয় করে রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোডে ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণ করে ঢাকা জেলা পরিষদ। নির্মাণ শেষ হওয়ার ছয় বছর পরেও ভবনটি খালি পড়ে থাকার সংবাদ প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে।

ক্ষমতাসীনেরা রাস্তাঘাট, ভবন ইত্যাদি অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে বেশি জোর দেন কারণ, একদিকে এগুলো দ্রুত ও সহজে দৃশ্যমান করা যায়, অন্যদিকে এগুলোর মাধ্যমে গোষ্ঠীগত সুবিধা বণ্টন করা সহজ। যেহেতু অর্থ লোপাট ও প্রদর্শনের উদ্দেশ্য থেকে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, তাই অনেক ক্ষেত্রেই যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলে এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো হয়, সেগুলো বাস্তবায়িত হয় না।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা, খেলাধুলা ও তাঁদের সাংস্কৃতিক বিকাশের উদ্দেশ্যে রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে ৬ একর জায়গার ওপর ৮৩ কোটি টকা খরচ করে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের একটি সুদৃশ্য ১৫ তলা ভবন ২০১৯ সালে উদ্বোধনের পর ২০২১ সালেও খালি পড়ে থাকে। ১৪ আগস্ট, ২০২১ সালে প্রকাশিত প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে সেটি বেরিয়ে আসে।

চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, সেই সমীক্ষা ছাড়াই ঢাকার মিরপুর, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের কারণে ১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩১টি বহুতল ভবনের মোট ২ হাজার ৩৪৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১ হাজার ৮০০টির বেশি খালি পড়ে থাকার খবর (১৬ নভেম্বর, ২০২২, প্রথম আলো) প্রকাশিত হয়েছে।

শুধু ভবনই নয়, দেশের বহু জায়গায় উন্নয়নের নামে কোনো ধরনের সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতু নির্মাণ করা হয়। একদিকে দেখা যায়, একটি সেতুর অভাবে বছরের পর বছর মানুষ যাতায়াতের কষ্ট করছেন, অন্যদিকে মানুষের যাতায়াত নেই বা সংযোগ সড়ক নেই, এমন স্থানে সেতু নির্মাণ করে বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মধ্যে অথবা লোকালয়হীন বিরান ভূমিতে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এসব সেতু নির্মাণে জনগণের করের অর্থের অপচয় হলেও লাভবান হয় রাজনীতিক, ঠিকাদার এবং ক্ষেত্রবিশেষে বাস্তবায়নকারী সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।

এসব অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণে সরকারের মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের যতটা আগ্রহ থাকে, এগুলো ব্যবহার করে মানুষকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ ততটাই কম। অবকাঠামো নির্মাণে আগ্রহের কারণ হলো, একদিকে কেনাকাটা ও ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার বিপরীতে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ, অন্যদিকে এসব অবকাঠামো নির্মাণকে উন্নয়ন বলে বাহবা কুড়ানোর তাগিদ।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা যখন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে বলে দাবি করেন, তখন তারা অবকাঠামো উন্নয়নের কথাই বেশি করে প্রচার করেন। কিন্তু উন্নয়ন বলতে তো শুধু অবকাঠামো নির্মাণই বোঝায় না, নিরাপদ খাদ্য ও পানি, সবার জন্য স্বল্প মূল্যে মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা, পর্যাপ্ত গণপরিবহন, যানজট ও দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক, দূষণমুক্ত পরিবেশ, জীবনের নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান, যথাযথ শ্রম অধিকার, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদির নিশ্চয়তা তৈরি করাই হলো টেকসই মানবিক উন্নয়নের কাজ।

কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা রাস্তাঘাট, ভবন ইত্যাদি অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে বেশি জোর দেন কারণ, একদিকে এগুলো দ্রুত ও সহজে দৃশ্যমান করা যায়, অন্যদিকে এগুলোর মাধ্যমে গোষ্ঠীগত সুবিধা বণ্টন করা সহজ। যেহেতু অর্থ লোপাট ও প্রদর্শনের উদ্দেশ্য থেকে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, তাই অনেক ক্ষেত্রেই যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলে এসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো হয়, সেগুলো বাস্তবায়িত হয় না, উল্টো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় এসব উন্নয়ন দুর্নীতি ও অপচয়মূলক হয় এবং অনেক সময় বিদেশি ঋণনির্ভর হওয়ার কারণে অর্থনীতির ওপর বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে।

এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে উন্নয়ন সম্পর্কে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা যে প্রচারণা চালান, অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে যে ধরনের মোহজাল বিস্তার ঘটায় তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে, উন্নয়নের নামে অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাটকারীদের জবাবদিহির জন্য সোচ্চার হতে হবে এবং শুধু দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, সার্বজনীন শিক্ষা ও চিকিৎসা, নিরাপদ খাদ্য ও পানি, গণমুখী পরিবহন ব্যবস্থা, আইনের শাসনসহ বিভিন্ন ধরনের গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে।

  • কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি’, ‘ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ’। ই-মেইল: [email protected]য়ে ভবন নির্মাণ করে ফেলে রাখার ‘উন্নয়ন মডেল’