ডক্টর জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড
জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি ‘একদলের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা’র দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করলেও, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ আরও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে শেখ হাসিনা শিগগিরই সমসাময়িক ইতিহাসের সবথেকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধান হয়ে উঠবেন। কিন্তু এমন রাজনৈতিক আধিপত্যের ঝুঁকিও রয়েছে। সারা বিশ্বেই এই এক দলের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রায়ই এমন সব রোগের বিকাশ ঘটায়, যা দেশের শাসনব্যবস্থার ক্ষতি করে। তবে রাজনীতি, সরকার এবং অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা এই সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে পারে।
বাংলাদেশের এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থা
যদিও এই এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তবে এটিকে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট দল বড় একটি সময়ের জন্য রাজনীতি, সংসদ, সরকার এবং নীতিনির্ধারণে আধিপত্য বিস্তার করে। ৭ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ জয়ের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। যদিও আওয়ামী লীগ এখন ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে কম সংসদীয় আসন দখল করে আছে, তবে এর রাজনৈতিক আধিপত্য আসলে অনেক বেশি।
গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে এবারেরটিসহ মোট দুটি নির্বাচন বয়কট করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্বাচনে বিএনপি সদস্যদের যোগদানে প্ররোচিত করতে এবং পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য ব্যানারের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কিছু আসনে তার সদস্যদের দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।
ফলস্বরূপ নির্বাচনে কিছু সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে, বিশেষ করে স্বতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে। কিন্তু প্রতিযোগিতাটি সত্যিকারের প্রতিযোগীদের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃপার্টি প্রাইমারি নির্বাচনের মতো ছিল। সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জিতেছে ২২৩টি আসন বা মোট আসনের ৭৪ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের জোটের অংশীদাররা জিতেছে আরও দুই আসনে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কল্যাণ পার্টি একটি জিতেছে। আর আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট স্বতন্ত্ররা জিতেছে ৬২ টি আসনে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনের আগে হুমকি দিয়েছিল যে, তাদের জন্য আসন বরাদ্দ না হলে তারা নির্বাচন বয়কট করবে। তবে পূর্ব-আলোচনাকৃত ২৬টি আসনের মধ্যে মাত্র ১১ টিতে জয়লাভ করে এখন সংসদে আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল তারা।
আওয়ামী লীগকে ঘিরে বাংলাদেশের দলীয় ব্যবস্থার একীকরণ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গড়ে উঠছে। ২০১১ সালে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অপসারণ করে। এ কারণে বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে। ওই সংসদে প্রকৃত বিরোধী দল ছিল না। ২০১৮ সালে বিএনপি জোট নির্বাচনে অনিয়মের মধ্যে শুধুমাত্র আটটি আসন জিতেছিল। বিএনপির নির্বাচিত সদস্যদের একটি ছোট দল চার বছর পর পদত্যাগ করে। আবারও বিরোধী দল ছাড়াই সংসদ চলে। বাংলাদেশের বিরোধী-হীন রাজনীতি তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং দেশের অভ্যন্তরে বৈধতার বড় ক্ষতি করেছে। এটি স্বীকার করে আওয়ামী লীগ ২০২৩ জুড়ে জোর দিয়েছিল যে আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে নির্বাচনী অনিয়ম ও বিচারিক হয়রানির কথা উল্লেখ করে বিএনপি আওয়ামী লীগের আশ্বাসে বিশ্বাস করেনি। বিরোধী দলের বয়কটের কারণে আওয়ামী লীগের ওই প্রতিশ্রুতি অপরীক্ষিত রয়ে গেছে। তবে এটি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক আধিপত্যকে আরও মজবুত করেছে। আওয়ামী লীগ অবশ্যই ক্ষমতা ধরে রাখতেই চেয়েছিল। তবে জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের একতরফা প্রক্রিয়া এবং এর ফলাফল (যেখানে অল্প কিছু মানুষ ভোট দিতে গিয়েছিলেন) ক্ষমতাসীন দলটিকে তার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যান্ডেট প্রদান করেনি।
এক দলের আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিপদ
বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতপক্ষে একদলীয় শাসন বলতে কী বোঝায়? যদিও অতীত এবং বর্তমান উদাহরণগুলো দেখায় যে, অনিয়ন্ত্রিত আধিপত্য একটি শাসক দলের দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতাকে তুলে ধরে। রাজনীতি, সরকার ও অর্থনীতিতে অর্থপূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং স্বাধীনতা এই ক্ষতিকর গতিশীলতাকে ভোঁতা করতে কাজ করে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতিতে, এই এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থা প্রায়শই নাগরিকদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়। আফ্রিকার দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এক-দলীয় ব্যবস্থার মধ্যেই একটি প্রতিষ্ঠিত এবং শক্তিশালী বিরোধী দল সুশাসনের প্রচার নিশ্চিত করতে পারে। কারণ এটি ক্ষমতাসীন দলকে ভোটারদের চাহিদা এবং উদ্বেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য করে। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পৌরসভা নির্বাচনের একটি সমীক্ষা দেখায় যে, ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) যে নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে, সেখানে তারা তুলনামূলক অযোগ্যদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। একইভাবে দক্ষিণ আমেরিকার রাজনীতির একটি ঐতিহাসিক অধ্যয়নে দেখা গেছে, একক-দলীয় আধিপত্যের তুলনায় বহুদলীয় প্রতিযোগিতার সময় নাগরিকদের মধ্যে বেশি অংশগ্রহণ দেখা গেছে।
যদিও বাস্তবে মিশ্র ধরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে যে ব্যবস্থায় এক দলের প্রভাব থাকে, তা প্রায়ই উচ্চ মাত্রার দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। প্রতিযোগিতামূলক ও বহুদলীয় গণতন্ত্র নাগরিকদের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে সহায়তা করে, অপরদিকে একক-দলীয় ব্যবস্থা ক্ষমতাসীনদের জনসাধারণের তিরস্কার থেকে রক্ষা করে। অন্যান্য কারণগুলিও গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকার ওপরে করা গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এক দলীয় ব্যবস্থায় যদি আইনের শাসন ও দায়িত্বশীল সিভিল প্রশাসনের মতো অন্য গণতান্ত্রিক নিয়ম বজায় থাকে, তাহলে তা আরও ভালো দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থা স্বৈরাচারের দিকে ধাবিত হতে পারে। যেমন ফ্রিডম হাউসের রেটিং অনুযায়ী, নিকারাগুয়া ও তুরস্ক এখন ‘আংশিকভাবে মুক্ত’ ও ‘মুক্ত নয়’ তালিকার দেশ। প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার স্যান্ডিনিস্তা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ১৭ বছর ধরে নিকারাগুয়ার ক্ষমতায়। এ সময় ব্যাপক দুর্নীতি, মিডিয়া হয়রানি, হত্যা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্যাতন হয়েছে। অপরদিকে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২০১২ সাল থেকে সংবিধান পরিবর্তন এবং বিরোধীদের বন্দী করার মাধ্যমে ক্ষমতায় রয়ে গেছেন। তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একটি বহুমুখী ক্লায়েন্টলিস্টিক শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে যার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়িক খাতের চুক্তি, রাষ্ট্রীয় চাকরিতে অ্যাক্সেস, লক্ষ্যণীয় বেসরকারীকরণ এবং ডিরেগুলেশনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের আনুগত্য লালন করা।
একটি নির্দিষ্ট দলের রাজনৈতিক আধিপত্য স্বাধীনতা ও প্রতিযোগিতাকে দমিয়ে রাখে। এতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্রস-ন্যাশনাল ডেটা ইঙ্গিত দেয় যে, সমৃদ্ধি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আইনি অধিকারের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। অনেক সফল উন্নয়নমূলক রাষ্ট্র, যারা প্রভাবশালী দলগুলির অধীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছে তারা আমলাতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার উপাদানগুলি সংরক্ষণের গুরুত্ব প্রদর্শন করে। মেক্সিকোর ইন্সটিউশনাল রেভোলুশনারি পার্টি (পিআরআই) এবং জাপানের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির অধীনে প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মধ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত এবং মেধাতান্ত্রিক আমলাতন্ত্র ছিল। একইভাবে, সিঙ্গাপুরের দীর্ঘদিনের শাসক এবং আধিপত্যশীল পিপলস অ্যাকশন পার্টি উচ্চ আয়ের অর্থনীতি অর্জনের সময় নাগরিক প্রতিক্রিয়াশীলতা, যোগ্যতা-ভিত্তিক সিভিল সার্ভিস এবং সংসদীয় ভিন্নমতের উপর জোর দিয়েছে।
বাংলাদেশ এবং প্রতিযোগিতার সুবিধা
বাংলাদেশে এক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থা চাপের মুখে রয়েছে। যদিও গত বছরের জনমতের তথ্যগুলি বিভিন্ন নীতিগত বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ অনুমোদনের ইঙ্গিত দেয়। তবে সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ যে, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের পরের দিন থেকে উধাও হয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিলেও সমস্যাটি এখনও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান মধ্যম কিন্তু ক্রমশ এটি নিচের দিকে নামছে। এটি নির্দেশ করে যে, নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার একটি ভিত্তি রয়ে গেছে, কিন্তু তা সুরক্ষিত নয়।
ক্লায়েন্টলিজমের বিভিন্ন রূপ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রগতি বর্তমানে গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে এবং স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে এর আসন্ন প্রবৃদ্ধি টেকসই করার জন্য বাস্তব কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনুরূপ ব্যবস্থার বৈশ্বিক উদাহরণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, এই সমস্যাগুলিকে রোধ করার জন্য, বাংলাদেশের প্রভাবশালী-দলীয় ব্যবস্থার মধ্যে আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরে এবং অর্থনীতিতে আরও বেশি প্রতিযোগিতার প্রয়োজন। যদিও শাসক দলের ওপর প্রাথমিকভাবে প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা এবং রক্ষা করার দায়িত্ব বর্তায়, তবে বিরোধী দলেরও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক নেতারাও ইতিবাচক রাজনৈতিক, নাগরিক এবং অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রচার করতে পারে।
ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে। আওয়ামী লীগ এবং সংসদে থাকা অন্যান্য দলগুলোর উচিত হবে জনসেবার ওপর জোর দেয়া এবং কম পারফরম্যান্সকারী এমপিদের বরখাস্ত করা। যদিও বাংলাদেশের দুর্নীতি ও ক্লায়েন্টালিজমের দীর্ঘস্থায়ী বাস্তবতা রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। তারপরেও সরকারের উচিত তার নিজস্ব পদমর্যাদার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো এবং আমলাতন্ত্রে যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির ওপর জোর দেয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ অব্যাহত রাখার জন্য সম্পত্তির অধিকার এবং বাজারে প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগকে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত, স্বচ্ছ ও ন্যায্য বিচার রাজনৈতিক বিচারব্যবস্থা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ কমাতে পারে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সঠিক পথে আনতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েরই প্রয়োজন ফলপ্রসূ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গড়ে তোলা। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকার প্রদর্শনের একটি সুযোগ। বিএনপি স্থানীয় নির্বাচন বয়কটের ইঙ্গিত দিয়েছে, তবে দলের কৌশল দৃশ্যত নমনীয় রয়েছে। আধিপত্যবাদী-দলীয় ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অংশগ্রহণ সরকারকে আরো ভাল নীতি প্রণয়নে উৎসাহিত করে এবং বহুদলীয় সংসদে ফিরে যাওয়ার এটিই একমাত্র পথ। যদিও আওয়ামী লীগ ১৯৯০-এর দশকে সংসদীয় ওয়াকআউট এবং বয়কটের নিয়ম শুরু করেছিল, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এখন একটি গঠনমূলক বিরোধী দল অপরিহার্য। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েরই উচিত আন্তঃদলীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। ঐতিহ্যগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের শ্রেণীবিন্যাস ভেঙ্গে নতুন নীতি এবং রাজনৈতিক কৌশলগুলিকে চালিত করে এমন দলগুলির মধ্যে আদর্শগত প্রতিযোগিতার জন্ম দিতে পারে। বৃহত্তর প্রতিযোগিতা রাজনীতিবিদদের মধ্যে নাগরিক-প্রতিক্রিয়াশীল প্রচারণাকে উৎসাহিত করতে পারে। অভ্যন্তরীণ দলীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা নারী, যুবক এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীকে একটি সামগ্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক দলীয় কৌশল গঠনের ক্ষমতা দেয়।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা এবং বিদেশী দাতারাও বাংলাদেশে উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সমর্থন করতে পারে। আন্তঃদলীয় সংলাপ সম্মতিমূলক রাজনীতিকে উৎসাহিত করতে পারে, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা নতুন নেতাদের দক্ষতা তৈরি করতে পারে এবং নাগরিক টাউনহলগুলি প্রতিক্রিয়াশীল শাসনকে উৎসাহিত করতে পারে।
নাগরিক এবং ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেশের যুবকদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে। সাংগঠনিক ক্ষমতা-নির্মাণ অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলিকে দল এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে সাহায্য করতে পারে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে-শ্রম অধিকার, দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। মার্কিন সরকার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতাদের বাংলাদেশে বহুমুখী প্রতিযোগিতার জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রিয়াকলাপই নির্ধারণ করবে যে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তার গণতান্ত্রিক চরিত্র ধরে রাখবে নাকি অন্যান্য এক-দলীয় ব্যবস্থায় যেমন দেখা যায় তেমনভাবে ব্যাধিগুলি সিস্টেমকে গ্রাস করবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি বিপজ্জনক মুহুর্তে দাঁড়িয়ে। কিন্তু নাগরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে স্বাধীনতা এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা দেশের রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
manabzanin