বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ দিন দিন বাড়ছে। ঋণের সুদ-আসল মেটাতে গিয়ে অর্থ সংকটে পড়ছে সরকার। পুরোনো দেনার বোঝা পরিশোধে বাধ্য হয়ে নতুন ঋণের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে। একদিকে অতিমাত্রায় ঋণ নেওয়া, অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার দর পতনে চাপের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না সরকার।
এমন বাস্তবতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের চেয়ে তা ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুসারে বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ সরকারের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বাবদ ৯ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ চার বছরের মধ্যে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে।
অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল বাবদ ২৬২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ৩০ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এ বাবদ ২৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে, যা টাকায় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৯৮১ কোটি। অর্থাৎ এক বছরে বিদেশি ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ বাড়ছে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় এটি প্রায় ১০০ কোটি ডলার বেশি। ওই অর্থবছর ১৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল ঋণ পরিশোধ করা হয়, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২১০ কোটি ডলার। সবমিলিয়ে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকারকে চলতি অর্থবছরে ৫১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ১৭৫ কোটি ডলার উল্লেখ রয়েছে। সুদ বাবদ এই ১৭৫ কোটি ডলার এবং আসল প্রায় ২৬৩ কোটি ডলার মিলে চলতি অর্থবছরে ৪৩৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১০২ কোটি ডলার বেশি।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ হিসাবে অস্পষ্টতা কাম্য নয়। এ থেকে কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না। বরং বিষয়গুলো সুস্পষ্ট থাকলে ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে একটা ধারণা করা সহজ হয়।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বিদেশি ঋণ পরিশোধের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঋণের আসলের চেয়ে সুদ বাবদ ব্যয় বাড়ছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪২ শতাংশ।
বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ প্রসঙ্গে আর্থিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়, যদিও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবুও বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থায়ন উৎস এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার ফলে এটি সহনীয় সীমার মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকার আসলে একটা দ্বান্দ্বিক সমস্যায় রয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে অর্থ সংকট দেখা দেবে। বিদেশি ঋণ নিলে পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পরিশোধের চাপ অসহনীয় না হয়।’
samakal