ঢাকা টেস্টের দল ঘোষণার পর থেকেই বিতর্কের শুরু। একপক্ষের দাবি– জাতীয় দল থেকে বাদ দিতে হবে সাকিব আল হাসানকে, অন্যপক্ষের চাওয়া– দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলার সুযোগ দিতে হবে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম সরগরম। প্রিয় খেলোয়াড়ের দেশে ফেরা ও খেলার দাবিতে মিছিল করতে গিয়ে সাকিবিয়ানদের গতকাল পিটুনিও খেতে হলো। সাকিববিরোধীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মৃদু লাঠিপেটা করে তাদের। স্টেডিয়ামের বাইরের এ ঘটনা তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলতে না দেওয়ায় হতাশা আছে ক্রিকেটারদের মাঝে।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা জানেন কেন সাকিবের মতো বৈশ্বিক তারকাকে দেশের মাটিতে বিদায়ী টেস্ট খেলার সুযোগ দেওয়া হলো না। এক সাকিব ইস্যুতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, বিতর্ক ও শঙ্কা মাথায় নিয়ে আজ মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার প্রথম টেস্ট। মিরপুরে সকাল ১০ টায় শুরু হবে খেলা।
নিরাপত্তার কারণে খেলার সুযোগ না পাওয়া সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ার হয়তো শেষই হয়ে গেল। অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ কবে স্বাভাবিক হবে আর তিনি কবে দেশের মাটিতে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ধরেই নেওয়া হচ্ছে, সাকিব-উত্তর প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই সিরিজ শুরুর আগে কোচ বদলের ঘটনাও ঘটেছে। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অজুহাতে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চুক্তি বাতিল করে নতুন কোচ নিয়োগ করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্সকে। হাথুরুসিংহে হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। সাবেক কোচ বাংলাদেশ ছাড়ার আগেই কাজে যোগ দেন নতুন কোচ। হাথুরুসিংহের জায়গায় ডাগআউটে থাকবেন ক্যারিবীয় সিমন্স আর সাকিবের জায়গায় বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ। অধিনায়ক শান্ত জানান, দু’জনকেই মিস করবে ঢাকা টেস্টে। তবে তারা চান বিতর্ক পেছনে ফেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলায় মনোযোগী হতে। শান্ত বলেন, ‘এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যেহেতু নিয়ন্ত্রণে নেই, এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করা মানে সময় নষ্ট। যত বেশি সম্ভব খেলায় মনোনিবেশ করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি টেস্টে। খেলোয়াড়রা খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এটাতেই মনোযোগ রাখার চেষ্টা করছে।’
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশে খেলার সব সুবিধা কাজে লাগিয়ে জিততে চান শান্ত। গত মাসে ভারতের মাটিতে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর দেশের উইকেটের সমালোচনা করেছিলেন তারা। তাসকিন আহমেদরা চেয়েছিলেন, দেশের মাটিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ম্যাচই স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে। গতকাল জানা গেল, সেসব ছিল কথার কথা। অধিনায়ক শান্ত জানান, দেশে খেলার সুবিধা কাজে লাগাতে প্রতিপক্ষ অনুযায়ী কন্ডিশন চেয়েছেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ট্রিপিক্যাল মিরপুরের উইকেটে হতে পারে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। শান্তর মতে, ‘আন্তর্জাতিকে আমরা ভালো উইকেট বানিয়ে খেলতে চাই। খারাপ উইকেটে নিজেদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করতে চাই না। আমাদের শক্তি অনুযায়ী উইকেট বানাতে চাই। বোর্ড জানে আমাদের কী কী সুবিধা আছে।’
অভিজ্ঞতা আমলে নেওয়া হলে এই সিরিজে বাংলাদেশ নিরঙ্কুশ ফেভারিট। দেশের মাটিতে স্পিন ট্র্যাকে খেলার সুযোগ পাচ্ছে অনভিজ্ঞ একটি দলের বিপক্ষে। টেম্বা বাভুমা ও কাগিসো রাবাদা ছাড়া বাকিদের বাংলাদেশে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ৯ বছর পর ঢাকায় টেস্ট খেলতে নেমে খুব একটা সুবিধা নাও করতে পারে প্রোটিয়া বাহিনী। যদিও টাইগার দলপতি এইডেন মার্করামদের ভালো দলের আসনে রেখে সম্মান দেখালেন, ‘অভিজ্ঞ দল না ঠিক আছে, তবে তারা ভালো দল। তবে আমরা সর্বশেষ ৪ টেস্টের দুটি জিতেছি, দুটি হেরেছি। ৫০ ভাগ জয়ের হার। ভারতে ভালো না খেললেও দল খুব ভালো অবস্থানে আছে। বিশেষ করে টেস্ট দল। দেশে আমরা সব সময় ভালো করি। আমাদের যে বোলিং আক্রমণ বা ব্যাটাররা আছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ভালো টেস্টই হবে। দুই দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ হবে। যারা সেশন বাই সেশন ভালো খেলবে তারাই জিতবে, তবে আমি অবশ্যই বাংলাদেশ দলকে একটু এগিয়ে রাখব।’ অনভিজ্ঞতা হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা পেশাদার দল। ভালো কন্ডিশন পেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে জানে। বাংলাদেশের বিপক্ষেও ভালো কিছু করার ইচ্ছা মার্করামদের, ‘আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। টেস্ট ইউনিট হিসেবে স্পিন আগের চেয়ে ভালো খেলি। নতুন কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা হবে। অনেক সেশনে উত্তাপ ছড়ানো ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগ। আমরা ইতিবচাক ফলের আশা নিয়ে খেলব।’ দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ বছর হলো উপমহাদেশে টেস্ট জেতে না। বাংলাদেশে খেলা শেষ টেস্ট সিরিজ ড্র হয়েছিল বৃষ্টির কারণে। ঢাকা টেস্টে তারা বাভুমাকে পাচ্ছে না কনুইর ইনজুরিতে। সেখানে বাংলাদেশ সেরা দল নিয়েই খেলবে– দু’জন নিয়মিত স্পিনার তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানের সঙ্গে স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ খেলবেন। হাসান মাহমুদের সঙ্গে নাহিদ রানা বা তাসকিন আহমেদের যে কেউ খেলতে পারেন। বাকি লাইনআপ মোটামুটি ঠিক করা। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলাম অনিকের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান জয়কে নেওয়া হতে পারে। তিনে মুমিনুল হক, চারে শান্ত। মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস ও মেহেদী মিরাজের জায়গা পাঁচ থেকে সাতে।
samakal