- ২৪ ডেস্ক
রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে অবস্থিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এর ম্যুরালসহ সাতটি দেয়াল ভেঙে ফেলেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই ভাঙার কাজ শনিবারের মধ্যেই শেষ হয়। এই প্রাঙ্গণে থাকা ম্যুরালগুলোতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের দিনে প্রাঙ্গণটিতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটিও ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
ছবি – সংগৃহীত
শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একটি এক্সকাভেটর দিয়ে দেয়ালগুলো ভাঙা হয়েছে এবং ধ্বংসাবশেষ এক পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রাঙ্গণের চারপাশ চট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কর্মরত শ্রমিকেরা জানান, ভাঙার কাজ প্রায় শেষ এবং শিগগিরই আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া হবে।
এদিকে, দেয়াল ভাঙার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থাপনা ভেঙে ফেলায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
‘গণমিনার’ নিয়ে বিভ্রান্তি ও কমিটির বক্তব্য
এই ভাঙার ঘটনাকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্মরণে প্রস্তাবিত ‘গণমিনার’ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত করে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করে। কমিটি জানায়, তাদের প্রস্তাবিত গণমিনারের সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ ভাঙার কোনো সম্পর্ক নেই। কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের গণমিনারটি হবে এ জনপদের প্রায় আড়াই শ বছরের প্রতিরোধের ইতিহাস এবং জুলাই শহীদদের স্মরণে। আমরা বায়ান্ন বা একাত্তরের কোনো স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলে কিছু করতে চাই না।’
সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের জায়গায় জুলাই শহীদদের স্মরণে একটি নতুন ভাস্কর্য ও উন্মুক্ত চত্বর তৈরি করা হবে। গত ২৫ জুন ডিএনসিসির বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। এটি ছাড়াও জুলাই শহীদদের স্মরণে আরও সাতটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে গণমিনার, দেয়ালচিত্র, তোরণ নির্মাণ ইত্যাদি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ভাস্কর্যের নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে, যেখানে বিজয়ের পতাকা হাতে দুজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি থাকতে পারে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ বলে কিছু নেই। ওখানে বঙ্গবন্ধুর একটি মূর্তি ভাঙা অবস্থায় ছিল, জায়গাটি অপরিষ্কার ছিল, তাই আমরা পরিষ্কার করছি। কী করা হবে, তা খুব দ্রুতই চূড়ান্ত করে জানানো হবে।’ বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো কাজের একটি কাঠামো পাস করিয়ে রাখা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করেন। এর সাতটি দেয়ালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-৬০ সালের সাংস্কৃতিক জাগরণ, ছয় দফা ও গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭ মার্চের ভাষণ এবং ১৬ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়কে ম্যুরালের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছিল।