- ১৭ নভেম্বর ২০২১
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য বিষয়। এই স্বাধীনতাকে সংহত করার স্বার্থে বিচারকদের সহজে অপসারণ করা যায় না। প্রায় প্রতিটি দেশের সংবিধানে এটি নিশ্চিত করা হয়। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে মডেল বিবেচনা করা হয়। গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধানেও বিষয়টি সংহত। বাংলাদেশ যেহেতু সংসদীয় সরকারের দেশ, সেহেতু এখানেও বিষয়টি নিশ্চিত।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ১ ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো বিচারক ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’ ৯৬ এর ২ ধারায় তাদের অপসারণ একরকম অসম্ভব করা হয়েছে। এসব ব্যবস্থা এই জন্য করা হয়েছে- যাতে রাজনৈতিক এলিটরা যথেচ্ছভাবে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন। তবুও বাস্তবতা এই যে, নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে এ প্রবণতা প্রবল।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক, উগান্ডার ইদি আমিনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন সে দেশের প্রধান বিচারপতি। চার দিন পর বিচারপতির লাশ পাওয়া গেছে ড্রেনে। এতদসত্তে¡ও বিচারকরা স্বমর্যাদায় ও স্বমহিমায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে চেষ্টা করেছেন। এই সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সংবিধান কর্তৃক শাসকদের আইন, আদেশ ও অর্ডিন্যান্সকে পর্যালোচনা করার ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেন সংসদীয় গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে প্রিভি কাউন্সিলের প্রাধান্য দিয়ে আসছিল। ১৯৯০ সালের পর সেখানেও কোর্টের রিভিউ পাওয়ার বা পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিকায়নের প্রেক্ষাপটে বিচারকের ক্ষমতা ও পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে দলীয় সরকার ও বিচার বিভাগের দ্ব›দ্বও ক্রমেই সম্প্রসারণশীল।
এই তত্ত¡কথার আলোকে আমরা বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অবস্থাটি পর্যালোচনা করতে পারি। দুর্নীতি মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত সপ্তাহে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সিনহাকে অর্থপাচারের ধারায় সাত বছর এবং অর্থ আত্মসাতের ধারায় চার বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দু’টি ধারায় দেয়া সাজা একসাথে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
এস কে সিনহাকে সাত বছরের সাজা ভোগ করতে হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এই মামলাটি ছিল নজিরবিহীন ও চাঞ্চল্যকর। আর এ রায়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক কোনো প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন। এ দিকে এ রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য এটি কোনো সুখকর দিন নয়’। কিন্তু এটাও সঠিক, অন্যায় করলে তার বিচার হবে। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো- কেউ আইনের ঊর্র্ধ্বে নয়। অপর দিকে, এই ঐতিহাসিক রায়ের ফলে দুদকের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা আরো বাড়বে বলে মনে করে সরকারপক্ষ।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের ক্রেডিট পলিসি লঙ্ঘন করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতির ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল। সেই অর্থ যে পাচার হয়েছিল সে বিষয়টিও সরকার পক্ষের তথ্য মোতাবেক মামলায় প্রমাণিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক আইনজীবী নেতা মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেন, ‘এস কে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি বানিয়েছে বর্তমান সরকার। তাকে প্রধান বিচারপতি বানানোর আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল, উনি কী ধরনের মানুষ। সরকারই এস কে সিনহাকে দেশ থেকে বিতাড়ন করেছে। মামলা দিয়েছে, প্রতিহিংসার চূড়ান্ত পরিণত হলো এই রায়। এই রায় একটি বার্তা দিতে চায় সরকার’- এমন মন্তব্য করে খোকন বলেন, ‘কথা না শুনলে প্রয়োজনে তারা আপন লোককেও বলি দিতে পারে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।
সরকারে কাছাকাছি যারা আছেন, বিশেষ করে যারা তাঁবেদারি করেন, তাদেরকে একটি ইঙ্গিত দিতে চায় সরকার। প্রয়োজন শেষ হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যবস্থা করা হবে। এস কে সিনহার পরিণতি ভোগ করতে হবে। মামলার আর্জির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার টাকা সে খেয়ে ফেলেছে, না নদীতে ফেলে দিয়েছে, এতে কার আসে যায়। এটি মানিলন্ডারিং কিভাবে হয়’- প্রশ্ন রাখেন তিনি। (যুগান্তর, ১০ নভেম্বর ২০২১) বিচারপতি এস কে সিনহা তিন বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমানোর পর দুদক অভিযোগ পায়- তিনি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দু’টি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছিলেন ওই বাড়ির মালিক। ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রণজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়। ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি যথার্থ যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ মঞ্জুর করেন। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দু’টি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে পে-অর্ডার দু’টি জমা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে লেনদেন হয়। পাঁচ মাসের তদন্ত শেষে দুদকের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ১১ জনকে আসামি করে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। দুদকের দেয়া চার্জশিট আমলে নিয়ে ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, বিচারপতি সিনহা বিদেশে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এর ভিত্তিতেই অন্যান্য বিচারক সিনহার সাথে বিচারে বসতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে কোর্টের তরফ থেকে আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু নজিরবিহীন এক পরিস্থিতির মধ্যে অবসরের আগেই তাকে দেশত্যাগ করতে হয়।
আদালতের রায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এখন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক প্রধান বিচারপতি- দুর্নীতির দায়ে যার সাজা হলো। সমসাময়িক পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনার আর কোনো নজির নেই। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে একজন সংখ্যালঘুর নিয়োগ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ছিল।
সরকার এ নিয়োগ দ্বারা দেশে ও পার্র্শ্বদেশে হয়তো সুনাম কুড়াতে চেয়েছিল। তবে তার উত্থান ও পতন একটি ঘটনাবহুল সময়ের সাক্ষী। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এতে আহত হন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। অবশেষে ভাস্কর্য সুপ্রিম কোর্ট ভবনের পেছনে স্থাপন করে আত্মরক্ষা হয়। অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লেখা নিয়ে বিরোধে তিনি বিতর্কিত হন। বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করছে সরকার- এ অভিযোগ ছিল তার। অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা জারি করা নিয়ে সরকারের সাথে টানাপড়েনে জড়িয়ে পড়েন। তবে সবচেয়ে মারাত্মক এবং চূড়ান্ত বিরোধটি ঘটে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর।
২০১৭ সালের আগস্টে রায়টি প্রকাশিত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন সরকার তার ওপর নাখোশ হয়। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করতে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় দেন সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। তার লেখা রায়ে গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভ‚মিকা নিয়েও মন্তব্য ছিল। এসব কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। সার্বিক অবস্থা তার নিরাপত্তা ও দায়িত্ব পালনের অনুক‚ল ছিল না। ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকাবস্থাই তিনি ছুটি নিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন।
বিচারপতি এস কে সিনহা ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তার এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। গ্রন্থ’টির নাম ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থে তিনি এসব ঘটনাবলিকে দুর্ভাগ্যজনক ও নজিরবিহীন বলে বর্ণনা করেন। তার ভাষায়- ‘ঘটনার শুরু ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪। এ সময়ে জাতীয় সংসদ ষোড়শ সংশোধনী অনুমোদন করে। এই সংশোধনী অনুযায়ী প্রধান বিচারপতিসহ সব বিচারকের অভিশংসন ও অপসারণের দায়িত্ব জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করা হয়। ইতঃপূর্বে এই সাংবিধানিক ব্যবস্থাটি বিচারকদের হাতে ছিল।
একে বলা হতো- সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্য আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতির সমন্বয়ে কাউন্সিল গঠনের বিধান রয়েছে। এতে অভিযুক্ত বিচারপতির আত্মপক্ষ সমর্থনের বিধান ছিল।’ এস কে সিনহার ভাষায়- ‘এ ব্যবস্থায় বিচারপতিরা রাজনৈতিক খড়গ থেকে রক্ষা পেতে পারতেন। জাতীয় সংসদ বিচারকদের বিচার করার বিধান করায় বিচারকদের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও মর্যাদা ক্ষু হওয়ার আশঙ্কা ছিল। ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ জাতীয় সংসদের ওই বিধানকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদের সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।’ তারা সিনহার ভাষায়- ‘বিচার বিভাগের প্রতি অসম্মান ও অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেন’।
রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি দেন। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। অর্থাৎ জাতীয় সংসদের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায়টি জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। ক্ষুব্ধ জাতীয় সংসদ ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আদেশটি বাতিলের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করে। সংসদনেতা এবং অন্য নেতারা এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অন্যায় ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। এস কে সিনহার ভাষ্য মোতাবেক, ‘‘তাকে নিজ গৃহে অবরুদ্ধ করা হয়। তার বাসভবনে আইনজীবী ও বিচারপতিদের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। গণমাধ্যমকে বলা হয়- ‘আমি অসুস্থ’। সরকার থেকে বলা হয়, আমার বিদেশে চিকিৎসা দরকার। ১৪ অক্টোবর আমি দেশ ত্যাগে বাধ্য হই। আমি জনসমক্ষে বলার চেষ্টা করি যে, আমি অসুস্থ’ নই এবং চিরকালের জন্য দেশত্যাগও করছি না। আমি আশা করেছিলাম, আমার অনুপস্থিতি ও কোর্টের নিয়মিত অবকাশ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তুলবে। কিন্তু তা না হয়ে গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতির মুখে আমি বিদেশ থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠাতে বাধ্য হই।’ (এ ব্রোকেন ড্রিম, পৃষ্ঠা-১/২) তিনি তার প্রকাশিত গ্রন্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে বিচার বিভাগকে রক্ষা করার অব্যাহত সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন। তিনি তার কার্যকালীন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে যথার্থ ভ‚মিকা পালনে নিজ নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতার উল্লেখ করেন। এগুলো হচ্ছে- মানবতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধু হত্যামামলা, শত্রু সম্পত্তি আইন, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।” তিনি আরো দাবি করেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি সবসময় সচেষ্ট চিলেন।
বিষয়টির পূর্বাপর বিশ্লেষণের পর আইনমন্ত্রীর ভাষায় স্বীকার করতে হয়, ব্যাখ্যা যেভাবেই হোক ‘দিনটি বিচার বিভাগের জন্য সুখকর ছিল না’। এটি নিঃসন্দেহে একটি নজিরবিহীন ঘটনা যে, দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, ন্যায়বিচারের প্রতীক পুরুষকে অন্যায় ও দুর্নীতির জন্য শাস্তি পেতে হলো। এটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বিষয়টি সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীলতার প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রেও রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বা প্রধান নির্বাহী বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে চাইবেন- এটি অসম্ভব নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার অনুতাপ করেছিলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে আর্ল ওয়ারেনকে প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন দিয়ে। তিনি বলেছিলেন ‘ইট ইজ দ্য বিগেস্ট ড্যামফুল মিস্টেক, আই এভার মেড’। হয়তো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়ে থাকবে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, একদিন সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা ইতিহাসের সেই রায়ের অপেক্ষায় থাকলাম।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]