নিজস্ব প্রতিনিধি
বিচারক ও পুলিশ বাহিনীর মানববন্ধনকে দেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দল, তাদের অঙ্গ সংগঠন, বিচারক, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ সবাই এখন রাজপথে তাদের পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যস্ত।’
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘তারা রীতিমতো ব্যানার হাতে মিছিল স্লোগান দিয়ে রাজনীতিবিদদের মতো সভা-সমাবেশ করেছেন। বিচারক ও পুলিশ বাহিনী মানববন্ধন করেছেন, যা দেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা দেশের জন্য অশনি সংকেত।’
রিজভী বলেন, ‘রাজপথে সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন ভূমিকা দেখে জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত, আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার, বিচারকদের অন্য কোনো চেতনা থাকতে পারে না, তাদের একটিমাত্র চেতনাই থাকা দরকার, সেটি হলো ন্যায়বিচার।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, নাগরিক সমাজে বিদ্যমান নানা পক্ষের বিবাদ মীমাংসার জন্য মানুষ আদালত ও প্রশাসনেরই শরণাপন্ন হয়। তারাই যদি কোনো এক পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নামে তাহলে অন্য পক্ষের কথা কে শুনবে? তাহলে ন্যায়বিচার বলে তো কিছু থাকবে না। একদলীয় শাসনে যেমন একদলীয় চেতনাই রাষ্ট্রের সবখানে প্রতিফলিত হয়, সেটিরই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল বিচারক ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের রাজপথে নামার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে চলছে এক ব্যক্তির নিষ্ঠুর জমিদারি শাসন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা গায়ের জোরে আজীবন ক্ষমতায় থাকার গভীর দুরভিসন্ধি পূর্ণ করতে চাচ্ছেন। এখন তার দলের নেতারা প্রকাশ্যে তাদের নেত্রীর অভিলাষের কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গত শনিবার বলেন, ‘শেখ হাসিনা যতদিন শারীরিকভাবে সক্ষম থাকবেন, ততদিন তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবেন’। এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন শেখ হাসিনা’। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা আমৃত্যু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন’। আমরা মনে করি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে তাদের এ বক্তব্য অসাংবিধানিক ও সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
তিনি বলেন, একটি সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের পবিত্র দায়িত্ব সংবিধান সমুন্নত রাখা। সরকার যদি মনে করে, দেশে কোনো নাগরিক সংবিধানবিরোধী কাজ করছে তাহলে সংবিধান সমুন্নত রাখতে তাদের আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটি না করে তারা কী দাবি নিয়ে রাজপথে নামলেন? জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার বিরুদ্ধে মাঠে নামলেন? কার কাছে দাবি জানালেন? কাকে হুমকি দিলেন? কাকে প্রতিপক্ষ বানালেন?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ক্ষমতা-শক্তি-বন্দুক-আইন-আদালত সব কিছু নিজেদের মতো করে জবরদখলে রেখে সরকার, প্রশাসন আর ক্ষমতাসীন দল সব এখন মিলেমিশে একাকার। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এমন ক্ষমতা হিটলার ও মুসোলিনিরও ছিল। কিন্তু ইতিহাসে তারা এখন নিষিদ্ধ নাম।’
রিজভী আরও বলেন, ‘যারা এখন ক্ষমতায় রয়েছেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিরোধী দল রাজপথে নামার সুযোগ পায় না, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানুষের অধিকার নিয়ে দেশের মানুষ নানা দাবিতে মানববন্ধন করতো অথচ গত কয়েক দিন আগে পুলিশ রাতের আঁধারে শিক্ষক ও শ্রমিকদের লাঠিপেটা ও নির্যাতন করে তাদের উঠিয়ে দিয়েছে, পুলিশ গোটা এলাকা দখলে নিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও রাজপথে নামতে দেয়া হচ্ছে না। সেই অবস্থায় সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দল, তাদের অঙ্গ সংগঠন, বিচারক, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ সবাই এখন রাজপথে তাদের পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যস্ত।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, দলের যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।