
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে প্রার্থিতার কাজ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অনেক নেতাকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে মর্মে গণমাধ্যমে তাদের নাম আসায় বেকায়দায় পড়েছে দলটি। এ কারণে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপি কাউকে গ্রিন সিগন্যাল বা সবুজ সংকেত দেয়নি। তিনি মনে করেন, মনোনয়নের তালিকা দিয়ে নেতাকর্মীদের উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
এ ব্যাপারে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নের কাজ শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জরিপ পরিচালনা করেছে। এ নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরাও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের একটি তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে জমা দিয়েছেন। এসব তালিকা থেকে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার আগে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মতামতও নেবেন দলের শীর্ষ নেতারা।
তারা জানান, এর মধ্যেই সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে বেশ কিছু নেতার নাম কোনো কোনো গণমাধ্যমে এসেছে, যা মোটেও সঠিক নয়। কেননা, প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার জন্য বিএনপিতে একটি গঠনতান্ত্রিক একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। জরিপ ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল নেতাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের মনোনয়ন বোর্ড। এর আগে মনোনয়ন ফরম বিতরণ হবে এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষেই ওই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কথা গঠনতন্ত্রে রয়েছে। উল্লেখ্য, গঠনতান্ত্রিকভাবে দলের স্থায়ী কমিটিই মনোনয়ন বোর্ডের দায়িত্ব পালন করে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে কয়েকটি ধাপে জরিপ কার্যক্রম চলছে। একাধিক জরিপ শেষ হয়েছে। জরিপের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি দলটির বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বশীল নেতাদের কাছ থেকে প্রার্থীদের তথ্য চেয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জরিপের তথ্য ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল নেতাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছেন তিনি। যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান। ফলে এখনই সবুজ সংকেত দেওয়ার তথ্য মনগড়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমার দেশকে জানান, দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে সব বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। সেই প্রতিবেদনে সব সংসদীয় আসনে কারা কারা প্রার্থী হয়েছে এবং প্রার্থীদের সব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন। এসব তথ্য আর জরিপে উঠে আসা তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেই হিসেবে কারো মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছেÑএটা বলার সুযোগ নেই।
২০০ আসনে প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়ার বিষয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গতকাল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান, সম্প্রতি কিছু পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির মনোনয়নের কথিত তালিকা প্রকাশ করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি, অসন্তোষ এবং বিশৃঙ্খলা উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। কোনো নির্বাচনি এলাকায় কোনো প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি।
এমন সংবাদকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে রিজভী বলেন, ‘বিএনপিতে বিভেদ-বিসংবাদ সৃজনের অশুভ অভিপ্রায় নিয়ে কতিপয় মিডিয়া যথেচ্ছভাবে মিথ্যা অপপ্রচার প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার দেশকে বলেন, ‘বিএনপির কোন আসনে কে প্রার্থী হবে এই বিষয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলীয় কে বা কারা গ্রিন সিগন্যাল পাচ্ছেÑএ বিষয়ে আমার জানা নেই। অনেকে মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেছে।’
তৃণমূলে তারেক রহমান যে বার্তা দিয়েছেন তা উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের রাজনৈতিক দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। এসব প্রার্থী নির্বাচনের প্রচারের পাশাপাশি বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।