পাঁচ দফা অবরোধের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘একতরফা’ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে আজ রোববার শুরু হচ্ছে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। আজ সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত হরতাল চলবে। শান্তিপূর্ণ হরতালের এই কর্মসূচিতে সবাইকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। সমমনা একাধিক দল ও জোটের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও হরতাল দিয়েছে।
২৮ অক্টোবরের পর এটি বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দ্বিতীয় দফার হরতাল। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের হামলায় পণ্ড করার প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেওয়া হয়। এরপর পাঁচ দফায় মোট ১১ দিন সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।
বিরোধী দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেই গত বুধবার নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ঠিক করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দুই দিনের হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন। অন্যান্য দল ও জোটও পৃথকভাবে একই দিনে হরতালের ডাক দেয়।
হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল শনিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৪৮ ঘণ্টার এই হরতাল হচ্ছে অধিকার আদায়ের হরতাল। এই হরতাল হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, গণতন্ত্রকামী মানুষকে অন্যায়ভাবে জুলুম-নিপীড়ন-নির্যাতন করে ফরমায়েশি রায়ে শাস্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হরতাল। এই হরতাল অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে। জনগণের মালিকানা জনগণকে ফেরত দিতেই এই দুর্বার আন্দোলন।
ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভী ঘোষিত তফসিল প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে তফসিল ঘোষণা করেছেন, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন, নির্বাচন স্থগিত করে আগে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এই ফরমায়েশি একতরফা নির্বাচন জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।’
সরকার এবারের নির্বাচনেও ‘ভোট ডাকাতির উৎসব’ করতে চায় বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, অতীতের মতোই সারা দেশের জনগণকে বন্দী করে, গৃহছাড়া করে ভোট ডাকাতির উৎসব সফল করতে চায় সরকার।
রিজভী অভিযোগ করেন, অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ। নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তাঁর স্বজন-আত্মীয়দের আটক করে মারধর করছে। গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার–আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুঃসহ জীবন অতিবাহিত করছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে।
রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপির ৩৩০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৭টি এবং তাতে আসামি করা হয়েছে ৯৭৫ জনকে। একই সময়ে বিএনপির ১২ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত দলটির ১৩ হাজার ২১০ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই সময়ে তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৯৬টির অধিক মামলা হয়েছে।
প্রথম আলো