৮ ডিসেম্বর ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধি
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের যৌথ অভিযানের পর রাজধানীতে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত গুণ্ডা বাহিনী। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গুণ্ডাবাহিনী সশস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে রাজধানীতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি’র সমাবেশকে সামনে রেখে এই মহড়ার মাধ্যমে মানুষের মনে ভয় তৈরি করতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবারের যৌথ বৈঠকেও বিএনপি’র সমাবেশ ঠেকানো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর বিএনপি’র সমাবেশকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও নীলক্ষেত এলাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এ মহড়া দিতে দেখা গেছে।
সন্ত্রাসী মহড়ার পাশাপাশি আদালত অঙ্গনে আওয়ামীপন্থী দলবাজ আইনজীবীরাও মিছিল করেছেন।
সকালে নিজেদের সশস্ত্র মহড়ার ছবি ফেসবুকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন লিখেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ। আমাদের লাশের মিছিলের উপর দিয়ে, পোড়া মানুষের ভয়ার্ত চিৎকার আর রোনাজারির উপর ভর করে, জনগণকে ভয় দেখিয়ে যারা হত্যার রাজনীতি কায়েম করতে চায়, তাদের এই বাংলার মাটি থেকে মূলোৎপাটন করতে হবে।
নিজেরা গুম-খুন ও সন্ত্রাস করে দেশকে কার্যত অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার পর এবার গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ছাত্র সংগঠন জঙ্গি ছাত্রলীগ।
এদিকে সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং দুই সিটি মেয়রের যৌথসভা বসেছে। এখানেও আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে বিএনপির সমাবেশ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভার স্বাগত বক্তব্যে গলাবাজি করে বলেছেন, গতকাল বিএনপি নয়াপল্টনে লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি কার্যকর করেছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে পুলিশের সহায়তায় রক্তাক্ত উপায়ে দমন করতে ওবায়দুল কাদের দিক নির্দেশনাও দেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা, ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থায় থাকবে।
অন্যদিকে, একই দিনে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিজয়নগর মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমাকে পার্টি অফিসে যেতে দেওয়া হলো না।
এদিকে বিএনপির অফিসে তালা দেওয়া হয়েছে গতকালই। সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকেই। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নয়াপল্টনমুখী সবাইকে তল্লাশি করছে পুলিশ। পরিচয়পত্র দেখা হচ্ছ। জানতে চাওয়া হচ্ছে সেদিকে যাওয়ার কারণ।
এছাড়া রাজধানীর প্রবেশদ্বারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। সেখানে জনসাধারণকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার (৭ই ডিসেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় আওয়ামী পুলিশ। সেখানে পুলিশের গুলিতে বিএনপির একজন কর্মী নিহত হন।
সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
বিকেল সাড়ে চারটায় পুলিশের অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর মির্জা ফখরুল কার্যালয়ের সামনে যান। তিনি ভেতরে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন তিনি সামনের ফুটপাতে বসে পড়েন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল রাস্তা থেকে উঠে যান।