- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২১ ডিসেম্বর ২০২০
বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে আনীত শোকজের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের দেয়া বক্তব্য ‘ভুতের মুখে রাম রাম’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ হয় যখন দেখি যে, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তারা বলছেন যে, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তারই এটা(হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদ শোকজ) প্রমাণ। ভুতের মুখে রাম রাম। আপনারা(আওয়ামী লীগ) দেশের গণতন্ত্রই খেয়ে ফেলেছেন, মানুষের অধিকারগুলো খেয়ে ফেলেছেন। আর আপনার অন্যের গণতন্ত্র দেখে বেড়াচ্ছেন।’
বিএনপি মহাসচিব দাবি করে বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র আছে বলেই তো বিএনপি এখন পর্যন্ত এতো অটুট আছে, একেবারে সুদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ আছে। এই সরকার চরমভাবে গণতন্ত্রকে যে হত্যা করছে, গণতন্ত্রের পরিবেশকে একেবারে বিনষ্ট করে ফেলেছে এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সকল আয়োজন করে ফেলেছে। শুধু ছদ্মবেশটা আছে। সেই ছদ্মবেশ নিয়ে তারা কথা বলছে, সমানে কথা বলছেন যে, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই।”
৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাদুবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কতৃজ্ঞতা জানাতে চাই যে, এতো দিন পরে তারা জনগণের যে মূল কথা সেটা নিয়ে এসছেন, কথা বলেছেন। তাদের যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব তারা পালন করেছেন।’
‘আমি মনে করি, এটাকে সমস্ত বুদ্ধিজীবী যারা আছেন তাদের সমর্থন করা উচিত। ইটস নট ফর বিএনপি, নট ফর পলিটিক্যাল পার্টি। এটা দেশের জন্য, জাতির জন্য প্রয়োজন। যে একটা নির্বাচন কমিশন তারা চুরি করে, তারা টাকা চুরি করে। তারা করছে এসব উঠে এসছে। এ একথাগু লো আমরা নির্বাচন কমিশনের গঠনের সময় থেকে বলে আসছি।
৪২ বিবৃতিদাতার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা তো বলি, চোর কি কখনো স্বীকার করে যে, আমি চুরি করেছি।’
৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক দেয়া বিবৃতি নিয়ে তথ্য মন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৪২ জন নাগরিক যে বিবৃতি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের বিজ্ঞ তথ্য মন্ত্রী মহোদয় তিনি বলেছেন যে, এটা বিএনপির অফিসে ড্রা্ফট হয়েছে। যা একজন মানুষও বিশ্বাস করে না।’
‘‘ যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা একজনও বিএনপি করেন না। বরঞ্চ বিভিন্ন সময়ে তারা বিএনপির সমালোচনা করেছেন। প্রকৃত সত্য যখনই সামনে আসে এবং জনগন যখন সত্য কথা বলতে চায়, নাগরিকরা সত্য কথা বলতে চায় তখনই আপনার তাদের বিএনপি বানিয়ে ফেলেন। এটা হচ্ছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার আরেক জঘন্যতম কৌশল।”
দুই ভাইস চেয়ারম্যানের শোকজ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সবাই দলে আছেন। কোথাও যাওয়ার কোনো সমস্যা তো হয়নি। সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি, সেই ধরনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি।”
‘‘ বিএনপি এখনো অত্যন্ত সুসংগঠিত আছে। একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে বিএনপি একটা বৃহত দল। এই ধরনের উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে ছোট-খাটো দুই একটা ঘটনা কোনো ঘটনাই নয়। এটাকে এতো বড় করে যারা দেখছেন তারা আমার মনে হয় ঠিকভাবে দেখছেন না।”
এক প্রশ্রের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ উনার(মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ) বিষয়ে আমরা কী পাল্টা কিছু বলেছি। উনার বক্তব্যে উনি যা বলেছেন, তা আমি দেখেছি। দলের যে বিধান আছে , স্থায়ী কমিটির …।”
‘‘ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটা রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্য়ায়ের নেতা নিসন্দেহে এই বিষয়টি প্রেসের কাছে আসবেই, আপনারা কনসার্ন হবেন। ভারতে ২২ জন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ওপেন চিঠি দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধীকে। কৈ তারা তো কেউ বহিস্কার হননি। দ্যাট ইজ দ্যা প্রাকটিস অব ডেমোক্রেটিক পার্টি। কখনো হবে, কখনো হবে না-এটা নিয়ে এতো মাথা ব্যাথার কোনো কারণ নেই।”
মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদের লিখিত জবাবে বিভিন্ন অভিযোগ ও সুপারিশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এ ব্যাপারে আমরা এখনো আলোচনা করিনি এবং কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তার আগে আপনারা এমন লাফালাফি করছে মনে হয় যেন সব কিছু চলে যাচ্ছে, এটাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে।”
‘‘ গণতন্ত্র তো ধবংস করেই ফেলে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই বিষয়ে কিন্তু একটা কথাও গণমাধ্যমের কোথা বলা হয় না, কোথাও দেখি না। তারা(আওয়ামী লীগ) যখন প্রেস কনফারেন্স করেন তাদেরকে কী একবারও জিজ্ঞাসা করেন –আপনি কেনো এটা করলেন, এটা কেনো করলেন। দ্যাট ইজ দ্যা পয়েন্ট। দেশে এমন একটা ত্রাসের বা ভয়ের পরিবেশে তৈরি করেছে আপনারা যারা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে চান তারা করতে পারছেন না।”
তিনি বলেন, ‘‘ তারা(আওয়ামী লীগ) মেজর হাফিজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছেন, তারা তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করেছে, তারা তার বিরুদ্ধে বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেয়ার মামলা করেছে। একটা নয় ১০টা মামলা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মুখে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কথা বলা শোভা পায় না।”
‘‘ কোন মুক্তিযোদ্ধাকে তারা সন্মান দিয়েছেন? তারা কি জিয়াউর রহমানকে সন্মান দিয়েছেন? তারা কী তাজউদ্দিন আহমদ(বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী) সাহেবকে সন্মান দিয়েছেন? তারা দেননি। তারা কি এমএজি ওসমানি(মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক) এর নাম একবারও স্মরণ করেন। একে খন্দকার সাহেবকে বের করে দিয়েছেন, এখন উনি মুখ-বধির হয়ে গেছেন, একেবারে কথা বলা বন্ধ, চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেছে উনার। এটা আমি কয়েকটা বললাম।আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের বিরুদ্ধে ৮৬টা মামলা।”
ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের একজন। কারণ উনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে যেদিন জিয়াউর রহমান সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তারপর থেকে উনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দুইটা শিশুকে নিয়ে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। তারপরে কারা্ভোগ করেছেন এখনো। দেশনেত্রীকে সরকার কি করেছেন আপনারা দেখছেন।