বিএনপির ঢাকা গণসমাবেশ : কার কী অর্জন

 

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন

  • ১১ ডিসেম্বর ২০২২

বিএনপির ঢাকা গণসমাবেশ : কার কী অর্জন – ছবি : সংগৃহীত

টানা কয়েক সপ্তাহ ভেন্যু নিয়ে দর কষাকষি, নয়াপল্টনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, হতাহত এবং বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার গ্রেফতার- এতো ঘটনাপ্রবাহের পরও গোলাপবাগ মাঠে কোনো সহিংসতা ছাড়াই শনিবার শেষ হয় বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশ। এই সমাবেশের সফলতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে।

বিএনপির দাবি শত বাধা সত্ত্বেও যতো মানুষের সমাগম হয়েছে তা দলের জন্য বড় অর্জন। তবে আওয়ামী লীগের দাবি এই সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছে।

গত কয়েক মাসে বিএনপি তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

বিএনপি ঢাকার ওই সমাবেশ থেকে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের ডাক দেয়।

শুধুমাত্র মিছিলের ডাক দেয়ায়, এতো ঝুঁকি নিয়ে যারা সমাবেশে এসেছিলেন, তাদের প্রত্যাশার পারদ থিতিয়ে পড়েছে কিনা- এমন প্রশ্নও উঠেছে।

এ নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন বিএনপি তাদের আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং সরকারের ফাঁদে পা না দিয়েই রাজনীতির মাঠে চাপ তৈরি করতে পারছে।

সমাবেশ সফল, দাবি বিএনপির
ঢাকার গণসমাবেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সেইসাথে সংসদ বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবির কথাও উঠে আসে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দাবি, শত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে যেভাবে মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়েছে তাতে প্রমাণ হয় বিএনপি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, এতো বাধাবিপত্তি, এতো ষড়যন্ত্রের পর আমাদের যে সমাবেশ হয়েছে সেটাকে আমরা সফল বলে মনে করি। তারপরও বহু মানুষ এসেছে, আরো বেশি মানুষ আসতে পারতো যদি এসব প্রতিবন্ধকতা না থাকতো।

বিএনপি শুরু থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চাইলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ওই স্থানটিতে জনসমাগমের মতো জায়গা নেই।

আশেপাশে অলিগলি থাকায় নিরাপত্তার আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন নয়াপল্টনের কার্যালয়ে পুলিশের তালা ঝুলিয়ে, রাস্তা বন্ধ রেখে উল্টো আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে মনে করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, এই সরকার বলেছিল আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করলে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ১০ তারিখে আওয়ামী লীগের বাহিনী সারাদেশের রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছে। প্রবেশ পথে হয়রানি করেছে, তখন কিছু হয়নি।

বিএনপি আস্থা হারিয়েছে
বিএনপি তাদের এই সমাবেশকে সফল বললেও আওয়ামী লীগের দাবি যে বিরোধী দলটি মানুষের আস্থা হারিয়েছে। কারণ, ওই সমাবেশে কর্মী সমর্থকদের জড়ো করতে বিএনপি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। তার মতে এই সমাবেশ বিএনপির ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি’ ছাড়া আর কিছুই না।

‘বিএনপির নেতাকর্মীরা এই জনসমাবেশকে ঘিরে কয়েক মাস ধরে বলেছিলেন ১০ তারিখ তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জনসভায় যোগ দেবেন। তারেক জিয়া দেশে আসবেন। ১১ তারিখ থেকে খালেদা জিয়ার শাসনে দেশ চলবে। এসব মিথ্যা কথার প্রলোভন দেখিয়ে তারা কর্মীদের ঢাকায় জড়ো করেছেন। অথচ কর্মীরা ঢাকায় এসে দেখলেন ‘পর্বতের মুশিক প্রসবের’ মতো অবস্থা। সমাবেশে কিছুই হয়নি। তারা হতাশাগ্রস্ত কর্মীদের কিছুটা রক্ষার জন্য পদত্যাগের কথা বলেছে। সাড়ে তিন শ’ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৭ জন গেলে কিছুই হবে না। এটা তারা জানে।

শনিবার সাভারে দলীয় সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতারাও একই কথা বলেছিলেন। ওইদিন বিএনপির সমাবেশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল।

উত্তাপ কি থিতিয়ে পড়েছে?
বিএনপি এর আগে ঢাকার বাইরে আরো ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশ করে। তাদের এই লাগাতার গণসমাবেশ, বক্তব্য, কর্মসূচিতে ধারণা করা হয়েছিল দলটি হয়তো রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু ঢাকার সমাবেশ থেকে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না করায় সেই উত্তাপ যেন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে।

ঢাকার সমাবেশ থেকে কর্মী সমর্থকরা বড় ধরনের দিক-নির্দেশনার আশা করছিলেন বলে মনে করা হয়। কিন্তু সমাবেশ থেকে শুধুমাত্র বিক্ষোভ, গণমিছিল কর্মসূচির ডাক দেয়ায় সেই প্রত্যাশা দলটি কতোটা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, হরতাল, ধর্মঘটের মতো বড় কর্মসূচি এর আগে রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলায় বিএনপি শান্তিপূর্ণ পথেই হাঁটছে। বরং সরকার যেভাবে বিরোধী পক্ষকে দমন করার চেষ্টা করছে সেটা উপেক্ষা করে এই সমাবেশ হতে পারাকেই বড় অর্জন বলে তিনি মনে করছেন।

মহিউদ্দিন আহমেদের মতে, বিএনপির সাম্প্রতিক উত্থান, বিশেষ করে তাদের জনসমক্ষে দৃশ্যমান হওয়া, সমাবেশ করা, নানা বাধা সত্ত্বেও জনস্রোত ঠেকাতে না পারা- এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রথম প্রথম অস্বস্তিতে থাকলেও এখন তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

‘প্রতিটি সমাবেশের আগে সরকার নানা বাধা দিয়েছে, ঝুঁকি তৈরি করেছে, তারপরও মানুষ এসেছে,’ তিনি বলেন।

হরতালকে একটি গণবিরোধী কর্মসূচি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বুঝতে পেরেছে হরতাল দিলে তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস হবে। আমার মনে হয় বিএনপি ঠেকে শিখেছে যে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বাইরে যাবে না, কোনো উস্কানির ফাঁদে পা দেবে না।

ঢাকার ওই সমাবেশে বিএনপি যে জঙ্গি দমন আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ৭৪-এ বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়নের পর বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় এলেও তারা নিজেরা কেন আইনটি বাতিল করেনি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্র : বিবিসি