বিএনপিতে আরো রদবদল আসছে

  • মঈন উদ্দিন খান
  •  ২১ জুন ২০২৪, ০২:৪৯, আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ১০:১৯

বিএনপিতে আরো রদবদল আসছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে শিগগিরই। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে। এদিকে বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই কমিটি ও যুবদলে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসবে যেকোনো দিন। শেষ মুহূর্তে মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।

ঈদুল আজহার আগে গত শনিবার বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে বড় রদবদল আনা হয়। ৪৫ নেতাকে নানান পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই রদবদলের নেপথ্যে সাধারণভাবে বিগত আন্দোলনে রাজপথে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে না পারার কথা হলেও মূলত দল ও নেতৃত্বের প্রতি কমিটমেন্টই ‘মূল ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করেছে বলে অভিমত বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের। তাদের মতে, দলের হাইকমান্ড ‘আস্থাভাজন’ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে নির্বাহী কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চান। এই বিবেচনায় রদবদলে কারোর পদোন্নতি হয়েছে, কারোর পদাবনতি ঘটেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে বিএনপি। এই প্রক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত তরুণ ও দলের হাইকমান্ডের আস্থাভাজন নেতাদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আনা হবে।
এদিকে বিএনপিতে এই রদবদলের প্রেক্ষিতে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, খুব শিগগিরই নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে আরো রদবদল আসতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে ৩০-৩৫ জন নেতাকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নতুন মুখ আসতে পারে। জানা গেছে, বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারণে দু-একজন নিষ্ক্রিয় হলেও স্থায়ী কমিটি থেকে আপাতত কাউকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা নেই বিএনপির। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকা পদগুলো পূরণ করাই মূল টার্গেট দলের। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় এবং চতুর্থ ধাপ মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই শ’ পদে আসতে পারে রদবদল। বিএনপির ৪৫ পদে হওয়া রদবদল নিয়ে দলে দুই ধরনের বক্তব্য রয়েছে। এক পক্ষ বলছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নানা কারণে আপাতত কাউন্সিল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন পদ পুনর্বিন্যাস করছেন। যেহেতু একই পদে কারোর বেশিদিন থাকার সুযোগ নেই, তাই পদোন্নতি দিয়ে সেই শূন্যপদে যোগ্যদের পদায়ন করা হচ্ছে।

এই প্রক্রিয়ায় দল যাকে যেখানে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে, তাকে সেখানে দেয়া হচ্ছে। এটি একটি স্বাভাবিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। অন্যপক্ষ বলছে, দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সংগঠনে যে রদবদল আনা হয়েছে তাতে এটা সুস্পষ্ট যে, বিগত আন্দোলনে যারা মাঠে ছিলেন না কিংবা নেতৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন করেছেন অথবা দলের প্রতি যাদের কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে বলে হাইকমান্ডের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে- তাদেরকে অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন পদ কিংবা পদাবনতি দেয়া হয়েছে।

সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলন মূল্যায়নে কূটনৈতিক ব্যর্থতা কাটাতে দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির বদলে দলের চেয়ারপারসনের ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি’ এবং ‘স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি’ নামে ২৯ সদস্যের নতুন দু’টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে একটি এবং তাদের সহায়তা করার জন্য আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতেই এই দু’টি কমিটি করা হয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।

এদিকে গত ১৩ জুন রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ধারণা করা হচ্ছিল, ঈদের আগেই সেখানে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে, কিন্তু সেটা হয়নি। যেকোনো সময় সেখানে আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে। সেই কিভাবে কমিটি দেয়া যায়, সেটা নিয়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে হাইকমান্ড। সম্ভাব্য পদপ্রত্যাশীরাও শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবিরে ব্যস্ত। জানা গেছে, বর্তমানে যারা কারাগারে ও দেশের বাইরে রয়েছেন নেতৃত্বের জন্য তাদের বিবেচনা করছে না দল। দীর্ঘদিন ধরে বয়স্করা মহানগরের নেতৃত্ব দিলেও এবার তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে চান হাইকমান্ড। মহানগর উত্তর বিএনপি নিয়ে দলটির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সেখানে নেতৃত্বের ব্যাপক সঙ্কট রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি পদে বিদায়ী কমিটির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ পদে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে নীরব কারাগারে থাকায় তার সম্ভাবনা কম বলে অনেকে মনে করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে দলের প্রভাবশালী কিছু নেতা নীরব ও জাহাঙ্গীরকে দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আবার কেউ কেউ এস এম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি এবং আমিনুলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পক্ষেও কাজ করছেন। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিদায়ী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এ জি এম শামসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন এবং সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদের নাম আলোচনায় রয়েছে।

তবে মহানগর দক্ষিণে নেতৃত্বের কোনো সঙ্কট নেই বলে নেতাদের দাবি। জানা গেছে, বিদায়ী কমিটির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুকে সভাপতি ও যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এদের বাইরে শীর্ষ পদে আসতে পারেন দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হামিদুর রহমান হামিদ ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিব। এমনকি এই চারজনই সুপার ফোরে থাকতে পারে। এদের বাইরে সদ্য বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ইশরাক হোসেনের নামও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে ঘোষণার অপেক্ষায় যুবদলের নতুন আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সেখানে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল। এছাড়া সভাপতি হিসেবে বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের নামও আলোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানও সাধারণ সম্পাদকের আলোচনায় রয়েছেন। এদের বাইরে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান শ্যামল সাইফ মাহমুদ জুয়েলের নামও বিভিন্ন পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের নির্বাহী কমিটিতে কিছু শূন্য পদ পূরণ এবং কিছু পদে সমন্বয় করা হয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদেও কয়েকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে এই পদায়ন করা হয়েছে। এটি রুটিন ওয়ার্ক। আগামীতে আরো রদবদল করা হবে কিনা, সেটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।’ তিনি জানান, জাতীয়তাবাদী যুবদলসহ যেসব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, সেখানে যথাসময়ে নতুন করে কমিটি দেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here