বিএনপিকে আরও চাপে ফেলার সুযোগ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ

নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা বিএনপিকে আরও কোণঠাসা করার সুযোগ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি মনে করছে, পুলিশ সদস্য নিহত হওয়া, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, যানবাহনে আগুন—সব মিলিয়ে বিএনপি এবার চাপে পড়ল। এই চাপ থেকে যাতে ভোটের আগে না বের হতে পারে, সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা থাকবে ক্ষমতাসীন দলের।

বিএনপির হরতালের বিপরীতে ঢাকাসহ সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানায় শান্তি সমাবেশ ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, এবার তাঁদের লক্ষ্য বিএনপির ডাকা হরতাল ভোঁতা করে দেওয়া। আজ রোববারের হরতাল বিএনপি যাতে সফল করতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে থাকবেন। আর হরতাল ব্যর্থ করে দিতে পারলে পরবর্তী সময়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির পক্ষে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।

গতকালের সংঘর্ষ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে না হয়ে পুলিশের সঙ্গে হওয়ায় নির্ভার ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির আন্দোলন শেষ পর্যন্ত অহিংস থাকবে না, এটা জানাই ছিল। এর জন্য সতর্ক অবস্থায় ছিল আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত সহিংসতার দায় আওয়ামী লীগের ওপর পড়েনি—এটাই স্বস্তির।

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি পুলিশ হত্যা করেছে, নৈরাজ্য করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়ি আক্রমণ করেছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ছাড় দেবে না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগপর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থাকবে বলে তিনি জানান।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে আওয়ামী লীগ। গতকালের কর্মসূচির আগে কিছুটা আক্রমণাত্মক ছিল ক্ষমতাসীন দলটি। যেকোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। নেতাদের অনেকে মোটা লাঠি নিয়ে আসার নির্দেশও দিয়েছিলেন। গতকাল এই নির্দেশনা পালন করেছেন নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের সমাবেশে আসা প্রায় প্রত্যেকের হাতে বাঁশের লাঠি, প্লাস্টিকের পাইপ, হকিস্টিক, কাঠ দেখা গেছে। এবার ব্যানার খুব একটা চোখে পড়েনি।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কোনো এক পর্যায়ে সংঘাতের শঙ্কা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা চেয়েছেন সংঘাতের দায় যেন নিজেদের ওপর না আসে। এ জন্য তাঁরা সতর্ক ছিলেন। লাঠি নিয়ে আসার বিষয়টি সতর্কতার অংশ ছিল এবং মূলত বিএনপিকে ভয় দেখানোই ছিল লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফার দাবি নিয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলতে চেয়েছে। আর আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ছিল, কোনো একটা কর্মসূচিতে বিএনপি ভুল করলে বা ব্যর্থ হলে চেপে ধরতে হবে। যাতে তফসিল ঘোষণার আগে আর দাঁড়াতে না পারে। গতকাল পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘাতকে দলটিকে চেপে ধরার জন্য ব্যবহার করা হবে। দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হবে।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এখন যা করার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই করবে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে। এখন আওয়ামী লীগের সব পর্যায় থেকে এই বক্তব্য দেওয়া হবে যে বিএনপির এত দিন শান্তিপূর্ণ থাকার বিষয়টি তাদের প্রকৃত চেহারা নয়। তারা তাদের পুরোনো সহিংস রূপেই আছে। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হত্যা, পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ—এই বিষয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গতকালের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ নিয়ে দেশে-বিদেশে আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশে নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনীতিকেরাও আগ্রহী ছিলেন, নজর রেখেছেন। এ জন্য আওয়ামী লীগ গতকালের সমাবেশের মাধ্যমে দেশে ও বহির্বিশ্বে নিজেদের জনসমর্থন দেখাতে চেয়েছে। এই কাজে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি সফল বলে দলের নেতারা মনে করেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি রাজপথে বিপুল লোক জমায়েত করতে পেরেছে। কিন্তু গতকাল পুলিশ মারমুখী হওয়ার পর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তারা গুটিয়ে গেছে। এ থেকে আওয়ামী লীগ খুশি যে বিএনপি আগামী নির্বাচন বানচাল বা রাজপথ দখলে নেওয়ার মতো ঝুঁকি তৈরি করতে পারবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী ও সংঘাতের দল—এটা বহুদিন ধরে তাঁরা বলে এসেছেন। গতকাল তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে না থাকত, তাহলে তারা আরও আগেই নৈরাজ্য সৃষ্টি করত। গতকালের নৈরাজ্যের ফল তাদের ভোগ করতে হবে।

প্রথম আলো