ঢাকা
গত ডিসেম্বর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আর ওই মাসে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ।
করোনার কারণে সংকটে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পুরো অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা করার এই প্রক্রিয়ায় মজুরিও বাড়ে। কিন্তু সেই বাড়তি মজুরির টাকা খেয়ে ফেলছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এখন জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার প্রায় সমান হয়ে গেছে। সাধারণত মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি থাকে। কিন্তু দুই মাস ধরে সেই চিরায়ত প্রবণতায় টান পড়েছে।
পুরো বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। যেমন আপনি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ১০০ টাকায় যত জিনিসপত্র কিনেছেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই টাকা দিয়ে সেই জিনিসপত্র পাবেন না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আপনাকে ১০৬ টাকা ৫ পয়সা খরচ করতে হবে। ৬ টাকা ৫ পয়সা হলো মূল্যস্ফীতি। গত ডিসেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতির হার ছিল এটাই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মজুরিও বাড়ে। মজুরি বেশি বৃদ্ধি পেলে মূল্যস্ফীতির আঁচ টের পান না তাঁরা। কিন্তু সমান হলে দুশ্চিন্তা বাড়ে। গত ডিসেম্বর মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১১। এর মানে, মজুরি বৃদ্ধির বাড়তি টাকা পুরোটাই চলে গেছে জিনিসপত্রের বাড়তি দামে। ফলে সঞ্চয় করা বা জীবনযাত্রার বাড়তি চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
করোনার কারণে বহু লোকের চাকরি গেছে, অনেকে কাজও হারিয়েছেন। অনেকেই আবার কাজে ফিরেছেন, কিন্তু আগের মজুরি পান না। এমন অবস্থায় মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে তাঁরা বেশি হিমশিম খাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অনেকেই বাড়তি কাজ করছেন। উদাহরণ হিসেবে রেস্তোরাঁকর্মীর মো. রিপনের কথাই ধরা যাক। রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার এ রেস্তোরাঁকর্মীর করোনার আগে মাসিক বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা। গ্রাহকদের বকশিশসহ সব মিলিয়ে মাস শেষে ১৫-১৬ হাজার টাকা আয় হতো। করোনায় চাকরি হারানোর পর এখন ভাড়ায় গাড়ি চালান। মাস শেষে ১৫-১৬ হাজার টাকা আয় করেন। কিন্তু জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই টাকায় সংসার চলে না। এখন মাঝে মাঝে নানা ধরনের খণ্ডকালীন কাজ করে বাড়তি ২-৩ হাজার টাকা আয় করেন। বাস্তবে আয় বাড়লেও মূল্যস্ফীতি তা খেয়ে ফেলেছে।
এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি বেশ বেড়েছে। এটি প্রকৃত মজুরির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ, কোভিডের কারণে অনেকে কাজ হারিয়েছেন, কাজ ফেরত পেলেও আয় আগের মতো নয়। তাঁর মতে, বিবিএস মজুরির যে হিসাব যেভাবে করে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে বিবিএসের এই হিসাবের মধ্যেও মূল্যস্ফীতি ও মজুরি পরিস্থিতির একটি মোটামুটি চিত্র উঠে এসেছে।
কোভিডের মধ্যে ২০২০ সালের জুন মাসে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম ছিল। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, আর মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯০। গত এক দশকের মধ্যে সেটিই ছিল ব্যতিক্রম ঘটনা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত মূল্যস্ফীতি ও মজুরি হার বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য ১ শতাংশের মতো হয়। কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এখন তা ৬ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মজুরি সেই হারে বাড়ছে না। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি সূচক প্রায় সমান্তরালে চলেছে। গত নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর মজুরি বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক শূন্য ২।