- খালেদ আবু জাহের
- ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:৫০
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান সম্প্রতি বলেছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে জোরদার করার জন্য তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে, এ ধরনের বৈঠকের ফলাফল কী হতে পারে এবং এটি সিরিয়ার জন্য কী পরিবর্তন নিয়ে আসবে?
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর, গোয়েন্দা প্রধান হাকান ফিদান ও সিরিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে মস্কোতে একটি সফল বৈঠকের পর ইতোমধ্যেই জল্পনা-কল্পনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে আসাদের অবস্থানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এই আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রকৃতপক্ষে ২০১১ সালের পুনর্জাগরণ বা গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ আসাদ ফিরে পাওয়ার পর থেকে তুর্কিয়ের স্বীকৃতি অনুপস্থিত।
তুর্কি ও সিরিয়ার এই কাঠামোর মধ্যে ইসরাইল, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াও উপস্থিত থাকবে বলে আমরা বিবেচনা করতে পারি এবং ঠিক দুই নায়কের মতো তারা সম্ভবত আলোচনা করার বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে চলে যাবে। এটি আসাদের পক্ষে যাবে। এতে করে তিনি তার অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মূল্যবান দর কষাকষির হাতিয়ার লাভ করবেন।
সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও জরুরি বিষয় হলো- সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি, ওয়াইপিজির সাথে তুর্কিয়ের দ্বন্দ্ব এবং একটি বড় সামরিক আক্রমণের হুমকি অদ্ভুতভাবে মস্কো, ওয়াশিংটন ও তেহরানকে একত্রিত করেছে। যারা একই দিকে কিন্তু ভিন্ন কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত কুর্দি গোষ্ঠীকে সমর্থন করে যা দায়েশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি উপাদান ছিল। তুর্কিয়ে প্রান্তিকে অবস্থান করছে। তার পুরো ভ‚খণ্ডের জন্য রাশিয়া স্থিতিশীলতা চাচ্ছে। কোনো সামরিক হামলা চালানোর জন্য মস্কো বা ওয়াশিংটনের কাছ থেকে তুরস্কের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কিন্তু একটি অদ্ভুত মোড়কে আঙ্কারার অবস্থান সিরিয়ার গণতান্ত্রিক বাহিনীকে আসাদের কাছাকাছি আনতে অবদান রেখেছে। এরদোগান স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে সুস্পষ্ট ছাড় এবং ওয়াইপিজির কার্যক্রমের ওপর বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণের জন্য দেখবেন। তবে এমন কিছুর ক্ষেত্রে আসাদের সামান্য প্রভাব রয়েছে এবং শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই কিছু আরোপ করতে পারে।
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলই একমাত্র এলাকা নয় যেখানে আসাদ তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলে মনে করে। আসাদ সরকারের দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতার ফোকাস পয়েন্ট হলো দামেস্ক বিমান বন্দর। প্রকৃতপক্ষে, তেলআবিব অত্যন্ত আগ্রাসী সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে। তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ার ভ‚খণ্ডে নাটকীয়ভাবে হামলা বৃদ্ধি করেছে এবং ইসরাইলি বিমান বাহিনী সিরিয়ার বিমানবন্দরকে প্রায়শই তাদের টার্গেটে পরিণত করে।
এটি একটি লক্ষণ যে, ইরান সিরিয়ার অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং সামরিক কর্মকাণ্ডে আরো বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষের ক্ষেত্রে এটি সরকারকে একটি মোড়কের মধ্যে ফেলেছে। আবারো বলছি, পরিস্থিতির ওপর আসাদের খুব কম নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এখনো একটি পারমাণবিক চুক্তির দিকে তাকিয়ে আছে; এটি একটি অস্পষ্ট ভারসাম্য উপস্থাপন করে। আসাদের কোনো প্রভাব নেই- এমন ইস্যুকে একের পর এক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে পারে কেউ। তবুও এটি তাকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি ভার্চুয়াল দর কষাকষির টুলবক্স প্রদান করে। সিরিয়ার মিত্র মস্কো ও তেহরানের মধ্যে গতিশীলতার মধ্যেও এটি স্পষ্ট। অনেক বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ইউক্রেনে জড়িত থাকার ফলে রাশিয়া সিরিয়ায় কম সম্পৃক্ত হতে সক্ষম হবে। মস্কোর সিরিয়া ও তুর্কির কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক প্রমাণ করে, এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়।
তবুও রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের গতিশীলতা সিরিয়ার শক্তি কেন্দ্রগুলোর মধ্যে প্রভাবের জন্য সহযোগিতামূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক উভয়ই। বর্তমানে তাদের সামরিক সহযোগিতার, প্রতিযোগিতাটি কম প্রাধান্য পেয়েছে এবং পরিস্থিতি পশ্চিমের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যফ্রন্টের চেয়েও বেশি। এটিও স্পষ্ট যে, ইরান সতর্কতা অবলম্বন করছে কারণ তারা এখনো প্রতিশ্রুত পরমাণু চুক্তি চায়।
কেউ অনুমান করতে পারে, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু শুধু উত্তরে ওয়াইপিজি এবং তুর্কিয়ের অবস্থান সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে নয়, সম্পর্ক সংশোধনের বিষয় নিয়েও। শেষ পর্যন্ত আসাদ এরদোগানের স্বীকৃতি চান। এটি পেতে তিনি কি প্রদান করতে পারেন? প্রকৃতপক্ষে সিরিয়ায় শাসনের জন্য আসাদের এরদোগানের স্বীকৃতি প্রয়োজন। এরদোগানই আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিরোধ-দ্বন্দ্বের প্রতি সমর্থন দিয়ে বিরোধীদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছিলেন। সুতরাং তুর্কি নেতার গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার অর্থ হলো এই- অতীত সমর্থন থেকে উপকৃত হওয়া সিরিয়ানদের আবার লাইনে ফিরে যেতে হবে।
মে মাসের নির্বাচনের আগে এরদোগান একটি বৈঠক চাইছেন- এমন জল্পনা অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। ওয়াইপিজি ফাইলের জন্য একটি পরিষ্কার সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত তুর্কি প্রেসিডেন্ট আলোচনা থেকে অভ্যন্তরীণভাবে সামান্য লাভবান হবেন। এই ফাঁস আরেকটি চতুর সিরিয়ান মিডিয়া বার্তা যা পরামর্শ দেয় যে, তুর্কিয়ে ‘জিজ্ঞাসা করছে’ এবং আসাদ নয়। বাস্তবতা হলো, এর বিপরীত। আসাদ এই স্বীকৃতির জন্য মরিয়া যা তার শাসনের প্রতি বিদেশী শত্রæতার অবসান ঘটাবে। নিজের জনগণের বিরুদ্ধে সিরিয়ার সরকারের নৃশংসতা ও বর্বরতা এই বাস্তবসম্মত চুক্তি করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে না। সিরিয়ার উদ্বাস্তুরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য যারা আরো বেশি দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারে। উত্তর সিরিয়ার পরিস্থিতি, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও ক্ষমতার মধ্যকার সম্পর্ক আসাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তথাপি, ঐতিহাসিকভাবে তার শাসনামল আঞ্চলিক ঘটনাবলি পরিবর্তনের সাথে ভাগ্যবান বা সুযোগসন্ধানী হয়েছে- যেগুলো তার পক্ষে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, দায়েশের আকস্মিক পুনরুত্থান এবং মিত্র তুর্কি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরান ও রাশিয়ার বিরোধিতা দামেস্ক সরকারের পক্ষে গেছে।
লেখক : আল ওয়াতান আল আরবির সম্পাদক ও ইউরিয়া নামক একটি মিডিয়া এবং টেক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, আরব নিউজের সৌজন্যে
ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার