বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি.

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নতুন শ্রমনীতির কারণে বাংলাদেশের ব্যক্তি পর্যায়ে বাণিজ্য বা ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ নিয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। কূটনৈতিক চ্যানেলে সরকারকেই এ বিষয়ে যা করার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্প মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সরকারের পাশে থাকতে হবে।

গতকাল সোমবার শ্রম ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর নয়া পল্টনে সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম নিয়েই বেশি আলোচনা হয়।

বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় গত ১৬ নভেম্বর প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম বা নতুন নীতিতে সই করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই দিনই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে তা প্রয়োগ করা হবে। গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সচিবকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ।

ইআরএফের সেমিনারে বিশিষ্ট বাণিজ্য বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধির আওতায় বাংলাদেশের ওপর সরাসরি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞায় কোনো বাধা নেই। শ্রম ইস্যুতে ব্যক্তি পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা কোন পর্যায়ে দেওয়া হতে পারে তা এখনও সুস্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, শ্রম ইস্যু নিয়ে প্রতিক্রিয়ামূলক না হয়ে আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সবকিছু সামাল দিতে হবে। ইপিজেডেও পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার সুযোগ রাখতে হবে। তিনি বলেন, শ্রমসংক্রান্ত বড় দুর্বলতা হচ্ছে শ্রম আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন না থাকা।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশের শ্রম পরিস্থিতি এত খারাপ অবস্থায় নেই যে সে জন্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে হবে। যদি সে ধরনের কিছু হয়, তা হবে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শ্রম অধিকারের কারণে নয়। কারণ কোনো ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে শ্রমিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাহলে এ ধরনের পদক্ষেপে মার্কিন উদ্দেশ্য কী তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন তা সরকার, মালিক, শ্রমিক– এই তিন পক্ষ মিলে সমাধান করতে হবে।

বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামিম এহসান বলেন, শ্রম অধিকারে অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। আড়াই হাজার কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, শ্রমিক নেতাদের একটা অংশ শিল্প বাঁচাতে কাজ করে, আরেকটা অংশ বিদেশ থেকে ডলার এনে নিজের স্বার্থ দেখে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতির দুটি দিক আছে। একটি পর্দার সামনে, অন্যটি পর্দার আড়ালে। কূটনীতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে।

বিজিএমইএর শ্রমবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আ ন ম সাইফুদ্দিন বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই নানা সমস্যা মোকাবিলা করে এগিয়েছে পোশাক খাত। এবারও মার্কিন শ্রমনীতি ইস্যু সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘যারা স্যাংশন দিতে চায়, তারা আইএলও কনভেশনের কয়টি রেটিফাই করেছে? তারা কোর কনভেনশনের বেশির ভাগই অনুমোদন করেনি। তারা যদি বলে, তোমার (বাংলাদেশের) শ্রম মান উন্নত নয়, তাহলে বলতে হবে, শ্রম মান নয়, তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।’

ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি তৌহিদুর রহমান বলেন, ব্যবসা ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটিও ভাবার বিষয়। চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হলো। হত্যাকাণ্ডের কেন তদন্ত হলো না, কেন বিচার হচ্ছে না? এ প্রবণতা বন্ধ না হলে রপ্তানি বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়বে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মিরধা। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

সমকাল