বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণে ঝুঁকছে সরকার

Dhaka Post

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩


বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণে ঝুঁকছে সরকার

বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণে ঝুঁকছে সরকার/ ছবি- টাকা ও লোগো

গত অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নেয় সরকার। ঋণের সিংহভাগ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে, নতুন অর্থবছরে বিপরীত পথে হাঁটছে সরকার। একদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের দিকে ঝুঁকছে, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের ( জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করেছে ২২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন- রেকর্ড ব্যাংক ঋণ সরকারের, ‘দেউলিয়াত্ব’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

রবি থেকে বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে চলতি বছরের জুন শেষে সেই ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর ৩১ আগস্টে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

আরও পড়ুন : ‘সংকটেও’ বাড়ছে ধনীদের হিসাব 

সবমিলিয়ে দুই মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ কমেছে ৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। জুন শেষে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।

১১ ব্যাংকের বেপরোয়া ঋণ, ‘ঝুঁকি’তে গ্রাহকের আমানত
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর একাংশ

তারল্য সংকটে পড়ে এখন ধার করে চলছে অনেক ব্যাংক। সম্প্রতি সময়ে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ধার নিচ্ছে। সাধারণভাবে ব্যাংকগুলোকে এত বেশি ধার নিতে দেখা যায় না। আমানত সংগ্রহ কমে যাওয়া এবং ঋণ আটকে থাকা এর বড় কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনতে বড় অঙ্কের টাকা পরিশোধ করাও অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিলে তারল্য সংকট আরও গভীর হবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।

আরও পড়ুন : শিথিলতার সুযোগে ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ ‘খেলাপিমুক্ত’

ব্যাংকাররা জানান, করোনা কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার বড় গ্রাহকদের একটি অংশ বছরের পর বছর ঋণ বাড়ালেও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এতে করে ব্যাংকের নগদ প্রবাহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

খোলা বাজারে ডলারের জন্য হাহাকার
ডলার ও টাকার লেনদেন

ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে গত দুই বছরে ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। যে কারণে ডলারের পাশাপাশি বাজারে টাকারও সংকট রয়েছে। অবশ্য বিকল্প উপায়ে বাজারে তারল্য বাড়ানো হয়েছে। তারল্য না বাড়ালে ডলারের মতো টাকা নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হতো।

গত অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। শেষ পর্যন্ত ঋণ না বেড়ে উল্টো কমে গেছে ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে জুন শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণস্থিতি নেমেছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।

আরও পড়ুন : ‘কৌশলে’ পরিচালন মুনাফা বাড়তি দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো

গত অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার রেকর্ড ঋণ নেয় সরকার। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

ব্যাংক খাত থেকে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ নি‌য়ে‌ছে সরকার
বাংলাদেশ সরকার

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদে দেখা যায়, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

বিবিএসের হিসাব বলছে, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে। এক দশকের মধ্যে গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়।

এসআই/এমজে