বাজেট সহায়তা বাবদ বিভিন্ন উৎস থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে কয়েক দফায় বড় অঙ্কের বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছে সরকার। জাপান, চীন ও কোরিয়ার মতো দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী দেশের কাছ থেকেও সহায়তা পাওয়া যাবে। চলতি পঞ্জিকা বছরের বাকি দুই মাসের মধ্যেই প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে যুক্ত হতে পারে। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৬০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার অনুমোদন হতে পারে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার কোটি টাকা।
ওয়াশিংটনে এখন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা চলছে। সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন। সভা চলাকালীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল আলাদাভাবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। এসব বৈঠক থেকে বাজেট সহায়তা এবং অন্যান্য ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তার মধ্যে আইএমএফ অনুমোদন দিতে পারে ৩০০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের ১৫০ কোটি ডলার ও এডিবির ১৩৫ কোটি ডলার দেওয়ার কথা রয়েছে। আইএমএফের ৩০০ কোটি ডলার চলমান সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে। সংস্থার এ সহায়তা আগের প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং দেশ থেকে বাড়তি সহায়তা চায় সরকার। এ মুহূর্তে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ কম নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ স্থানীয় উৎসের ঋণে একে তো সুদ বেশি, আবার সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ পেতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের আগ পর্যন্ত বিদেশি উৎস থেকে যত বেশি নমনীয় ঋণ নেওয়া সম্ভব, সেই কৌশল রয়েছে সরকারের। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বর্তমানের মতো নমনীয় সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না।
বাজেট সহায়তাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। রিজার্ভ সংকট কমবে। টাকা-ডলার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আসবে। যে উদ্দেশ্যে এ অর্থ ব্যবহার করা হবে, তার একটা সুফল আসবে অর্থনীতিতে। তবে যথাযথ এবং মানসম্পন্ন ব্যবহারে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ বাজেট সহায়তার অর্থও সুদাসলে পরিশোধ করতে হবে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে এডিবি নতুন করে আরও ২০ কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে, যা আগে দেওয়া ৪০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতির অতিরিক্ত। ঢাকায় এডিবির কান্ট্রি পোর্টফোলিও মিশনের (সিপিএম) সঙ্গে বৈঠকে এ সম্মতির কথা জানান সংস্থার কর্মকর্তারা। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাজেট সহায়তা আকারে এডিবির কাছে আরও বেশি ঋণ চাওয়া হয়।
সিপিএম বৈঠকে উপস্থিত ইআরডির একজন কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে এডিবির সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। সংস্থাটির ৬০ কোটি ডলার এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনীতির টেকসই এবং মসৃণ উত্তরণে ব্যবসা পরিবেশ উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের লজিস্টিকস সহায়তা বাড়াতে ব্যয় করা হবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধারে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
ইআরডির আমেরিকা-জাপান উইংয়ের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের বিদেশিদের কাছে ঋণ সহায়তা ছাড়া আর কী চাওয়ার আছে? আইএমএফের কাছ থেকে চলতি অর্থবছর আরও ১০০ কোটি ডলার পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ১৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ১০০ কোটি ডলার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ছাড় হতে পারে। এর মধ্যে ৭৫ কোটি ডলার ব্যয় হবে অর্থনৈতিক সুশাসন ও সংস্কার কর্মসূচিতে। বাকি ২৫ কোটি ডলার ব্যয় হবে এনবিআর ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সক্ষমতা উন্নয়নে।
তিন সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থা এবং দেশের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার বাইরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও ঋণ নিচ্ছে সরকার। এ অর্থবছরে ২৭৯ প্রকল্পের বিপরীতে এক লাখ কোটি টাকা ঋণ সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।