বাজার মূলধন কমলেই উধাও হয় না টাকা

প্রতীকী ছবিপ্রতীকী ছবি‘এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।’ কবি শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতার এ বর্ণনাটি পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন কমে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা চলে। কারণ, এই বাজার মূলধন কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে থাকেন। নিয়মিত বিরতিতে এ অবস্থা চলতে থাকলে আরও কমে যাওয়ার আতঙ্কে হাতের শেয়ার অনেকে কম দামেই ছেড়ে দেন। এ প্রবণতা শুধু গুটিকয়েক বিনিয়োগকারীকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না; বরং সার্বিক পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতাকেই নষ্ট করছে।

এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য রেখেছেন সচেতনতামূলক বার্তা ও পরামর্শ। তাঁরা বলেছেন, বাজার মূলধন আগের দামের চেয়ে কমে গেলেও তাতে বিনিয়োগকারীর টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে না, কিংবা সেই টাকা কেউ নিয়েও চলে যাচ্ছেন না। এটা শুধু নির্দিষ্ট একটি দিন বা সময়ের জন্য কমেছে, যা বাজার মূলধন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। তাই বাজার মূলধন কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না। আবার যাঁরা মূলধন কমে যাওয়ার ইস্যুতে বিনিয়োগকারীর টাকা উধাও হয়ে গেছে বলে নানা মাধ্যমে প্রচার করছেন, তাঁরাও ভুল ধারণা থেকেই তা করছেন, যা একদম ঠিক হচ্ছে না।

তথ্য বলছে, গত দুই মাসে পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন কমেছে ২৯ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা, যা গত ৮ আগস্ট ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। সেটি ৯ অক্টোবরে ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ সময়ে পুঁজিবাজারে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। এতে দরপতনের পাল্লা ভারী হওয়ায় বাজার মূলধনের এই অবনতি।

বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোম্পানির সব শেয়ারের দামের সমষ্টিই হলো কোম্পানির বাজার মূলধন। অর্থাৎ, কোনো কোম্পানির সব শেয়ারকে একটি শেয়ারের বাজারমূল্য দিয়ে গুণ করলে যে মূল্য দাঁড়ায়, সেটিই ওই কোম্পানির বাজার মূলধন। একইভাবে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির বাজার মূলধনের যোগফলই হলো একটি পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজার মূলধন কমা আর উধাও হওয়া এক জিনিস নয়। মূলধন কমা মানে হলো বাজারে শেয়ারের যে দাম আগে ছিল, সেটা এখন নেই। একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধরা যাক, একটা ভবনে ১০টি ফ্ল্যাট আছে। ১ কোটি করে ১০ কোটি টাকায় ১০ জন কিনলেন। তাহলে ভবনের দাম হলো ১০ কোটি। এটিই হলো ওই ভবনের বাজার মূলধন। পরে বাজারে ফ্ল্যাটের চাহিদা তৈরি হওয়ায়  প্রতিটির দাম বেড়ে হলো দেড় কোটি টাকা। ফলে বাজার মূলধন দাঁড়াবে ১৫ কোটি টাকা। যদি এর চাহিদা আরও বেড়ে প্রতি ফ্ল্যাটের দাম ২ কোটি হয়, তাহলে বাজার মূলধন হবে ২০ কোটি টাকা।
একইভাবে টাকা কমে যাওয়ার ভিত্তিটা ঠিক উল্টো। ধরা যাক, ফ্ল্যাটমালিকদের মধ্যে একজনের টাকা দরকার। তিনি দেড় কোটি টাকায় তাঁর ফ্ল্যাট বিক্রি করলেন। সবাই ফ্ল্যাট বিক্রি করেননি। কিন্তু তারপরও ওই একটি ফ্ল্যাটের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এখন পুরো ভবনের বাজার মূলধন হবে ১৫ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে যদি আরও একজনের টাকা দরকার, সে সময় যদি মন্দা থাকে এবং তিনি ১ কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেন, তাহলে বাজার মূলধন দাঁড়াবে ১০ কোটি। এ ক্ষেত্রেও সবাই কিন্তু ফ্ল্যাট বিক্রি করেননি এবং তিনিও লোকসান করেননি। কারণ, যে দামে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, সে দামেই বিক্রি করলেন। তবে বাজার মূলধন ঠিকই কমেছে। পরবর্তীতে যদি ফ্ল্যাটের চাহিদা বেড়ে যায় এবং কেউ যদি ৩ কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেন, তাহলেও ফের ওই পুরো ভবনের বাজার মূলধন বেড়ে ৩০ কোটি টাকা হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহমদ রশিদ লালী বলেন, বাজার ওঠানামার সঙ্গে মূলধনের সম্পর্ক। বাজারে পতন হলেই বাজার মূলধন কমে। টাকা কেউ নিয়ে চলে যান না বা কোথাও পাঠিয়েও দেন না।

মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশেকুর রহমান বলেন, একজন ৭০ টাকার শেয়ার ৫০ টাকায় বিক্রি করলে অন্য কেউ টাকা নিয়ে যান না। যাঁর শেয়ার, তিনিই টাকা পান। তবে শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় বাজার মূলধন কমে যায়।

Ajker Patrika

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here