গতকাল বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে পঞ্চম দিনের শুনানিতে এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ রুল সমর্থন করে। তবে আমরা পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চাই না। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বলেছি। এ সংশোধনীতে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস, ফ্যাসিজম দীর্ঘায়িত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত ও সংবিধানের সুপ্রিমেসি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এটি প্রতারণার শামিল।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে জনগণ ও গণতন্ত্রের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। রায়ের জন্যও অপেক্ষা করেনি। ১২৩ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য বহাল রেখে আবার নির্বাচন করা অবৈধ। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত। পঞ্চদশ সংশোধনী রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থান ও ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
জাতির পিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ওনার (শেখ মুজিবুর রহমানের) অবদান অনস্বীকার্য। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনেক ওপরের মানুষ। কিন্তু একজন ব্যক্তি সব কিছু করেছেন– এটি আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার ধারণা নয়।’
গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না– তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ রুল জারি করেন। ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়।
গতকাল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘গণভোটের বিধান পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ বিধান ফের বহাল চাই। যারা নিশিরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন, তাদের ভোটে এ বিধান বাতিল হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র নয়। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ চাই। মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান কেউ অস্বীকার করে না। তবে জাতির পিতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতার নাম ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে জোর করে ঢুকিয়ে এমন করা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে। শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থি।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না। ৮ অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ রাখার দরকার নেই। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা আগে যেভাবে ছিল, সেভাবে চাচ্ছি। তা ছাড়া ২ (ক) তে বলা আছে, সব ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ৯-এ বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে, এটি সাংঘর্ষিক।’
অ্যাটর্নি জেনারেলের পর জামায়াতের পক্ষে আইনজীবী শিশির মুনির আদালতে বক্তব্য শুরু করেন। এর পর মুলতবি হয়ে যায় আদালত। আজ বৃহস্পতিবার আবারও শুনানি হবে।
samakal