বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার তামাশা
বিভিন্ন ইস্যু কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাই যেন ভারতীয় মিডিয়ার নিয়মে পরণত হয়েছে। গত জুনে চীনের সাথে ভারতের উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন ভারতীয় মিডিয়ায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘লাদাখের পরে ঢাকাকে পাশে টানছে বেইজিং’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের বাণিজ্য সুবিধাকে ‘খয়রাতি’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে তাচ্ছিল্য করেছিল আনন্দবাজার পত্রিকা। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাধারণ মানুষের সেই প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে, ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চায় বাংলাদেশ-বিদ্বেষী ওই পত্রিকাটি। তবে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটলেও রহস্যজনক কারণে সরকার এবং অন্যান্য রাজনীতিকরা নীরব ছিলেন এই ঘটনায়।
পশ্চিম বাংলার বিতর্কিত আনন্দবাজার পত্রিকাটির বিরুদ্ধে অবশ্য ঐতিহাসিকভাবেই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
আর এবার ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ-এর অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে তামাশামূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেয়া ভারতীয় কুকুর ও ঘোড়া নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অত্যন্ত হেয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। তাদের ভাষায় ভারত কুকুর-ঘোড়া দান করে নাকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে কুকুর-ঘোড়া প্রসঙ্গ এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের কুকুর-ঘোড়ার উপরই নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, হিন্দুদের দীপাবলী উৎসবকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঘোড়া-কুকুর উপহার দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারত।
এনিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ তীব্র কটাক্ষ করে ‘দীপাবলীর উপহার! হাসিনার দেশের সেনাশক্তি বাড়ালো মোদীর ভারত’ এই শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে।
সেখানে তারা লিখেছে, “বাংলাদেশের হাতে ২০টি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়া এবং ১০টি বোমা অনুসন্ধানকারী কুকুর তুলে দিল ভারতীয় সেনা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়া এবং কুকুরগুলিকে অত্যাধুনিক পর্যায়ে ট্রেনিং দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এমনকি সেই ঘোড়া এবং কুকুরগুলিকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে তার জন্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভারতীয় সেনা। ভারতের এই উপহারে নিঃসন্দেহে উপকৃতই হল বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশ সেনার শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পেল।”
মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। কিন্তু, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় ভারতপন্থি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল ঐতিহ্য ম্লান করে দিয়েছে। পিলখানায় সৈনিকদের বিদ্রোহে এই বাহিনীর ৫৪ জন চৌকষ অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করেন, সেনাবাহিনীতে ভারতবিরোধী অফিসারদের নির্মূল করতেই রক্তাক্ত সেই সেনা বিদ্রোহে মদদ দিয়েছিলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিচার্স এন্ড এনালাইসস উইং বা র’। আর তাদের সেই ঘৃণ্য পরিকল্পনায় ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছিলো বাংলাদেশের বিপথগামী কিছু সৈনিক। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের বেআইনীভাবে ক্ষমতা দখলে মদদ দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভাবমূর্তি এখন তলানীতে ঠেকেছে।
হিন্দুদের দীপাবলি উৎসবে কুকুর-ঘোড়া উপহার দেয়া প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ জানান, বন্ধুত্বের ছলে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবে কুকুর-ঘোড়া উপহার দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতর পরোক্ষভাবে হিন্দুত্ববাদের প্রসার ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এখন সাংস্কৃতিকভাবেও পরনির্ভর্শীল করে ফেলা হচ্ছে।
ফলে হিন্দুদের রাখী উৎসবে এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর সদস্যরাও হিন্দু বিএসএফ এর সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। বিজিবি’র নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বিএসএফ-এর সাথে যৌথভাবে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদের সংস্কৃতির চর্চা কৌশলে ঢুকানো হচ্ছে দেশে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সেনাবাহিনী ও বিজিবির মধ্যে হিন্দুত্ববাদের বীজ বিভিন্ন ছলে-কৌশলে প্রবেশ করানো হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বিলুপ্ত বিডিআর-এর সীমান্ত রক্ষায় ছিল গৌরবোজ্জল ভুমিকা। ২০০১ সালে রৌমারি যুদ্ধ থেকে শুরু করে অতীতে সীমান্তে কোন যুদ্ধেই ইন্ডিয়া বিজয়ী হতে পারেনি। অথচ, এই সেনাবাহিনীকেই নাকি এখন ইন্ডিয়া কুকুর-ঘোড়া দিয়ে শক্তিশালি করে দিচ্ছে।