বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায় না কোনো ব্যাংক বন্ধ হোক। তবে অনেক ব্যাংক আগেই দেউলিয়া পর্যায়ে চলে গেছে। এসব ব্যাংক ঠিক করতে পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকে কারিগরি, আইনগত ও তারল্য সহায়তা দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১০টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়েছে। দ্রুত এসব ব্যাংক ঠিক হয়ে আসবে বলে আশা করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে এসব ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক ধার দেওয়া হবে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে দুই ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নর বলেন, পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা ১০ ব্যাংকের দৈনিক ভিত্তিতে নগদ প্রবাহ, জমা ও উত্তোলন, প্রবাসী রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরতে শুরু করায় আমানত বাড়তে শুরু করেছে। মানুষের আস্থার কারণে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানত বীমা তহবিল থেকে এতদিন সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা দেওয়া হতো। এখন থেকে দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা। এতে ৯৪ দশমিক ৬০ শতাংশ আমানত হিসাবধারী শতভাগ টাকা ফেরত পাবেন। এর মানে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সবার টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত বেশি আমানত বীমা কাভারেজ নেই। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানত বীমা তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়। বাকি অর্থ ওই ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক খাতের জন্য তিনটি টাস্কফোর্স আগামী ১০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবে। ব্যাংক খাত সংস্কার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী করা এবং সম্পদ আদায়ের জন্য এসব টাস্কফোর্স কাজ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এসব টাস্কফোর্স গঠন হবে।
তিনি জানান, ঋণ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠনসহ অনেক ক্ষেত্রে কয়েকজনকে সুবিধা দিতে বিভিন্ন নীতিমালা করা হয়েছে। প্রতিটি নীতিমালার পর্যালোচনা হচ্ছে। তবে দেখা যাবে, প্রভাবশালীদের অনেকে দেশে নেই। তাদের কেউ কেউ খেলাপি হয়ে গেছেন।
গভর্নর বলেন, সিএমএসএমই খাতের অনেকেই ঋণ পাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পড়ে আছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়নি
গভর্নর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা বিএফআইইউ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি। করা হবেও না। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংক চায় সব প্রতিষ্ঠান চালু থাকুক। উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়। কেউ যেন কর্মসংস্থানহারা না হয়। অথচ কোনো কোনো জায়গায় অপপ্রচার করা হচ্ছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হলেও সাধারণভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়নি। তবে ৬ ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি বা স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও বাংলাদেশ কমার্স। এসব ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট নামে-বেনামে থাকা আমানত, ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড বিনিয়োগসহ সব ধরনের হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ। তার নামে বা বেনামি প্রতিষ্ঠানকে নতুন বিনিয়োগ সুবিধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এই ৬ ব্যাংকের বাইরে অন্য ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের লেনদেনে কোনো সমস্যা নেই।
এক প্রশ্নের উত্তরে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এস আলমসহ বড় সব ঋণখেলাপির সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। তাদের কোথায় কী সম্পদ আছে, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এখন কেউ যদি এস আলমের সম্পদ কেনে, তা যেন নিজ দায়িত্বে কেনে।
samakal