বাংলাদেশ-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক, উভয়ের স্বার্থে উষ্ণতা দরকার

logo

প্রকাশ : শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২১:০৪

দু’টি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় পারস্পরিক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে। যেখানে যার পাওনা বেশি ও সুবিধা রয়েছে সেখানে তারা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে পুরো উল্টো ঘটনা। যারা এ দেশকে শত্রু গণ্য করে আর পদে পদে বঞ্চিত করে তাদের আমরা বন্ধু বানিয়ে রেখেছি। যারা আমাদের ভালো করতে চায় ও উপকারী, তাদের আমরা শত্রু তকমা দিয়ে রেখেছি। ফলে বন্ধুবেশী শত্রুরা দেশের জন্য সমূহ ক্ষতির কারণ হয়েছে। অন্য দিকে যে বন্ধু সাহায্য করবে সে কাছে ঘেঁষতে পারেনি। এমন একটি দেশ পাকিস্তান, যাকে বিগত সরকার একপ্রকার নিষিদ্ধ করে রেখেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার পররাষ্ট্রনীতি উন্মুক্ত করার পর পাকিস্তানের সাথে নতুন করে সম্পর্কের দ্বার খুলেছে। উপমহাদেশে অন্যতম প্রভাবশালী পরমাণু শক্তিধর এ দেশ বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে। ২৩ আগস্ট দুই দিনের সফরে আসছেন দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। আশা করা যাচ্ছে, দু’দেশের মধ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সমস্বার্থের বিষয়গুলো উভয়ের মধ্যে আলোচিত হবে। তার আগে ২১ আগস্ট দুই দিনের সফরে আসছেন সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। তার সফরের আগেই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সমঝোতা হয়েছে।

খেয়াল রাখতে হবে, এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি এমন অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান উভয়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। ইচ্ছা করলেও দেশ দু’টি একে-অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার কোনো ভিত্তি নেই। তবে বন্ধুত্ব তৈরি করে উভয়ের স্বার্থ রক্ষার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় এ সম্পর্ক অত্যন্ত কার্যকর হবে। অন্যায্য প্রভাব ও আগ্রাসন মোকাবেলায় একসাথে উভয়ে কাজ করতে পারবে। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে নানা ধরনের বাধা তৈরি করা হয়। জুলাই বিপ্লবের আট মাস পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফর করেন।

ওই সফরে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ততটা তাগিদ আমরা দেখাইনি; বরং দেখা গেল, এমন সব পুরনো বিষয় সামনে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে- যাতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া ব্যাহত হয়। হাসিনার সময়কালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত বয়ানের ধারাবাহিকতা ছিল সেটি। স্বাধীন হওয়ার সময় দেশটি আমাদের সাথে যে অন্যায় করেছে তার সমাধান সবাই চাই। এমনকি সেটি পাকিস্তানও চায়। দেশটির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন ফোরামে তা স্বীকার করেছেন। এ অবস্থায় ওই বয়ানকে দেশ দু’টির মধ্যে সম্পর্ক নষ্টে আর ব্যবহার করতে দেয়া যায় না। কারণ এটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, যাতে স্পষ্টত লাভবান তৃতীয় একটি পক্ষ।

হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপর বাংলাদেশের বন্ধু ও শত্রুও চেনা গেছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন দেশ ও পাকিস্তান ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে। এ অবস্থা শুধু মেনে নিতে পারেনি ভারত। দিল্লি অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে অব্যাহত অপপ্রচারে লিপ্ত। এ অবস্থায় আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে দেশের ভেতর থেকে কেউ যেন অন্তর্ঘাতমূলক পদক্ষেপ নিতে না পারে। সেই সাথে কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র পাশ কাটিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নে যেন দেশের বেশির ভাগ মানুষের মনোভাব সর্বাধিক গুরুত্ব পায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here