ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিত আদানির গড্ডা কেন্দ্রটিতে পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে গত বছর জুনে। কয়লা সংকটে কয়েকদিন উৎপাদন কম হলেও বাকি সময় পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে কেন্দ্রটি। এতে কেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে কোম্পানিটি। এ বিদ্যুৎ বিল বাবদ এক বছরে এক দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাবে আদানি, যা কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণব্যয়ের চেয়েও বেশি।
সূত্র জানায়, ডলার সংকটে আদানির বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এখনও চার মাসের বিল জমে আছে। তাই আদানির গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য এক দশমিক ১২ বিলিয়ন বা ১১২ কোটি ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪১৫ ডলার পরিশোধে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত এক বছরের বিল পরিশোধে এ ডলার ব্যবহার করা হবে। সোনালী ব্যাংকের ওয়াপদা শাখার মাধ্যমে এ বিল পরিশোধ করা হবে। এজন্য এরই মধ্যে এলসি খোলা হয়েছে।
এ-সংক্রান্ত একটি হিসাবও শেয়ার বিজের হাতে এসে পৌঁছেছে। এতে দেখা যায়, এক বছরে আদানি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে জ্বালানি বিল দেয়া হবে ৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৯২ ডলার। আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হবে ৪৫ কোটি ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ ডলার। তবে আদানির বিদ্যুৎ বিল কিনতে প্রতি বছরই কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যমতে, গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত আদানির বিদ্যুৎ বিল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৪ কোটি পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৪ ডলার। এর মধ্যে জ্বালানি বিল ছিল ১৪ কোটি দুই লাখ ৮৯ হাজার ১২৩ ডলার ও ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে ১০ কোটি দুই লাখ ৬০ হাজার ৪১২ ডলার। আর সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত বাকি ৯ মাসের জন্য পরিশোধ করতে হবে ৮৮ কোটি আট লাখ ২৬ হাজার ৮৮১ ডলার। এর মধ্যে জ্বালানি বিল ৫২ কোটি ৪৪ লাখ ৪৬ হাজার ১৬৯ ডলার ও ক্যাপাসিটি চার্জ ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ৭১৩ ডলার।
সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, আদানির বিল পরিশোধে এক দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড় করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ প্রস্তাবে অনুমোদনও দিয়েছে। পিডিবি থেকে মাসিক বিল দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিল পরিশোধ করা হবে।
পিডিবি সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের বিল জমা দিয়েছে আদানি। এতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে আদানিকে বিল দিতে হবে ১০ কোটি চার লাখ ৩৪ হাজার ডলার, অক্টোবরে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ডলার, নভেম্বরে ৯ কোটি আট লাখ ৪৭ হাজার ডলার ও ডিসেম্বরে ৯ কোটি ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ডলার। এছাড়া জানুয়ারির বিল দাঁড়াতে পারে ৯ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ডলার।
এর বাইরে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আদানির সম্ভাব্য বিল প্রাক্কলন করেছে পিডিবি। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির বিল দাঁড়াতে পারে আট কোটি ৭৪ লাখ ৩১ হাজার ডলার, মার্চে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ডলার, এপ্রিলে ১০ কোটি ২৬ লাখ ৭৪ হাজার ডলার ও মে মাসে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ডলার। তবে বিদ্যুৎ যে পরিমাণই কেনা হোক প্রতি মাসে আদানিকে তিন কোটি ৯৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৭ ডলার করে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে।
প্রসঙ্গত, আদানির গড্ডা কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে প্রতি বছর কেন্দ্রটির সক্ষমতার কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনতেই হবে। তবে বিদ্যুৎ যে পরিমাণই কেনা হোক মাসে প্রায় চার কোটি ডলার হিসেবে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এতে ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদই ব্যয় হবে প্রায় ১১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।
share biz