বাংলাদেশে বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে বাকযুদ্ধ টানাপোড়েন কেন?
বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে প্রধান বিচারপতি এবং নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন অংশ থেকে পরস্পরকে লক্ষ্য করে করা কিছু মন্তব্য নিয়ে পত্র-পত্রিকা সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনা-বিতর্ক হচ্ছে।
সরকার কয়েক-দফা সময় নিয়েও নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি-বিধির গেজেট প্রকাশ করেনি -সে প্রসঙ্গ তুলে গত মাসে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, বিচারবিভাগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে পাশ কাটানো হয়েছে। বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক, আমলারা তা চায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন।
পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সরাসরি বলেন — এর আগে আর কোন প্রধান বিচারপতি এত কথা বলেননি।
দেশের সিনিয়র আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, এসব কথাবার্তা শুনে দু’পক্ষের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে একটা টানাপোড়েন চলছে বলে মনে হয়।
সিনিয়র আইনজীবী ড: শাহদ্বীন মালিক বিবিসিকে বলেন, “নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিমকোর্টের কাছে ন্যস্ত করার যে ব্যাপারটা, সেটা সরকার করছে না। সেকারণে হয়তো প্রধান বিচারপতি বার বার তা বলছেন। আমার মনে হয়, সেটারই বহি:প্রকাশ হচ্ছে।”
আরও পড়ুন:
ভ্যাট নিয়ে সরকার ও ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি কেন?
ওবামাকে দুবার প্রত্যাখ্যান করেন যে নারী
তবে বিচারবিভাগ নিয়ে এই তর্ক-বিতর্কের পেছনের কারণ হিসেবে ভিন্ন বিষয়কে উল্লেখ করেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
“৭২ এর সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। খন্দকার মোশতাকের সামরিক শাসন জারির ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক ফরমান জারি করে তা সংশোধন করে বলা হলো, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিচারপতিদের অপসারণ করবে।এখন আওয়ামী লীগ সরকার সংসদের হাতে পুরনো সেই ক্ষমতা দিয়ে ষষ্ঠদশ সংশোধনী আনে।তা চ্যালেঞ্জ হওয়ায় হাইকোর্ট অবৈধ করে। এখন সেটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে।এটা নিয়েই বিচারবিভাগের অনেকের অহেতুক একটা ভয় আছে যে, পার্লামেন্ট হাত তুলেই তাদের বিদায় করে দেবে।”
তবে দু’পক্ষের কথাবার্তায় যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেটাকে সংকট হিসেবে দেখতে রাজি নন সিনিয়র আইনজীবীদের অনেকেই।
ড: শাহদ্বীন মালিক বলেন, “বিচারবিভাগের সাথে নির্বাহী বিভাগের টানাপোড়েন কিছুটা থাকে আমাদের মতো দেশগুলোতে।কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। এটা কোন সংকট নয়।”
তিনি বলেন, এ ধরণের বিতর্ক নিম্ন আদালতের পুরো নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিমকোর্টের কাছে ন্যস্ত করার ব্যাপারে সরকারের উপর একটা চাপ তৈরি করছে।
Source: BBC Bangla