বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। উপরন্তু এ দেশের রয়েছে অভ্যন্তরীণ বড় একটি বাজার ও স্বস্তা শ্রম। এরপরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে খুব একটা চমক দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। কয়েক বছর ধরে গতানুগতিক ধারাতেই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে দেশে। তবে গত বছর এফডিআই প্রবাহ ও এফডিআই স্টক কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশে এফডিআই এসেছে ৩ দশমিক ০০৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে এসেছিল ৩ দশমিক ৪৭৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত বছর দেশে এফডিআই প্রবাহ কমেছে ৪৭৪ মিলিয়ন ডলার। আর গত বছর শেষে দেশে এফডিআই স্টক দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৪৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সাল শেষে তা ছিল ২০ দশমিক ৭৫৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত বছর এফডিআই স্টক কমেছে ২০৬ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এ দুই দেশের বিনিয়োগ (এফডিআই স্টক) তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের তালিকায় নেই প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটির ব্যবসায়ী ও শিল্প গ্রুপগুলো মিলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগও করেনি বাংলাদেশে। অথচ ভারতের বিভিন্ন বড় শিল্প গ্রুপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। এরপরও বাংলাদেশে এফডিআই স্টক সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রের, যার পরিমাণ প্রায় তিন দশমিক ৯৩৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে সিংহভাগ বিনিয়োগ এসেছে, যার পরিমাণ ২ দশমিক ৮৬১ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া বিমা খাতে ২৬৮ মিলিয়ন ডলার, ব্যাংক খাতে ২১৪ মিলিয়ন, বিদ্যুতে ১৪৬ মিলিয়ন, টেক্সটাইলে ১৪০ মিলিয়ন ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতে (এনবিএফআই) ১৩২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে বর্তমানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ যুক্তরাজ্যের। যদিও দেশটি থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিনিয়োগ আসার প্রবণতা বেড়েছে। ২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের এফডিআই স্টকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ০৪২ বিলিয়ন ডলার। দেশটির এ দেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ব্যাংক খাতে, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৫৮২ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে টেক্সটাইল খাতে ৬১৪ মিলিয়ন ডলার, খাদ্যে ৩৫৯ মিলিয়ন, কেমিক্যাল খাতে ১৪৭ মিলিয়ন, বিদ্যুৎ খাতে ১৩৭ মিলিয়ন ও অন্যান্য সেবা খাতে ১১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য।
তৃতীয় স্থানে থাকা সিঙ্গাপুরের এফডিআই স্টক বাংলাদেশে ১ দশমিক ৫৫৮ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ খাতে দেশটির সর্বোচ্চ বিনিয়োগ রয়েছে, যার পরিমাণ ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া অন্যান্য সেবা খাতে সিঙ্গাপুরের এফডিআই স্টক ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মধ্যে টেলিযোগাযোগ খাতে দেশটির এফডিআই স্টক রয়েছে ২৫৪ মিলিয়ন ডলার, টেক্সটাইল খাতে ১২৩ মিলিয়ন এবং কৃষি ও মৎস্যে ১০৪ মিলিয়ন ডলার।
দক্ষিণ কোরিয়ার এফডিআই স্টক এ দেশে ১ দশমিক ৪৯৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ বা ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারই রয়েছে টেক্সটাইল খাতে। এর বাইরে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে এবং ১৩৯ মিলিয়ন ডলার ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ করেছে দেশটি। পঞ্চম স্থানে থাকা চীনের বিনিয়োগ এ দেশে ১ দশমিক ৩৭৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৭৫৮ মিলিয়ন ডলার, অন্যান্য সেবা খাতে ২৮৬ মিলিয়ন ডলার ও টেক্সটাইল খাতে ২১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে এফডিআই স্টকের দিক থেকে পরের স্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ডস, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৩২৯ বিলিয়ন ডলার। দেশটি সর্বোচ্চ ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে খাদ্য খাতে। এছাড়া অন্যান্য সেবা খাতে ২৮৬ মিলিয়ন ডলার ও টেক্সটাইল খাতে ২১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। এফডিআই স্টকের দিক দিয়ে সপ্তম স্থানে থাকা হংকংয়ের এ দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ দশমিক ২৭৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে টেক্সটাইল খাতে ৬৩৯ মিলিয়ন ডলার, বিদ্যুতে ২২০ মিলিয়ন, অন্যান্য সেবা খাতে ১৬০ মিলিয়ন ও ব্যাংক খাতে ১০৯ মিলিয়ন এফডিআই স্টক রয়েছে।
পরের স্থানে থাকা দেশগুলোর বিনিয়োগ এক বিলিয়ন ডলারের কম। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার এফডিআই স্টক বাংলাদেশে ৮৫৬ মিলিয়ন ডলার, ভারতের ৭৮২ মিলিয়ন, অস্ট্রেলিয়ার ৬৫০ মিলিয়ন, জাপানের ৫৩৪ মিলিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৪৪৮ মিলিয়ন, শ্রীলঙ্কার ৪০৩ মিলিয়ন, নরওয়ের ৩৮০ মিলিয়ন, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের ৩৬৯ মিলিয়ন, থাইল্যান্ডের ২৭১ মিলিয়ন, মৌরিতানিয়ার ২৫৬ মিলিয়ন, তাইওয়ানের ২০১ মিলিয়ন, কানাডার ১৯৯ মিলিয়ন, পাকিস্তানের ১৯৭ মিলিয়ন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৯৯৭ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, খাতভিত্তিক এফডিআই স্টকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে টেক্সটাইল খাতে, যার পরিমাণ ৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাতে ৩ দশমিক ৭৬৮ বিলিয়ন ডলার, ব্যাংক খাতে ২ দশমিক ৭০৬ বিলিয়ন, বিদ্যুৎ খাতে ২ দশমিক ৫৩৪ বিলিয়ন এবং টেলিযোগাযোগ খাতে ১ দশমিক ৩২৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে।
বাকি খাতগুলোয় বিনিয়োগ রয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে। এর মধ্যে খাদ্য খাতে ৯০০ মিলিয়ন ডলার, বাণিজ্য খাতে ৫৫৫ মিলিয়ন, কেমিক্যাল ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতে ৫১৬ মিলিয়ন, কৃষি ও মৎস্য খাতে ৩২৫ মিলিয়ন, চামড়া ও চামড়াজাত খাতে ৩০১ মিলিয়ন, নির্মাণ খাতে ২৭৬ মিলিয়ন, এনবিএফআই খাতে ২৭০ মিলিয়ন, সিমেন্ট খাতে ২২৩ মিলিয়ন, সার খাতে ১৬১ মিলিয়ন এবং অন্যান্য সেবা খাতে ২ দশমিক ৩৬৬ বিলিয়ন ডলার এফডিআই স্টক রয়েছে।
উপরোল্লিখিত খাতগুলোর মধ্যে টেক্সটাইল খাতে সর্বোচ্চ এফডিআই স্টক দক্ষিণ কোরিয়ার। এরপর রয়েছেÑহংকং, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, চীন, ভারত, মৌরিতানিয়া ও শ্রীলঙ্কা। গ্যাস ও তেল খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের। এরপর রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ। ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ যুক্তরাজ্যের। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়ের। বিদ্যুতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ চীন ও সিঙ্গাপুরের। এছাড়া হংকং, নেদারল্যান্ডস, ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে টেলিযোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ মালয়েশিয়া ও নরওয়ের। এছাড়া সিঙ্গাপুরের কিছুটা বিনিয়োগ রয়েছে এ খাতে।
sharebiz