বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসায় পরিবারের সদস্যদের শান্ত্বনা জানানোর পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুপুর নিউ ইস্কাটনে প্রয়াত শফিউল বারী বাবুর বাসায় গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বাবুর স্ত্রী বিথীকা বিনতে হোসাইনের সাথে কথা বলে সমবেদনা জানান। বাবুর ছোট দুই ছেলে-মেয়ে ফাতেমা বারী তুহিন ও আয়হান বারী সাঈদকে কাছে নিয়ে আদর করেন মির্জা ফখরুল।বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাবুর (শফিউল বারী বাবু) এভাবে মৃত্যু-এটা আরেকটা সত্য উৎঘাটিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর। এখানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি যে মানুষ আস্থা রাখতে পারে না-বাবুর অসুস্থতা, তা চলে যাওয়া এটাই প্রমাণ করে।
অনেকে অভিযোগ করে যে, বাংলাদেশের মানুষেরা বাইরে চিকিৎসা করতে যায় কেন? এজন্য যায় যে, এখানে আপনার ডায়াগনোসিস করা সম্ভব হয় না, ডায়াগনোসিসে সমস্যা হয়, বিভিন্নভাবে। সমস্ত ব্যবস্থাটা ইট সেলফ রোগীদের জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে, সকাল সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আাবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, আকরামুল হাসান, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
রুহুল কবির রিজভী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাবুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, এখন চারিদিকে যে দুর্দিন চলছে, এই দুর্দিনে শফিউল বারী বাবুও সামনের কাতারে থাকতো। দুর্দিনের একজন বলিষ্ঠ সিপাহশালাকে আন্দোলনের কাফেলা থেকে আমরা হারালাম।
আমাদের চলমান এই আন্দোলন, এখনো গণতন্ত্র ফিরে আসেনি, এখনো কর্তৃত্ববাদী শাসন, এখনো গুমের আতঙ্ক, এখনো মিথ্যা মামলার আতঙ্ক, এখনো যে কোনো সময়ে ক্রসফায়ারের আতঙ্ক। এই আতঙ্কের মধ্যে যে সমস্ত নির্ভিক তরুণ, উদ্দীপ্ত তরুণ মিছিলের সামনে থাকতো তার মধ্যে বাবু (শফিউল বারী বাবু) একজন। আমাদের মাঝে সেই বাবু নেই। তবে আমরা সব সময় তাকে স্মরণ করবো।
পরে বাবুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ক্কারী রফিকুল ইসলাম।
শফিউল বারী বাবুকে ‘মেধাবী’ নেতা হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাবুর মতো একজন জনপ্রিয়, সচেতন রাজনৈতিক নেতা এভাবে চলে যাবে এটা আমরা কল্পনাই করতে পারিনি। তার অল্প সময়ের জীবনের ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য। তাকে শুধু বিএনপির জন্য নয়, তাকে দেশের মানুষের জন্য, মানুষের জন্য প্রয়োজন ছিল। হি হেভ অল দ্যা কোয়ালিটিজ, তার সম্ভাবনা ছিল। তিনি এদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা ব্যতিক্রম। আমি কিছুক্ষণ আগে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলাম- দুইটা বাচ্চা রেখে গেছে। মাথা গুজার ঠাঁই টুকু নাই। এখনো ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্ত্রীও কাজ করছিল একেবারে। এখন তাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমার একটাই অনুরোধ থাকবে আমার সকলের কাছে- তার পরিবার, স্ত্রী-সন্তানদের আমাদের নিজেদের মানুষ মনে করে আমরা যেন এগিয়ে আসি এবং সহযোগিতার হাত বাড়াই।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনি আমাকে বলেছেন যে, তার সাথে দেখা করে বলেন, আমরা তার সঙ্গে আছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও বলেছেন, বলবেন, আমি আছি তার সঙ্গে। আমরা সবাই তার সঙ্গে আছি, এই লড়াই শুধু তার স্ত্রী একা লড়বে না, তার সাথে আমরাও লড়বো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহ বাবুর বেহেস্ত নসিব করুক। তার স্ত্রী ও সন্তানদের এই শোক সহ্য করবার ক্ষমতা দিক, বাবু চলে যাওয়ায় আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা যেভাবে ভেঙে পড়েছে। আল্লাহ তাদের শোক সহ্য করবার শক্তি দিক।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আরও ছিলেন বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত