- প্রফেসর সারওয়ার মো: সাইফুল্লাহ খালেদ
- ০৬ মে ২০২২, ২১:৪৬
২০ ডিসেম্বর ১৯৯৫ ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত একটি খবর থেকে এ নিবন্ধের সূত্রপাত। খবরটির শিরোনাম : ‘উপদেষ্টা পরিষদের নানান দিক নিয়ে আলোচনা- কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার’। ‘একটি সূত্র জানায়, কূটনীতিকরা উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান হিসেবে একজন বিশিষ্ট আইনজীবীর নামোল্লেখ করেছেন’। খবরটি পড়ে মনে হলো আজকের বাংলাদেশে ১৭৫৭ সালের হাওয়া বইছে। না। কোনো রাজা বাদশাহ বা নবাব বাংলাদেশের অধীশ্বর নন এখন। সেই ‘গান পাউডার’-এর যুগও আজ নেই। পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে এসেছে এত দিনে। গণতন্ত্রের যুগ, আণবিক বোমার যুগ এটি। মহাদেশে মহাদেশে এখন স্বাধীন দেশ এবং দেশে দেশে গণতন্ত্র- এর মাত্রাগত ও গুণগত তারতম্য যাই থাক না কেন। রাজতন্ত্র কোথাও কোথাও আছে তবে সেই সাবেকি লেবাসে আজকের দুনিয়ার দু-একটি দেশ ছাড়া আর কোথাও নেই, তাই গণতন্ত্রের কথাই বলি। পরিপ্রেক্ষিত বিস্তৃত করব না। বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ রাখলাম। বাংলাদেশে কেউ কেউ উচ্চকণ্ঠ যে, দেশে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। এর বিপক্ষে অন্যরা উচ্চকণ্ঠ এই বলে যে, দেশে গণতন্ত্র নেই, ক্ষমতায় এসে তারা তা করবেন। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় উভয়পক্ষই গণ-কে বাদ দিয়ে কি তন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছেন বা করবেন তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। সেই তন্ত্র সাহায্যদাতা বণিকের আনুগত্যতন্ত্র।
কথাটা খুলে বলি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত মুঘল সাম্রাজ্য ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে শুরু করে। ১৭২৬ সালে তুরস্ক থেকে আগত সুচতুর যোদ্ধা ও কূটনীতিক আলিবর্দী খাঁ মুঘল সরকারের দুর্বলতার সুযোগে পাটনা থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত মার্চ করে চলে আসেন। ১৭৪০ সালের এক সফল যুদ্ধের পর তিনি বাংলার নবাব হন। অবশ্য এর আগেই তিনি দিল্লির দরবারের নেক নজরে পড়ে মহাব্বত জং উপাধি লাভ করেন। এই আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র ২৪ বছর বয়সের যুবক সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার নবাব হন। ‘ঝড়ড়হ ধভঃবৎ যরং ংঁপপবংংরড়হ ঃড় ঃযব ঃযৎড়হব, ঃযব ুড়ঁহম ঘধধিন পধসব রহঃড় পড়হভষরপঃ রিঃয ঃযব ঊহমষরংয রহ ইবহমধষ. ঞযবৎব বিৎব সধহু পধঁংবং ভড়ৎ ঃযরং ৎঁঢ়ঃঁৎব. ওহ ধহঃরপরঢ়ধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঝবাবহ ণবধৎং’ ডধৎ, ঃযব ঊহমষরংয রহ ইবহমধষ নবমধহ ঃড় ভড়ৎঃরভু ঃযবরৎ ংবঃঃষবসবহঃং. অং ঃযবু ফরফ ংড় রিঃযড়ঁঃ ঃযব ঢ়বৎসরংংরড়হ ড়ভ ঃযব ঘধধিন, ঃযব ষধঃঃবৎ ড়ৎফবৎবফ ঃযবস ঃড় ফবসড়ষরংয ঃযব ংধসব. ঐড়বিাবৎ, ঃযব ঊহমষরংয ৎবভঁংবফ ঃড় ফড় ংড় ধহফ ঃযরং ঢ়ৎড়ারফবফ ধ মৎড়ঁহফ ড়ভ পড়সঢ়ষধরহঃ ঃড় ঃযব ঘধধিন. গড়ৎবড়াবৎ, ঃযব ঊহমষরংয ঃড়ড়শ ঁঢ় ঃযব পধঁংব ড়ভ ঝযধঁশধঃ ঔধহম যিড় ধিং ধ ৎরাধষ ড়ভ ঝরৎধল-ঁফ-উধঁষধ. ঞযব ঊহমষরংয ধষংড় মধাব ংযবষঃবৎ ঃড় ধ ৎরপয সবৎপযধহঃ ড়ভ ইবহমধষ ধহফ ৎবভঁংবফ ঃড় যধহফ যরস ড়াবৎ ঃড় ঃযব ঘধধিন বাবহ যিবহ ঃযব ষধঃঃবৎ সধফব ধ ফবসধহফ ঃড় ঃযধঃ বভভবপঃ. ওঃ ধিং ধষংড় ভড়ঁহফ ঃযধঃ ঃযব ঊহমষরংযসবহ বিৎব ধনঁংরহম ঃযব ঃৎধফব ঢ়ৎরারষবমবং যিরপয বিৎব মরাবহ ঃড় ঃযবস নু ঃযব এড়াবৎহসবহঃ.” (ঠ.উ.গধযধলধহ, ওহফরধ ঝরহপব ১৫২৬, ১৯৬৩, ঢ়.৩২). এর পরবর্তীতে সিরাজ-উদ-দৌলা কাশিমবাজারে ইংরেজদের একটি কারখানা ও কলকাতা শহর দখল করে নেন। এই পর্যায়ে ঘটে ইতিহাসের বিতর্কিত ‘ইষধপশ-যড়ষব ঞৎধমবফু’ যার প্রতিশোধ নিতে ডধঃংড়হ এবং ঈষরাব-কে বাংলায় পাঠানো হয়। এর পরের ঘটনা গধযধলধহ এভাবে বর্ণনা করেণ : “অষঃযড়ঁময ড়ঁঃধিৎফষু ঈষরাব যধফ সধফব ঢ়বধপব রিঃয ঝরৎধল-ঁফ- উধঁষধ, যব ধিং ফবঃবৎ-সরহবফ ঃড় যধাব ৎবাবহমব ভড়ৎ ঃযব ইষধপশ-যড়ষব ঃৎধমবফু. ঐব যধঃপযবফ ধ পড়হংঢ়রৎধপু ধমধরহংঃ ঃযব ঘধধিন. জধর উঁৎষধন, ঃযব ঞৎবধংঁৎবৎ ড়ভ ঃযব ঘধধিন, গরৎ ঔধভধৎ, ঃযব ঈড়সসধহফবৎ-রহ-ঈযরবভ ড়ভ ঃযব ঘধধিন’ং ভড়ৎপবং, ধহফ ঔধমধঃ ঝবঃয, ঃযব জরপযবংঃ ইধহশবৎ ড়ভ ইবহমধষ, বিৎব রহফঁপবফ ঃড় ৎবাড়ষঃ ধমধরহংঃ ঃযব ঘধধিন. ঞযব ফবঃধরষং ড়ভ ঃযব পড়হংঢ়রৎধপু বিৎব ংবঃঃষবফ ঃযৎড়ঁময অসরহ ঈযধহফ. ওঃ ধিং ফবপরফবফ ঃযধঃ ঈষরাব ধিং ঃড় সধৎপয ধঃ ড়হপব ঃড় চষধংংু. গরৎ ঔধভধৎ ধিং ঃড় ফবংবৎঃ ঃযব ঘধধিন ধহফ লড়রহ ঈষরাব রিঃয ধষষ ঃযব ভড়ৎপবং ঁহফবৎ যরং পড়সসধহফ. ঞযব ঘধধিন ধিং ঃড় নব ফবঢ়ড়ংবফ ধহফ গরৎ ঔধভধৎ ধিং ঃড় নব ঢ়ঁঃ রহ যরং ঢ়ষধপব.” (ঐ, ঢ়.৩৩)।
রবার্ট ক্লাইভের এই ষড়যন্ত্র সফল হয়েছে। এভাবেই ভারতীয় ইতিহাসবেত্তারা বাংলার ইতিহাস লেখেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাফ রাখতেই ইংরেজরা যে মীরজাফরকে নবাব বানালেন এ কথা কেউ বুঝিয়ে বলেন না। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই অংশের অবতারণা করলাম এই কারণে যে, আজকের বাংলাদেশের পরিস্থিতির সাথে এর হুবহু মিল না থাকলেও, উভয় অবস্থারই বংংবহপব-গত মিল লক্ষণীয়।
বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই দেশের সরকারি দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। তা দিন দিন ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ও ১৯৭৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান গঠিত বিএনপির মধ্যে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, এর সমাধান উভয়েরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে এ সঙ্কটের গুণগত ও মাত্রাগত পরিবর্তন এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে, মনে হয় এ সঙ্কট সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কটের সীমানা অতিক্রম করে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রাচীরে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে। যে পথে আজকের দিনের ‘রবার্ট ক্লাইভ’ ও ‘আমিন চাঁদরা’ ঢুকে পড়েছেন। ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশের সরকারি দল ও বিরোধী দল জানত না নির্বাচন অনুষ্ঠানকারী অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান হওয়ার যোগ্যতা দেশের কোন ব্যক্তি রাখেন বা রাখেন না। তা জানতেন ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে কর্মরত মার্কিন মুলুকের কূটনীতিক ডেভিড এন মেরিল এবং খুলনা ও যশোরে তৎপর তার সহকর্মীরা। যেমন- ১৭৫৭ সালে রবার্ট ক্লাইভ জানতেন সিরাজ-উদ-দৌলাকে হটিয়ে কাকে বাংলার নবাব বানানো যায়। তেমন একটি উদাহরণ দেয়া যায় ২০১৪ ও ২০১৮ দু’টি বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন যাতে বিএনপিকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে এবং একমাত্র ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ তাতে সমর্থন দেয়নি। এই একটি দেশের অকুণ্ঠ সমর্থনেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে এবং মনে হয় ভবিষ্যতেও তাই হবে।
১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজ সৈন্য এবং নবাবের সৈন্যরা যুদ্ধে নেমেছে। বাংলার জনগণ দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য উপভোগ করেছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম (মনে পড়ছে না) যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই দিন পলাশীর তামাশা দেখেছেন তারা যদি ইংরেজদের দিকে তেড়ে আসত তাহলে নবাবের সেনাপতি ও সিপাইরা যা-ই করে থাকুন না কেন ইংরেজরা সেই দিন শক্ত মার খেত। আজো দেখছি ওই একই দৃশ্য। সরকারি দল আর বিরোধী দল ঝগড়া করছে আর ‘মেরিল নামক ক্লাইভদের’ ঘাড়ের রগ মোটা হচ্ছে। ‘মেরিল’দের তৎপরতায় ও উদ্যোগের ফলেই যদি উভয় দলের ঝগড়া থামে, তবে ‘মেরিলদের’কে কি আর কূটনৈতিক রীতিনীতির নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে? না, এখন তারা সে সব রীতিনীতি মেনে চলছেন না। নাকি বাংলাদেশে নিয়োজিত বিদেশী কূটনীতিবিদদের এসব রীতিনীতি মানার প্রয়োজন নেই! দেশে গণতন্ত্র- এরই বা কি অর্থ জনগণ যেখানে দৃশ্যপটে নেই, রাজনীতিকরাও যেখানে খেলার পুতুলে পরিণত হয়ে গেছেন?
১৯৯৫ সালে চলমান সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সঙ্কটকালে সরকারি দল ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের প্রায় অনেকেই মার্কিন মুলুক বিস্তর সফর করেছেন। সরকারি নেতা-নেত্রীর সফরের বাহ্যিক কারণগুলো পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে কিন্তু বিরোধী দলের নেত্রী এবং অন্যান্য নেতা এতবার কেন মার্কিন মুলুক সফর করলেন, তা জানা গেল না। সাম্প্র্রতিককালে তারা নির্বাচনের আগে ভারত সফর করেন। জনগণের ভোট-ভাত, ডাল-ভাত, মাছ-ভাত, দুধ-ভাত এর নামে জনগণকে এবং তাদের নেতৃত্বদানকারী রাজনীতিকদের কর্তৃত্ব থেকে চিরকালের মতো নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থাই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আমেরিকা বা ভারতের নেতৃত্বে এ এলাকায় বাজার অবাধ হবে, এটিই স্বপ্ন। রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বলতে কিছু আছে বলে মনে হয় না। বাজার এখনো সম্পূর্ণ অবাধ হয়নি সত্য, তবে রাজনীতি যেখানে যাওয়ার চলে গেছে মনে হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি যে বাংলাদেশীদের হাতে নেই তা ১৯৯৫ সালে পাঁচ বুদ্ধিজীবী কর্তৃক গৃহীত সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগের লজ্জাজনক ব্যর্থতা থেকেই বোঝা গেছে। নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ অন্তঃকলহে বিদেশীদের এভাবে জড়িয়ে ফেলা কি সরকারি দল কি বিরোধী দল কোনো দলের ভাবমর্যাদাকেই উজ্জ্বল করেনি বরং এটি তারা একটি আত্মঘাতী কাজ করে ফেলেছেন। আত্মমর্যাদাশীল কোনো জাতি এমনটি করে না। দেশের জনগণ যদি তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য উভয়পক্ষকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশের ম্লান-মূঢ়-মূক জনগণ যদি তামাশা দেখার ভূমিকা পরিত্যাগ করে তাদের তেড়ে আসে তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের রক্ষা করতে পারবে বলে মনে হয় না। যে জনগণ একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নিজ দেশে পাকিস্তানের শাসনের অবসান ঘটাল তাদের এমনভাবে উপেক্ষা করে নিজেদের ক্ষমতালিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য বিদেশীদেরই শরণাপন্ন হওয়ার মনোবৃত্তিকে সে জনগণ বেশি দিন মেনে নেবে সেটি মনে হয় না। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, জনগণের তাবত অধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে তাদের যে উদ্বেগ (?) উৎকণ্ঠা (?) তা আজ ষোলোকলায় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়টি দেশের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনীতিকদের স্বার্থান্ধ চোখে ধরা না পড়লেও, দেশের সচেতন জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে। দেশের আপামর জনগণ যদি রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরির হোতাদের ও তাদের কর্মকাণ্ডকে মেনে নেয় তবে বুঝতেই হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ মিথ্যা, বাঙালি জাতি স্বাধীনতার যোগ্য নয়; নতুবা বুঝতে হবে এ দেশের জনগণ ১৭৫৭ সালে পলাশী নাটকের তামাশা প্রত্যক্ষকারী জনগণের পর্যায়েই চলে এসছে। দেশ শাসনে তাদের সে দিন যেমন কোনো ভূমিকা ছিল না, আজো নেই। আর নির্বাচন? তা যে সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, তা হবে কিছুসংখ্যক বিদেশীদের তাঁবেদারকে দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার প্রহসন মাত্র। যেমনটা আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি।
আজ ২০২২-এ আমরা চাই ১৭৫৭-এর ছদ্মবেশী নবাবরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সরে দাঁড়াক- জনগণের হাতে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিক বা জনগণ ছদ্মবেশী নবাবদের হাত থেকে রাজনীতি করার ক্ষমতা ছিনিয়ে নিক। দেশের জনগণকে শুধু ভাত-কাপড় আর ভোটাধিকার পাওয়ার কাঙাল যারা মনে করেন তাদের স্মরণ রাখা উচিত, মর্যাদাপূর্ণ জাতিসত্তাও এ দেশের জনগণের কাম্য। ভাত-কাপড় যারা পাচ্ছে না তারা বিদ্যমান ব্যবস্থায় যেমন ভোট দিলেও পাবে না, না দিলেও পাবে না; ঠিক তেমনি যারা পাচ্ছে তারা ভোট দিলেও পাবে, না দিলেও পাবে- ভোট যে দলকেই দিক না কেন। উপরন্তু এত দিনে দেশে একটি অলস এলিট শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে। এ শ্রেণীটি যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদের কাছ থেকে সুবিধা নেয় এবং তাদের সমর্থন দিয়ে যায়। এমনকি তাদের মধ্য থেকে লোক নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করলেও দেখা যায় এরা যেনতেন প্রকারে বর্তমান সরকারি দলের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নির্লজ্জ প্রয়াস চলায়। ২০১৪ সাল থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে এটিই লক্ষ করছি। দেশবাসী উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের পক্ষেই কাজ করে; তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের গুরুতর অভাব। এরা সরকার দলীয় মাসলম্যানদের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যে কারণে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না। এসবের অবসান না হলে দেশের পরিস্থিতি দিন দিন অধঃগতির দিকেই যাবে।
লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও ভাইস প্রিন্সিপাল, সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা।