বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সজীব ও সক্রিয় চিন্তার ধারা

Farhad Mazhar     30 November 2022

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সজীব ও সক্রিয় চিন্তার ধারা শক্তিশালী করবার ক্ষেত্রে চিন্তা পাঠচক্র সবসময়ই শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। আমাদের পরবর্তী পাঠচক্র আবার আগামি ২ ডিসেম্বর ওয়েবিনার হিশাবে শুরু হচ্ছে। যারা অংশগ্রহণে আগ্রহী তারা দয়া করে কমেন্ট বক্সে দেওয়া গুগল ফর্মটি পূরণ করুন।
আপনাকে লিঙ্ক পাঠানো হবে।
তবে দয়া করে চিন্তা পাঠচক্র সম্পর্কে আগে জেনে নিন। এ বিষয়ে আগের দুটি পোস্ট পড়ে নিন। এটি তৃতীয় কিস্তি।পাঠচক্রে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
৩. এ খ ন কা র  কা জ
চিন্তাপাঠচক্র বাংলাদেশে বিপ্লবী গণরাজনৈতিক চিন্তাধারা ও তৎপরতা বিকাশের জন্য কাজ করে। আমরা কোন রাজনৈতিক দল নই বা কোন দলের সাথে যুক্তও নই। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারাই তাত্ত্বিক, গণসাংগঠনিক, সাংস্কৃতিক কিম্বা রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করি। আমাদের আশু লক্ষ্য হচ্ছে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তিকে সমাজের সকল স্তরে মোকাবিলা এবং বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটিয়ে জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে নতুন গাঠনিক রূপ দেওয়া। বাংলাদেশ পরিগঠনের নতুন মতাদর্শিক ও সাংগঠনিক চর্চা গড়ে তোলাই এখন প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য। আমরা বাংলাদেশের আগামি সম্ভাব্য সমাজ, গণশক্তি এবং রাষ্ট্রের রূপ কি হতে পারে তা নিয়ে এখন থেকেই ভাবি এবং কাজ করি।
অ বি ল ম্বে  দ র কা র:
(ক) জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিপরীতে গণশক্তিতে রূপ দেবার কাজে নিষ্ঠ থাকা; বাংলাদেশের জনগণ রাজনৈতিক ভাবে দুই ভাগে বিভক্ত এক দিকে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা বিরোধী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং তাদের বিপরীতে রয়েছে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত শ্রেণী, গোষ্ঠি, বিভিন্ন ব্যাংকের মালিক, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, ভূমিদস্যু, স্থানীয় টাউট ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ক্ষমতাবান শ্রেণী, নানান কিসিমের লুটেরা ও মাফিয়া গোষ্ঠি এবং সর্বোপরি কয়েকটি চিহ্নিত গণমাধ্যম। শত্রুমিত্রের এই বিভাজন বাদ দিয়ে যারা দলীয় ভাবে জনগণকে বিভক্ত করতে চায়, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ব্যবস্থা বিরোধী জনগণের চেতনা ও ঐক্য বিনষ্ট করতে যারা তৎপর, ধর্ম ও সেকুলারিজমের কুঠার দিয়ে যেসকল ধর্মবাদী ও সেকুলার গোষ্ঠি এখনও জনগণকে দ্বিখণ্ডিত রেখে রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করতে চায় — তাদের চিহ্নিত করা এবং জনগণের শত্রু হিশাবে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্য দিয়েই গণশক্তির বিকাশ বাংলাদেশে ঘটবে এবং ঘটতে বাধ্য। গণশক্তি তৈরির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের  উপযোগী সঠিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপ অন্বেষণ ও কায়েমই আমরা আমাদের আশু লক্ষ্য গণ্য করি। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই আমরা বিভিন্ন জরুরি বিষয় নিয়ে পাঠ, আলোচনা ও পর্যালোচনার আয়োজন করে থাকি।
(খ) গণবিচ্ছিন্ন, বিমূর্ত এবং পেটি বুর্জোয়া শ্রেণীর রোমান্টিক আবেগ, মতবাদী অন্ধত্ব, এবং অপরিণামদর্শী চিন্তাচেতনা থেকে মুক্ত থাকা এই সময় অত্যন্ত জরুরি। সেই জন্য কংক্রিট গণআন্দোলন ও গণসংগ্রাম এবং লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট দাবিদাওয়া জনগণ যেভাবে তোলে, ব্যক্ত করে এবং রণধ্বণি দেয় — সেই সকল দাবিদাওয়ার মধ্যে জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের মর্ম বোঝা সবার আগে জরুরি। বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হওয়া দাবিদাওয়ার মধ্যে জাতীয় আকাঙ্ক্ষা শনাক্ত করতে পারা এবং প্রচারের ব্যবস্থা করা এখনকার সবচেয়ে জরুরি ও দরকারি কাজ। নিরর্থক ও অপ্রাসঙ্গিক তর্ক বিতর্ক পরিহারের এটাই সঠিক ও পরীক্ষিত পথ।
(গ )  বদ্ধমূল প্রাচিন চিন্তার বোঝা আমরা নিরর্থক বয়ে বেড়াতে চাই না। আমাদের কাজ পর্যালোচনামূলক চিন্তার বিকাশের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক কর্তার আবির্ভাব ঘটবার শর্ত তৈরি করা। সেই জন্য জীর্ণ ও নিস্ফল রাজনৈতিক ধ্যানধারণা ও বর্গ পরিহার করে সারকথা সহজ ভাবে বলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
যেমন, সমাজে ব্যক্তির পরিপূর্ণ আবির্ভাব এবং  বিকাশ নিশ্চিত করবার উপযুক্ত আদর্শ ও ব্যবস্থার কথা না বলে অন্তঃসারশূন্য শব্দ ‘গণতন্ত্র’ প্রচার এবং অনর্থক বাগাড়ম্বর বাংলাদেশকে গভীর খাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আরেকটি অন্তঃসারশূন্য ধারণা হচ্ছে ‘নির্বাচন’। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় প্রভাবশালী শক্তির সন্ত্রাস ও লাঠিয়ালগিরির বাইরে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বলে কিছু নাই। নদী, নালা, খাল, বিল সবই স্থানীয় সন্ত্রাসীরা দখল করে নিয়েছে। প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপন্ন। যেখানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বলতে কিছুই নাই, সেখানে তথাকথিত  ‘গণতন্ত্র’ চরম রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অর্থ হচ্ছে একজন ব্যক্তির হাতে একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা ও পুরা শাসন ব্যবস্থা তুলে দেওয়া। অথচ ‘আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয়’ – বাংলাদেশের সংবিধানের ‘রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিশাবে এখনও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিশাবে ১১ নম্বর অনুচ্ছেদ রয়ে গিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “প্রশাসনের সর্বস্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে”। তাহলে জাতীয় নির্বাচন দ্বারা একনায়কী ব্যক্তির শাসন ও ক্ষমতা কায়েম নয়, নির্বাচন হতে হবে ‘প্রশাসনের সকল পর্যায়ে’। আর এর দ্বারাই ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ নিজেকে ‘গণতন্ত্র’ বলে দাবি করতে পারবে। কারন সেখানে, “মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি  শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে”। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়াকে ‘নির্বাচন’ ও ‘গণতন্ত্র’ বলা চরম তামাশাই বটে।
(ঘ) ব্যক্তির মধ্যে সমাজ্কে ধারণ এবং সমাজের মধ্যেই ব্যক্তির বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। অতএব সমাজ বা রাষ্ট্রের নামে ব্যক্তির দমন-নিপীড়ন সমাজ বিকাশের জন্য যেমন ভয়ংকর, ঠিক তেমনি ব্যাক্তি স্বাধীনতা বা ব্যক্তিতান্ত্রিকতার নামে সমাজকে ব্যক্তির বিপরীতে দাঁড় করানো বাংলাদেশের জনগণের সামষ্টিক স্বার্থের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে। ব্যক্তি ও সমষ্টি বা ব্যক্তি ও সমাজের এই পারস্পরিকতার আলোকে পাশ্চাত্য ‘লিবারেলিজম’ বা সমাজের বিপরীতে ব্যক্তিকে খাড়া করবার — কিম্বা সমষ্টির স্বার্থের নামে ব্যক্তিকে বিলোপ করবার সকল প্রকার মতাদর্শ ও রাজনীতি মোকাবিলা করা বাংলাদেশের জনগণের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ সমাজের সামষ্টিক নীতি, নৈতিকতা, ধর্ম, আচার, সংস্কৃতির প্রশ্ন বাদ দিয়ে এবং সামষ্টিক স্বার্থের উর্ধে ব্যক্তিকে ‘সার্বভৌম সত্তা’ হিশাবে দাবিকে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবে মোকাবিলা ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে দুর্বল বাংলাদেশের প্রধান মতাদর্শিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। একই ভাবে সামষ্টিক স্বার্থের ব্যঘাত না ঘটিয়ে ব্যক্তির স্বাধীন বিকাশ কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান ব্যাবহারিক প্রশ্ন। বিদ্যমান বিশ্ব ব্যবস্থা এবং ভুরাজনৈতিক বাস্তবতা আমলে নিয়ে একদিকে লিবারেলিজমের নানান বয়ানের পর্যালোচনা এবং বাংলাদেশের জন্য বাস্তবোচিত রাজনৈতিক নীতি ও কৌশল প্রণয়ন অতিশয় জরুরি হয়ে পড়েছে।
(ঙ) পরাশক্তি হিশাবে চিনের উত্থানের ফলে বাংলাদেশে আমরা নতুন বিশ্ববাস্তবতার মুখোমুখি। মার্কিন ও ন্যাটো জোটভূক্ত পাশ্চাত্য দেশগুলো যে এককেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছে তার বিরুদ্ধে চিন-রুশ জোট ঐক্যবদ্ধ। ভারত দোদুল্যমান। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ পরিষ্কার। ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে, তার প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি অনুধাবন জরুরি। এ সবের ফলাফল এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু আঞ্চলিক ও বিশ্ব ব্যবস্থায় রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে বাংলাদেশের জনগণের শক্তিশালী আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার বিচার অতিশয় জরুরি।
কোন মতাদর্শই বাস্তবতা থেকে মুক্ত ও বিচ্ছিন্ন স্বাধীন সত্য নয়। অতএব ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে বিভিন্ন মতাদর্শ – বিশেষত ‘গণতন্ত্র’, ‘নির্বাচন’ এবং লিবারেলিজম/নিউ লিবারেলিজম ইত্যাদির সম্পর্ক কঠোর ভাবে পর্যালোচনা করা যেমন জরুরি, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য থেকে নতুন রাজনীতির ভাষা ও বয়ান তৈরিও সমান জরুরি। সঠিক রাজনীতি ও কৌশল নির্ণয়ের জন্য সঠিক ভাষা, প্রত্যয়, বর্গ ও বয়ান নির্মাণ অতিশয় জরুরি হয়ে পড়েছে।
(চ)  পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের ফলে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে অনেক আগেই। তথাকথিত ‘উইপন অব মাস ডিসস্ট্রাকশান’ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’, ‘হিউমেনিটারিয়ান ইন্টারভেনশান’ বা বিভিন্ন ছুতায় দুর্বল দেশ আক্রমণ করা , লুন্ঠন করা ইত্যাদির দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে ওয়েস্টফিলিয়ান চুক্তির ফলে রাষ্ট্রের যে সার্বভৌমত্ব কাগজে কলমে একদা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল তা এখন বায়বীয় ও অর্থহীন  হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে সৎ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শৃংখল থেকে যেমন বেরিয়ে আসতে পারবে না, তেমনি বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, আগ্রাসন ও আধিপত্য থেকেও সহজে মুক্ত হতে পারবে না। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে বিদেশী আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখা এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাস্তবতা আমলে নিয়ে অর্থনীতির দ্রুত ও ত্বরান্বিত বিকাশের নীতি ও কৌশল প্রণয়ন বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রধান কর্তব্য হিশাবে হাজির হয়েছে।
পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের কালে পুরানা রাষ্ট্র ভাঙ্গছে,ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা ব্যবস্থা আরো পোক্ত হচ্ছে। একদিকে রাষ্ট্রের পুরানা সার্বভৌমত্ব আর নাই, কাজ করে না বা ক্ষয় পাচ্ছে,অন্যদিকে  দেয়াল,কাঁটাতার,ইমিগ্রেশান আইন,ইত্যাদির বেড়া উঠছে। পণ্য ও পুঁজি যেখানে খুশি যেতে পারে, কিন্তু মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে পারে না। আমাদের কাজ হচ্ছে নতুন বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশের বিশেষ ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালভাবে বোঝা এবং একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে টিকে থাকার সঠিক নীতি ও কৌশল দ্রুত নির্ণয় করা।
(ছ) বাংলাদেশে কার্যত কোন শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নাই। তাই দ্রুত শক্তিশালী গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সাধারণ নীতি হচ্ছে দেশ ও জনগোষ্ঠির সুরক্ষা। সৈনিকতা স্রেফ বেতন ও সুবিধাভৈগী চাকুরি নয়, মর্যাদা সম্পন্ন নাগরিক দায়িত্ব। অতএব শুধু সৈনিক নয় সকল নাগরিকেরই বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা জরুরি।
দ্বিতীয়ত যুদ্ধবিদ্যাকে টেকনলজির কারসাজি বা যন্ত্র ও টেকনলজিতে পর্যবসিত না করে সৈনিকতার মর্যাদা নীতিনৈতিকতা, প্রশিক্ষণ ও আদর্শের ওপর নির্ভরশীল — এই সত্যের প্রতিষ্ঠা। সৈনিকতাকে লুটেরা মাফিয়া গোষ্ঠির সম্পদ পাহারাদারি থেকে মুক্ত করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং জাতির সামষ্টিক সত্তার পাহারাদার হিশাবে উপযুক্ত সম্মানের স্থানে অধিষ্ঠিত করা দরকার। বাংলাদেশ শক্তিশালী দেশ হিশাবে নিজেকে দ্রুত তৈরি করার এটাই পথ।
 সৈনিকতা অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার পেশা। সৈনিকতার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা ও সমুন্নত রাখার ওপর জনগোষ্ঠি হিশাবে আমাদের টিকে থাকা ও না থাকা নির্ভর করে। সৈনিকতাকে কোন মুনাফাকারী ব্যবসা ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা কিম্বা বাইরের শত্রু মোকাবিলার পরিবর্তে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ভ্রান্ত ও আত্মঘাতী পথ পরিহার করতে হবে।
সর্বোপরি গণপ্রতিরক্ষা বলতে শুধু জাতীয় সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বোঝায় না। পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রাণবৈচিত্র, জীবন ও জীবিকার সুরক্ষাসহ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের সামষ্টিক সুরক্ষার জন্য যে নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ ও চর্চা করে সেই সামষ্টিকতাও বোঝায়।
ব্যক্তি সমাজকে এবং সমাজ ব্যক্তিকে উপলব্ধি ও ধারণ করবার সজ্ঞান চর্চা ছাড়া কোন সমাজই টিকে থাকতে পারে না।