আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) এক প্রেস বিবৃতিতে আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ এই আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, চূড়ান্ত আলোচনার জন্য আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ পাঁচ দিনের সফরে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকায় এসেছেন। প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আশা করা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের স্বদেশি সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশ এবং আইএমএফ সম্প্রতি বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং আইএমএফ-এর নতুন স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধার (আরএসএফ) অধীনে একটি স্টাফ লেভেল চুক্তিতে পৌঁছেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক লক্ষ করেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের গৃহীত সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিগুলো দেশের মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল রাখতে, ঋণ থেকে জিডিপি অনুপাত কম রাখতে সাহায্য করেছে।
অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গতকাল অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’
তিনি উল্লেখ করেছেন, গত দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই, যা দারিদ্র্য হ্রাসে স্থিতিশীল অগ্রগতি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও শুরুতে মহামারি, এরপর ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে আসা ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলা করছে।
আইএমএফ ডিএমডি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসব ধাক্কার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি। এসব বিষয় মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই আমি।
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া বেশ কিছু পরামর্শ বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে সরকার।
এর আগে সরকার আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর আইএমএফের একটি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আইএমএফ প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম কিস্তিতে ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার মিলবে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর পর্যালোচনা করে কিস্তির অর্থ ছাড় করা হবে।
আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি বাংলাদেশকে তিনটি বিভাগে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। আইএমএফ এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ)-এর অধীনে ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন সম্পূর্ণ সুদমুক্ত এসডিএফ প্রদান করবে।
আইএমএফ ফ্লোটিং এসডিএফআই অন্তত ১ শতাংশ সুদের হারে এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইসিএফ) অধীনে বাংলাদেশকে আরও এক হাজার ৬৪৫ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন এসডিএফ দেবে। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) অধীনে ফ্লোটিং এসডিএফআই অন্তত শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদের হারে ১ বিলিয়ন ডলার এসডিআর দেবে। এই ঋণ সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। সুদের হার ফ্লোটিং হবে। এসডিআর সুদের হার অনুযায়ী সামগ্রিক ঋণের পরিমাণের ওপর গড় সুদের হার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর বা প্রায় ৪৪৭ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন মূল্যের ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারিতে এবং পরবর্তী ছয়টি সমান কিস্তি হবে ৫১৯ মিলিয়ন এসডিআর বা প্রায় ৬৫৯ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ এর আগে ১২ বার আইএমএফের ঋণ পেয়েছে। ১৯৭২ সালে সদস্য হওয়ার পর আইএমএফ থেকে প্রথম ঋণ নেওয়া হয় ১৯৭৪ সালে। ২০১২ সালে নেওয়া সর্বশেষ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেটাই ছিল আইএমএফের কাছ থেকে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ। আর এবার বাংলাদেশ পাবে আরও বেশি—৪৫০ কোটি ডলার। এই অর্থের মধ্যে ৩২০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ-ইএফএফ) আওতায় এবং বাকি ১৩০ কোটি দেওয়া হবে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবিলায়। অর্থাৎ আগামী বাজেটে অর্থ ব্যয়ের জন্য সরকারের হাতে বাড়তি অর্থ থাকবে।