by Defence Research Forum- DefRes Facebook 16 February 2020
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয়দের আমেরিকার নাগরিকত্ব প্রদান করেছে।যার দরুন আসাম,বিহার,পশ্চিমবাংলা,অরুনাচল,পাঞ্জাব সহ ভারতের বড়-বড় রাজ্যসমুহ থেকে অগনিত লোক সমুদ্র এবং আকাশ, রেল ও স্থলপথে আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন।এমতাবস্থায় দেশের বিভিন্ন কল-কারখানা এবং কৃষি ও গভমেন্ট সার্ভিসে এমপ্লয়মেন্ট এ থাকা লোক বিদেশে পাড়ি জমানোয় লোক সংকট কমাতে ভারতীয় কেন্দ্র সরকার বাংলাদেশীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করছে।হিন্দু-মুসলিম ধর্ম নির্বিশেষে দলে দলে লোকেরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জড়ো হচ্ছে ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ পাবার আশায়।ফাকা হতে শুরু করেছে ঢাকা এবং অন্যান্য শহরসমুহ।
#সম্প্রতি ভারতীয় হোম মিনিস্টার জি কিশান রেড্ডি বেশ উচ্চাকাংখা নিয়ে ঘোষণা করেছেন “অর্ধেক বাংলাদেশ ফাকা হয়ে যাবে যদি বাংলাদেশীদের ভারতীয় নাগরিকক্ত্ব প্রদান করা হয়”।উপরের প্রেক্ষাপট পুরোই কাল্পনিক।কারন,আমেরিকা যদি ভারতীয়দের নাগরিকত্ব প্রদান করে তবে ভারত ও ফাকা হয়ে যাবে।১৯৭১ সালে হেনরী কিন্সিজার বাংলাদেশকে “বাস্কেল কেস” বা “তলাবিহীন ঝুড়ির” সাথে তুলনা করেছিলেন।তলাহীন ঝুড়ি অর্থ তুমি যতই কিছু রাখ,সব নিচে পড়ে যাবে।ফলাফল বড় একটা শুন্য।ভারতীয় নেতাদের বক্তব্যেও কেমন যেন একটি দম্ভ প্রকাশ পায়।তাহলে একটু ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে জানা যাক,ভারত বিশাল দেশ,বিশাল ইকোনমি।তবে তাদের কাছে সার্ভিস সেক্টরটুকুই সবার পছন্দের।এ সেক্টরের সুবিধা হলো,বেতন বেশী।তবে সুযোগ কম।খুব কম সংখ্যক ভাগ্যবান সার্ভিস সেক্টরে আসবার সুযোপ পায়,কারন এর প্রতিযোগীতা অনেক বেশী।বর্তমান ৫%-৫.২% জিডিপি গ্রোথ নিয়ে ভারত তার চাইতেও ছোট বাংলাদেশের ৭%-৮% গ্রোথ থেকে পিছিয়ে আছে।সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন প্যারামিটার এও বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বহু আগে।তাহলে,ভারতের বারবার বাংলাদেশ নিয়ে বলবার দরকার কি?
#বাস্তব কথা হলো ভারতে থাকা ক্ষমতাসীন বিজিপির হাতে বলবার মত কিছু নেই।বর্তমানে ভারতের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল পার করছে।ভারতীয় সংসদ সদস্যরা পাবলিকালি খুব কমই নিজেদের ব্যর্থতার কথা বলেন।রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে হলে এজেন্ডা দরকার।ভারতীয়দের হাতে সে এজেন্ডাটুকু হলো বাংলাদেশ।মুল কথা,অর্ধেক বাংলাদেশীরা যদি ভারতমুখী হওয়াও শুরু করে তবে সীমান্ত সিল করবার ক্ষমতা খোধ ইন্ডিয়ান আর্মির ও নেই।১৮ কোটির মাঝে যদি ৯ কোটি লোক সীমান্তে মুভ করে তখন ভারতীয় হোম মিনিস্টারকে হয়ত ভারতেই খুজেই পাওয়া যাবেনা।
#১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাড়িয়েছে।তবে আমরা ভুলে যাই ভারতের পাশে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল।নয়ত,ভারত নিজেও হয়ত বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় সাপোর্ট দেবার আগেও ভাবতো।ভারতীয় কিচ্ছা-কাহিনীতে বাংলাদেশ এর জন্মের সময় সোভিয়েত ভুমিকা খুব কমই উল্লেখ করা হয়।তাও ভারত সে সময়ে ১ কোটি শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।যার কৃতজ্ঞতা আমরাও অস্বীকার করিনা।ভারতের সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতি,সামাজিক সুরক্ষা নীতি বিচার করলে আমরা এগিয়ে থাকলেও,আমরা বলতে পারব না,আমাদের অর্থনীতিও বেশ ভাল।দেশের শেয়ারবাজার,বিদেশে টাকা পাচার সহ নানা সমস্যা আছে।সমস্যা থাকবেই,এর আশু সমাধান আশা জরুরী।অর্থনীতিতেও উঠানামা আছে।অনেকেই উল্লেখ করেন,এত লোন কেন নেয়া হচ্ছে ব্যাংক থেকে?দেশে এত এত সংকট।
#তবে এও অস্বীকার উপায় নেই,ব্যাংকে অলস টাকা নামেও একটি অংশ পড়ে আছে।বাংলাদেশের অবকাঠামো,রাস্তা,বিদ্যুৎ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আরো ২০ বছর আগেই দরকার ছিল।যা এখন হচ্ছে।কিছুক্ষেত্রে বিদেশী লোন,দেশের পিপিপি,কিংবা নিজেদের টাকা যেভাবেই হোক এসব প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে হবে।অনেক সময় টাকার ফান্ডিং এর জন্য কাজ থেমে থাকে,অনেক সময় এগিয়ে যায়।বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।তাই অর্থনীতির বিকাশের জন্য প্রজেক্ট লাগবেই।লোন নিতে হবে বলে পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া যায়না।হ্যা,প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা একটি সমস্যা বটে।দেশে কর্মসংস্থান কমছে।কিন্তু এও মানতে হবে,জনসংখ্যা বাড়ছে।চীন মডেল এক্ষেত্রে তরুনদের জন্য এক সুবর্ন সুযোগ আনতে পারে।চীনের অনেক শিল্পপতি ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।যেমন-আলিবাবা কর্পোরেশন।বাংলাদেশের তরুন সমাজকে শুধু বিসিএস নির্ভর না হয়ে বিনিয়োগকারী হিসেবে আবির্ভাব করতে হবে।চাকরী নেব এ চিন্তার চাইতে চাকরী দেব চিন্তাটুকুই শ্রেয়।
#বাংলাদেশের অর্থনীতি,গার্মেন্টস নিয়ে ব্যবসায়ীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন,চীন থেকে তুলা আমদানী বন্ধ হওয়ায় আগামী মার্চে পোশাক শিল্পে ধ্বস নামবে।আবার চীনা রাষ্ট্রদুত চীন থেকে আমদানি বন্ধ না করতে বলেছেন বাংলাদেশকে।পোশাক শিল্প মালিকেরা তুলার জন্য আমেরিকাকে চীনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।কারন,আমেরিকা নিজেও বাংলাদেশে তুলা রপ্তানীতে আগ্রহী।
#সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশী অর্থনীতি যেমন উদায়মান তেমনি এর চ্যালেঞ্জ ও রয়েছে।বর্তমানে ভারতের সমস্যা হলো তাদের গ্রাহক পর্যায়ের চাহিদা কমছে।কিছুক্ষেত্রে তা বাংলাদেশেও কমছে।তবে তা ভারতের মত উদ্বেগজনক হারে নয়।তাই,ভারতীয় নেতারা যখন বক্তব্য দেন,তার আগে তাদের কিছু হোমওয়ার্ক করা উচিত।তাদের ও বোঝা উচিত,আমেরিকা ভারতীয়দের গনহারে নাগরিকত্ব দিলে কতজন ভারতীয় ভারতে থাকবে।তবে এসব বক্তব্য কিন্ত শেষবার বিজেপিকে দিল্লীতে ভুগিয়েছে।কারন একই রেডিও দশবার বাজালেই মিথ্যে সত্যি হয়ে যায়না।বিজেপির সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।তাদের উচিত নতুন ইস্যু খোজায় মনযোগ দেয়া।বাংলাদেশীরা সাতার কেটে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি যেতে পারে,আমেরিকায় ও যেতে পারে।ভারত বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের হয়ত আগে অনেক কিছুই অফার করত আগে।এখন সন্ত্রাসীরাও যেখানে ভারত যাওয়া প্রেফার করেনা(আমরা সন্ত্রাসবাদ সাপোর্ট করিনা),সাধারণ বাংলাদেশীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য অর্ধেক বাংলাদেশ ফাকা করে ভারত যাওয়ার বক্তব্য সময়ের অপচয় আর হাসির খোরাক বাদে আর কিছুই না।