জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় যাচাই–বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে।
সোমবার ওয়েবসাইটে দেওয়া এইচআরডব্লিউর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ল্যাক্রোইক্স এমন সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দেশটির রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন অধিকারকর্মী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানি করছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের খোলাখুলি উদ্বেগ জানানো উচিত।
এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার–সংক্রান্ত যাচাই–বাছাই নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা তাদের কোনো নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়। সফরকালে জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সে এই নীতিমালার ওপর জোর দিতে হবে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেন দেশের বাইরে শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ না নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার–সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যর্থ হয়েছে। শুধু উচ্চপদস্থ কর্তকর্তাদের মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় যাচাই–বাছাই করে জাতিসংঘ।
অন্যথায় যাচাই–বাছাইয়ের কাজের দায়িত্ব বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর পড়ে। তবে এই সংস্থার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ সীমিত।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে র্যাবের প্রসঙ্গ টেনে এনেছে এইচআরডব্লিউ। বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এই বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি জানিয়েছিল, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের এমন অনেক সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা র্যাবের হয়ে কাজ করেছেন। বিষয়টি উদ্বেগের। এমন পরিস্থিতিতে একটি স্বাধীন যাচাই–বাছাই ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল জাতিসংঘের ওই কমিটি। ওই যাচাই–বাছাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল, নির্যাতন, বিচার–বহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা ইউনিটকে যেন শান্তি রক্ষা মিশনে নিয়োগ না দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করা।
এইচআরব্লিউ বলছে, জাতিসংঘের উচিত কোনো বাংলাদেশি কর্মকর্তা র্যাবের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তা প্রকাশ করা এবং বাহিনী–সংশ্লিষ্ট কাউকে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগদানে বিরত রাখা। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় যাচাই–বাছাই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন বিভাগকে।
জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সরকারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার জন্য তারা যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা চিহ্নিত করতে সফরকালে ল্যাক্রোইক্সকে মানবাধিকার যাচাইবাছাইয়ের বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।