বাংলাদেশিদের ভারতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কমেছে ১৬.৫২%

 

 বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। গত জানুয়ারিতে এ দুই দেশসহ অধিকাংশ দেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে অর্থ ব্যয় কমেছে। তবে ভারতে ক্রেডিট কার্ডে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ ও কার্ডের ব্যবহার অধিকহারে কমেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে তা সামান্যই হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় কমেছে কানাডা ও ভারতে। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কানাডা ও ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৯৫ ও ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনেকে বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন করে থাকেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংক বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে নগদ উত্তোলন বন্ধ করেছে। এক্ষেত্রে যাদের নগদ ডলার প্রয়োজন হতো, তারা সেটা এখন কার্ডে নিচ্ছেন না। ক্যাশ নিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রভাবে কমতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রতিক ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারতবিরোধী এক ধরনের প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পণ্যসহ দেশটিকে ‘বয়কট’ নিয়ে করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে। ভারতে কার্ডের ব্যবহার হ্রাসে এরও একটি প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য কিনে থাকে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে ভারতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৯৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ১৯ কোটি ১০ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ ব্যয় কমেছে। আর লেনদেনের সংখ্যা কমেছে ২১ হাজার ৫০৫টি। জানুয়ারিতে ভারতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের লেনদেনের সংখ্যা ছিল এক লাখ সাত হাজার ৭৯২ বার। গত বছর ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ২৮৭ বার। অর্থাৎ এক মাসে লেনদেনের সংখ্যা কমেছে ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

এদিকে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে অর্থ ব্যয় কমেছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময় লেনদেনের সংখ্যা কমেছে দুই দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া গত জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সৌদি আরব ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কানাডা ২৫ দশমিক ৯৫, মালয়েশিয়া ৬ দশমিক ৪৮, অস্ট্রেলিয়া ৩ দশমিক ২৯, নেদারল্যান্ডস ৮ দশমিক ৫৩, আয়ারল্যান্ড ৬ দশমিক ৪৫ এবং অন্যান্য ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় কমেছে। তবে এ সময় শুধু আরব আমিরাতে ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় বেড়েছে বাংলাদেশিদের।

তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে বিদেশে বাংলাদেশিদের সার্বিকভাবেও ক্রেডিট কার্ডে ব্যয় কমেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে ৫৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় কমেছে ৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ১১ শতাংশ।

এদিকে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় কমলেও দেশের ভেতরে কিছুটা বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে ব্যয় হয় ২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে ব্যয় বেড়েছে ৪ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ।

অন্যদিকে জানুয়ারি মাসে বাইরে থেকে ইস্যু করা অর্থাৎ বিদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে লেনদেন করা কমিয়েছে প্রায় এক দশমিক ৩৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৮৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা জানুয়ারিতে কমে হয়েছে ১৮১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের অভ্যন্তরে, বাইরে এবং দেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোয়। দেশের অভ্যন্তরে এ খাতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩২০ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়া খুচরা কেনাকাটায় ১৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, সেবায় আট দশমিক ৫৩, নগদ উত্তোলনে সাত দশমিক ৭৩, পোশাক কেনাকাটায় ছয় দশমিক ০৭, ওষুধ ও ফার্মেসিতে পাঁচ দশমিক ১২, পরিবহন খাতে তিন দশমিক ৪০, অর্থ স্থানান্তরে তিন দশমিক ৪৫, ব্যবসায় দুই দশমিক ১০, পেশাগত সেবায় দশমিক ৭৯ ও সরকারি সেবায় দশমিক ৪৩ শতাংশ লেনদেন হয়।

এছাড়া বিদেশে প্রায় ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে খুচরা ক্রয়সেবায় ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, ওষুধ ও ফার্মেসিতে ১২ দশমিক ৩৩, নগদ উত্তোলন ১০ দশমিক ২৬, পোশাক কেনাকাটায় আট দশমিক ৯১ ও পরিবহন খাতে ছয় দশমিক ৯২ শতাংশ।

জানুয়ারিতে অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের এবং দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি নাগরিকদের লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে। দেশের অভ্যন্তরে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯০৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ। এর পরই রয়েছে মাস্টারকার্ড। এটির মাধ্যমে ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ লেনদেন হয়। বাকি ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ লেনদেন হয়েছে অন্যান্য কার্ডের মাধ্যমে।

দেশের বাইরে ভিসা কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মাস্টারকার্ডে লেনদেনের হার ছিল ১৩ দশমিক ৩১ ও অন্যান্য কার্ডে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি নাগরিকরা ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ১০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা লেনদেন করেন, যা মোট লেনদেনের ৫৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। মাস্টারকার্ডে ৪১ দশমিক ৫৭ ও অন্যান্য কার্ডে শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ লেনদেন হয়।

share biz