তাসনিম খলিল 9 September 2022
বলপূর্বক অন্তর্ধান বা enforced disappearance বোঝাতে আমরা গুম শব্দটা ব্যবহার করি। বাংলাদেশে এইটা এখন একটা হট টপিক। সবাই গুম নিয়ে আলাপ করছেন এবং গুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন। আমি বিষয়টাকে খুবই পজেটিভলি দেখি। তবে একটা সমস্যা যেটা আমার চোখে পড়েছে সেটা হলো, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সম্পর্কে নূন্যতম ধারনাহীন কিছু লোকজন এই বিষয়ে না জেনে, না বুঝে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছেন এবং কনফিউশন ছড়াচ্ছেন। এসব মিসইনফরমেশন আদতে খুবই ক্ষতিকর। এই পোস্টে আমি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের বিষয়টি একটু আলাপ করবো যাতে বেসিক বিষয়গুলো সবাই বুঝতে পারেন।
প্রথমে আসি বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের সংজ্ঞায়। এক্ষেত্রে দুইটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন বা সনদ আমরা দেখতে পারি।
বলপূর্বক অন্তর্ধান বিষয়ক ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনের (ICPPED) আর্টিকেল ২ গুমের সংজ্ঞায় বলছে: “enforced disappearance” is considered to be the arrest, detention, abduction or any other form of deprivation of liberty by agents of the state or by persons or groups of persons acting with the authorization, support or acquiescence of the state, followed by a refusal to acknowledge the deprivation of liberty or by concealment of the fate or whereabouts of the disappeared person, which place such a person outside the protection of the law.
আবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মূল আইন রোম সনদের আর্টিকেল ৭ (মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ), সাব-আটিকেল ২ (i) বলছে: “Enforced disappearance of persons” means the arrest, detention or abduction of persons by, or with the authorization, support or acquiescence of, a state or a political organization, followed by a refusal to acknowledge that deprivation of freedom or to give information on the fate or whereabouts of those persons, with the intention of removing them from the protection of the law for a prolonged period of time.
কয়েকটা শব্দ এদিক-ওদিক ছাড়া প্রায় একই সংজ্ঞা, যদিও রোম সনদে স্টেটের সাথে পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশনের কথাটা যোগ করা হয়েছে।
তাহলে বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম বলতে আমরা কী বুঝবো?
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বলছে, রাষ্ট্রীয় কোন বাহিনীর লোকজন (agents of the state) যদি কোন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার, আটক অথবা অপহরণ করে এবং ওই ব্যক্তির আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার (protection of the law) খর্ব করে তার সেই বন্দীদশার (deprivation of freedom) বিষয়টি গোপন রাখে বা অস্বীকার করে তাহলে সেটা বলপূর্বক অন্তর্ধান হবে।
রোম সনদ বলছে এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আবার কনভেনশনের আর্টিকেল ১.২ স্পষ্টই বলছে: No exceptional circumstances whatsoever, whether a state of war or a threat of war, internal political instability or any other public emergency, may be invoked as a justification for enforced disappearance.
যুদ্ধাবস্থা, যুদ্ধের ঝুঁকি, আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা অথবা জরুরী অবস্থার দোহাই দিয়েও বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমকে জায়েজ (invoked as a justification) করা যাবেনা।
এর মানে কী? মানে হলো এই যে আজকে যদি শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে একটা ক্যু হয় বা ক্যুয়ের চেষ্টা হয়, তখনও কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার, আটক, অপহরণ করে সেই ব্যক্তি যে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে (custody) আছেন, সেটা অস্বীকার বা গোপন করা যাবেনা। আবার আগামীকাল যদি ঢাকা শহরে বড় একটা সন্ত্রাসী হামলা হয়, তখনও কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার, আটক, অপহরণ করে তাকে গোপনে বন্দী করে রাখা যাবেনা। দুই ক্ষেত্রেই এটা বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম হিসেবে বিবেচিত হবে। উদাহরণ হিসেবে লিখলেও এই দুইটি ঘটনাই হাসিনার আমলে ঘটেছে এবং আমি ভবিষ্যতে এটা আরও ডিটেইলস লিখবো।
বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম বলতে আমরা বুঝবো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর (বা রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে পরিচালিত কোন বাহিনীর) হাতে গ্রেফতার, আটক, অপহরণ হওয়ার পরে একজন ব্যক্তির ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছে সেই বিষয়ে রাষ্ট্র যখন কোন তথ্য দিতে অস্বীকার করবে। বাংলাদেশের মন্ত্রীরা যদিও এটিকে নিখোঁজ (missing) হওয়া বলে চালিয়ে দিতে চান। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বেসিকটা জানা থাকলে তাদের ওই ট্রিকবাজিটা আমরা ধরতে পারবো।