বরখাস্ত চাহিয়া দরখাস্ত
==============
( দৈনিক নয়াদিগন্তে প্রকাশিত উপসম্পাদকীয় কলাম )
‘মশা মারতে কামান দাগা’ একটি বহুল প্রচলিত বাগধারা। ঢাকা উত্তরের প্যানেল মেয়র মশা মারতে গিয়ে সত্যি সত্যি কামান দাগিয়েছেন। খোলা ট্রাকে দুই পাশে দুইজন কর্মী কামান থেকে সাদা ধোঁয়া ছাড়ছে। সাথের দুইজন গ্যাস থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পড়লেও মাঝখানে নায়িকার ভঙ্গিতে দাঁড়ানো ওয়ার্ড কমিশনার তা পরেননি। বরং গ্ল্যামার বাড়ানোর জন্য বড় চশমা পরেছেন। এমন চমৎকার দৃশ্য এয়ারপোর্ট রোডে কোনো বিদেশীর দৃষ্টিগোচর হলে নির্ঘাত মশার আগেই তারা অক্কা পেতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ছবিটি বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিদের উৎকট আত্মপ্রদর্শনীর বাতিকই ফুটিয়ে তুলেছে। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মৃত্যুর আগে ঠিকই বলেছেন, দেশটি বাজিকরদের হাতে পড়ে গেছে।
এই ‘বাজিকর’রা কাজ করুক আর না করুক, মশা মরুক আর না মরুক, প্রদর্শনী বা লেফট-রাইটে তাদের কোনো জুড়ি নেই। একদিকে সর্বগ্রাসী লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির তলা ছিদ্র করে ফেলা হয়েছে। অন্য দিকে, বড় বড় নীতিকথা শুনিয়ে জনগণের কানে জ্বালা ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। সব জায়গায় এদের ‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই।’
বিশ্বে রাস্তাঘাট নির্মাণে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় এই বাংলাদেশে। এত খরচ করে পর যে রাস্তাঘাট বানানো হয়, সেগুলো আবার পৃথিবীর মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট। তারপরও মন্ত্রীর চাপাবাজি বন্ধ হয় না। বেচারা জনগণ সত্যি বেকায়দায় পড়ে গেছে।
জনগণের পেটে ভাত নেই, পরনে কাপড় নেই, জানমালের নিরাপত্তা নেই। তারপরও উন্নয়নের ভাগাড়ম্বরের শেষ নেই। সত্য বলতে গেলে পেটোয়া বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। জনগণের তখন ভিক্ষার দরকার নেই, ‘মাগো কুত্তা সামলান’ অবস্থা।
সংবাদমাধ্যমের ওপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বিবেচনায় ১৯৪৭ সালের পর থেকে সবচেয়ে মন্দ সময় পার করছে এ দেশের মানুষ। এই কথাটি রেহমান সোবহানসহ অনেকেই বলেছেন। ভূতের মুখে রাম নামের মতো তথ্য মন্ত্রীর মুখ থেকেও বের হয়েছে, ‘পোষা গণমাধ্যম গণতন্ত্রের ভিতকে দুর্বল করে দেয়, গণতন্ত্রকে খোঁড়া করে দেয়।’
জনগণ আজ কোথায় দাঁড়াবে? যে তথ্যমন্ত্রী এত সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, সেই মন্ত্রীই আবার গায়ের জোরে ‘ আমার দেশ’ পত্রিকাটি বন্ধ করে রেখেছেন। দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে রেখেছেন! যেগুলো খোলা আছে সেসব প্রাইভেট চ্যানেলগুলো সবই বিটিভি বনে গেছে। টকশোগুলোর বিন্যাসও চমৎকার। বিএনপিবলয় থেকে একজনের সাথে মল্লযুদ্ধে সরকারের পক্ষে তিনজন থাকেন। তারপরও সেই একজন সত্য কথা বলা শুরু করলে বিজ্ঞাপন বিরতির সময় হয়ে পড়ে।
সবচেয়ে সাহসী দৈনিক বলে যারা দাবি করেন, মাঝে মধ্যে তাদের ‘হ্যাডম’ দেখেও লজ্জা লাগে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরে যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে থাকেন, সেটাও বিশ্ব সাংবাদিকতার জগতে বিস্ময় ও রীতিমতো তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
এই মন্ত্রীরা গণতন্ত্রকে খোঁড়া না বানিয়ে কতটুকু খাড়া বানিয়েছেন, সেই গোমরটি বিরোধী দলীয় নেত্রী ফাঁক করে দিয়েছেন। দেশের নেতা-নেত্রীরা আর কিছু না পারুন, দেশের মানুষকে ঠিকভাবেই বিনোদিত করে যাচ্ছেন। রওশন ও কাদেররা গণতন্ত্রকে রীতিমতো ‘রঙ্গতন্ত্র ‘ বানিয়ে ফেলেছেন। গণতন্ত্র নিয়ে এমন মশকরা আর কোথাও হয়নি।
জাতীয় সংসদ যেন সার্কাসের মঞ্চ বানাতে কেউ কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের নেত্রী নিজের দলের ইজ্জত পুনরুদ্ধার করার জন্য সদাশয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। মন্ত্রিসভা থেকে নিজ দলীয় মন্ত্রীদের বরখাস্ত কিংবা সরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী কাছে আবেদন জানিয়েছেন। যাদের সরানর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, সেই মন্ত্রীদের দুইজন তখনো তার পাশের সিটেই বসা ছিলেন। নিজ দলীয় সংসদ সদস্য, কাগজ-কলমে যাদের নেত্রী তিনি নিজেই! ওদিকে নিজের পতিধনও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে মন্ত্রীর পদমর্যাদা উপভোগ করছেন। ঘরের পতিকেও না বলে তিনি আবেদন করেছেন সংসদ পতির কাছে!
চার বছর হালুয়া-রুটি খাওয়ার পর তার হুঁশ হয়েছে, ‘জাতীয় পার্টি সম্মানের সাথে নেই। কোথাও গেলে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারি না। লজ্জা লাগে। আমরা সরকারি দলে, নাকি বিরোধী দলে আছি?’
বিরোধীদলীয় নেতা সংসদনেতাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলাম, মন্ত্রিসভা থেকে আমাদের পার্টির সদস্যদের প্রত্যাহার করুন। কিন্তু সেটা হয়নি। এভাবে টানাটানি করে বিরোধী দল হওয়া যায় না।’
এই কিছিমের একটি বিরোধী দল পেয়ে এ দেশের মিডিয়ার একটা অংশ দারুণভাবে আহ্লাদিত। তারা বলে, কী চমৎকার পরিবেশ! সংসদে এখন খিস্তিখেউড় নেই, গালিগালাজ নেই। এই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক বিপর্যয় ও বিভ্রান্তি দেখে একটি গল্প মনে পড়ে যায়।
এক মায়ের অনেকগুলো মেয়ে সন্তানের পর একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। ছেলেটির ট্যাটনা ট্যাটনা কথায় ওই মা বিমোহিত। মায়ের আহ্লাদ ও উচ্ছ্বাসে ওই পিচ্চির মধ্যেও বড়ত্বের একটা ভাব পয়দা হয়ে গেছে। এই ট্যাটনা আরো ট্যাটনা হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে বড় এক বোনের দাম্পত্যকলহের সংবাদ আসে। ঘটনা সরেজমিন তদন্তের জন্য মা তার এই ছেলেকে পাঠান। সফর সমাপ্ত করে ছেলে তার মার কাছে এসে রিপোর্ট করে- মা, দুলাভাই আর বুবুজান সারাদিন খুবই ভালো থাকে। দিনের বেলায় আমি তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটি লক্ষ করি না। কোনো ক্লু না পেয়ে রাতের বেলায় আমি তাদের পাশেই ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকি। দেখি, বুবুই দুলাভাইকে প্রথম খোঁচানো শুরু করে। তারপর তো দুলাভাইকে আর থামানো যায় না, রেগে গিয়ে ইচ্ছেমতো মারে।’
একটু থেমে বিজ্ঞের মতো বলে, ‘পরের ছেলের দোষ নাই মা, দোষটা আসলে তোমার মেয়েরই।’
এই নাবালক ছেলের মতোই এ দেশের সুশীলসমাজের একটি অংশের বুঝ বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং। ক্লাস টু-এর শিশুর যতটুকু জিওপলিটিক্যাল জ্ঞান থাকার কথা, এইসব নাবালক বুদ্ধিজীবীর অনেকের তাও নেই। এর পরও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বনে গেছেন। কেউ কেউ তো গবেষক হয়ে পড়েছেন। কথার মাঝে সারগর্ভ কিছু না থাকলেও টকশোতে এসে জাতিকে রীতিমতো জ্ঞানদান করে থাকেন।
এ দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রায়নের পথে জিওপলিটিক্যালি নাবালক এই গ্রুপটিও একটা বড় বাধা।
২.
বাংলাদেশের বর্তমান গণতন্ত্রের সাথে ইন্দোনেশিয়ার একজন প্রসিদ্ধ গায়িকা ও নায়িকার একটি কাজ হুবহু মিলে গেছে। দেবী পারসিকা নামের এ নায়িকার কাহিনী এই কলামেই তুলে ধরা হয়েছিল। একই কাহিনী পাঠকদের কাছে আরেকবার পেশ করতে হচ্ছে। ২৫ বছরের জীবনে এই ইন্দোনেশিয়ান সুন্দরী তিনটি বিয়ে করেছেন। দুর্মুখেরা কয়েকটি লিভ টুগেদারের কথাও উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি পরবর্তী পানিপ্রার্থীর জন্য শতভাগ সতী হওয়ার স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তজ্জন্য সৌদি আরবে ওমরাহ করার পর সুদূর মিসর থেকে সার্জারির মাধ্যমে সতীচ্ছেদ পর্দা পুনঃস্থাপন করে নিয়ে আসেন। বর্তমানে বিজ্ঞান এমন এক আলাদিনের চেরাগ হয়েছে, মানুষ যা কামনা করবে, তাই পরিবেশন করে ফেলে। বলাই বাহুল্য, এই নায়িকার মনোবাসনাটুকুও বর্তমান বিজ্ঞান অপূর্ণ রাখেনি।
দেবী পারসিকার হাইমেন সার্জারি এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোকার বা ভাঁড় হিসেবে পরিচিত ব্যক্তির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে অদ্ভুত মিল লক্ষ করা যাচ্ছে। এরা দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পর্দাটিকে যতটুকু ছিঁড়েছেন সেটাকে আবার দেবী পারসিকার কায়দায় মেরামত করার চেষ্টায় নেমেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
দেবী পারসিকা এবং এদের জীবন দর্শনেও অনেক মিল রয়েছে। হালুয়া-রুটি যা খাওয়ার খেয়ে নিয়েছেন, এখন শেষ সময়ে ছোট্ট এক অপারেশনের মাধ্যমে আবার তরতাজা সতী বা খাঁটি বিরোধী দল হওয়ার শখ জেগেছে।
দেশের মানুষ কিংবা আমাদের নেতৃত্ব না চিনলেও শিল্পী কামরুল হাসান এদের ঠিকই চিনেছিলেন। তিনি এরশাদকে অনেক আগেই ‘ বিশ্ববেহায়া ‘ উপাধি দিয়েছিলেন। সুস্থ-সবল নিজের স্ত্রীকে হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে রাতারাতি সন্তান জন্মদানের ঘোষণা সারা পৃথিবীকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়েছিল। যতদিন বাদশা ছিলেন, ততদিন আটকুড়ে বাদশাহর অপবাদ ঘোচানোর জন্য সেই সন্তানকে প্রদর্শন করতেন। এরশাদের কবিতার কথা যেমন এখন আর শোনা যায় না, তেমনি সেই সন্তানের কথাও এখন আর শোনা যায় না। জাতির সাথে যারা এমন সুস্পষ্ট প্রতারণা করেছিলেন, তারা এখনো কিভাবে এই দেশে রাজনীতি করেন, তা সত্যিই পরম বিস্ময়ের ব্যাপার!
এরশাদ দম্পতির এই ধরনের আচরণে চরমভাবে আহত শিল্পী কামরুল হাসান সেইদিন তাকে ‘বিশ্ববেহায়া’ উপাধি দিয়েছিলেন। জানি না, বেঁচে থাকলে তিনি মানব জমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর মতো বলতেন কি না- স্যার, ক্ষমা করে দিন! মতিউর রহমানের কথার মূল সুরটি ধরতে কারোই কষ্ট হয়নি। আমাদের ভীরুতা এবং কাপুরুষোচিত সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে তিনি আঘাত করতে চেয়েছেন। কারণ কামরুল হাসানের সম ঘরানা এবং সমভাবনার অনেকেই এরশাদের সব পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এদের মধ্যে যারা এখনো এরশাদকে গালি দেন, তারাও এরশাদের ইচ্ছে মতো ব্যবহারকারী এই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না। যে সিস্টেম এরশাদকে ক্ষমতাধর বানিয়েছে সেই স্বৈরাচারী সিস্টেমের বিরুদ্ধে এরা মুখ খোলেন না। দেশটির গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে এসব সুশীল নামের নাবালকদের জন্য বিশেষ চিড়িয়াখানা বানানোর প্রয়োজন পড়তে পারে।
৩.
মূল ধারার মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। একটা কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে- সরকার গৃহপালিত বিরোধী দলের জায়গায় একটি গৃহপালিত বিএনপি বের করে আনতে চাচ্ছে। কয়েকজন নেতাকে চাপের (Stick) পাশাপাশি প্রলোভন (Carrot) দেখানো হচ্ছে। তজ্জন্য দেশের ভাণ্ডার থেকে যে লাখ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে, সেখান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাজেট নিয়ে নামা হয়েছে।
এ ধরনের ইচ্ছা, খায়েশ বা তার প্রস্তুতি যে সরকারের নেই, তা হলফ করে বলা যাবে না। সেই মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আমল থেকেই বিএনপিকে ভাঙার এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। প্রত্যেক স্বৈরাচারী সরকারের বৈশিষ্ট্য হলো- বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল ও বিভ্রান্ত করে নিজের স্বৈরাচারী শাসনকে প্রলম্বিত করা। আমাদের বুঝতে হবে, অবৈধতার একটা ভার আছে। এই ভারে সব স্বৈরাচার সবসময় কাবু হয়ে থাকে। তাই বিরোধী দলীয় নেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সতর্ক থাকতে হবে। রেসপন্সিবল জায়গা থেকে এমন কিছু বলা বা করা ঠিক হবে না- যাতে ঘোলা পানি আরো ঘোলা হয়।
জনগণ এখন আমাদের ধারণার চেয়েও সচেতন। জনগণের পালস বা সচেতনতার এই উত্তাপ যেসব রাজনীতিবিদ বুঝতে পারেন না, তারা সটকে পড়েন। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রওশন এরশাদের আহাজারি থেকে বাকিরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
বিএনপির একসময়কার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং ডাকসাইটে নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও এদের অধ্যয়নের একটি চমৎকার চ্যাপ্টার হতে পারেন। রাজনৈতিক নেতাদের গুরুত্বকে আমরা যদি টাকার অঙ্কে মাপি, তা হলে বলা যায়, বিএনপির ভেতর থাকলে যার মূল্য ছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা, বিএনপির পালসের বাইরে আজ তার কানাকড়ি মূল্যও নেই।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই, বিএনপির ওপর লেভেলের কয়েকজন নেতাকে সরকার কিনে ফেলতে সক্ষম, তা হলেও সেই নেতাদের দিয়ে রওশন এরশাদের চেয়ে ‘উত্তম’ বিরোধী দল সরকার গঠন করতে পারবে না। জনগণের পালসের বিরুদ্ধে থাকায় তারাও একেকজন ‘নাজমুল হুদা’ হয়ে যাবেন। কিম্বা তার চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ গৃহপালিত বিরোধী দলের মতো তারাও সম্বোধিত হবেন গৃহপালিত বিএনপি হিসেবে। রওশন এরশাদের যতটুকু নৈতিক বল রয়েছে, এদের নৈতিক বল থাকবে তার চেয়েও অনেক কম।
কাজেই সরকারের জন্য বিষয়টি হজম করা এত সহজ হবে না। বরং বিরোধী দল ভাঙার অভিযোগে নিজের আমলনামা আরো কলঙ্কিত হবে। যে যত দামেই বিক্রি হোন না কেন, বিক্রির পরের ধাপে সবাই কয়েক পয়সার ‘রওশন’ বা রসুন হয়ে যাবেন। অর্থাৎ হাজার কোটি টাকা খরচ করে শেষে দেখবেন, হাতে কয়েক পয়সার রসুন জমা পড়েছে।
এখন সময় বদলে গেছে। সরকার মূল গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এ অবস্থায় কোনো বোকাই সেই ঝুঁঁকি নেবে না, সরকারের রসুন হতে চাইবে না।
অপারেশন করে যেমন খাঁটি সতী হওয়া যায় না, তেমনি কোনো ধরনের অপারেশনের মাধ্যমে কখনোই বিরোধী দল সাজানো যায় না। দেবী পারসিকাদের বোকা প্রেমিকের মতো সরকারের কোনো কোনো প্রেমিক খুশি হলেও বাদবাকি বিশ্ব বা দেশের জনগণের কাছে তা হাস্যকরই ঠেকবে। রওশনকে অন্ধ প্রেমিক ইন্ডিয়া ছাড়া (দেবী পারসিকার পরবর্তী প্রেমিকের সাথে হুবহু মিল) অন্য কোনো দেশ বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে গ্রহণ করেনি। সরকারের এই প্যাকেজে জাতীয় পার্টির রওশন কিংবা বিএনপি জামায়াত জোটের যেই আসুন, ফলাফল ভিন্ন হবে না।
অ্যান্টি-ডেমোক্র্যাটিক বা অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে এই ফেনোমেনাটি এক ধরনের স্ট্রাকচারাল প্রটেকশন বা কাঠামোগত প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করছে। কাজেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটকে সব ভয়ভীতি-প্রলোভন-সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে ইস্পাতকঠিন ঐক্য নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। সরকারের প্যানিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সফলতা হয়তো বা অতি নিকটে।