- সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ২০ জুলাই ২০২০
টানা বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি উপচে এবারের বন্যায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার ১৮০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। এসব জমিতে রয়েছে ভুট্টা, ধান, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। এই নিয়ে উপজেলার প্রায় ৩৪ হাজার কৃষক মারাত্মক বিপাকে পড়েছে। বন্যার পানি দ্রুত অপসারণ না হলে পরবর্তী ফসল ঘরে তোলা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
বন্যায় ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে উপজেলার বরাইদ, তিল্লি ও দিঘুলিয়া ইউনিয়নে। এছাড়াও দরগ্রাম, হরগজ ও ফুকুরহাটিসহ ৭টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কৃষকরা জানিয়েছে, বন্যায় দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে ফসলের জমি। ধানগাছ পচতে শুরু করেছে। নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। পানি শিগগিরই নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে এসব ফসল ঘরে তোলার কোনো আশাও নেই। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির যে পরিমাণ এ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি।
এদিকে ফসল হারিয়ে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। বেশির ভাগ কৃষক এনজিও, ব্যাংক অথবা চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণে টাকা এনে ধান, ভুট্টা ও সবজির আবাদ করেছে। এখন বন্যায় ফসলহানিতে তারা দুই চোখে অন্ধকার দেখছে।
উপজেলার বরাইদ গ্রামের কৃষক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ৯০ শতাংশ আউশ ধান পানিতে তলিয়া গেছে। আমি এনজিও থিকা ঋণ আইনা ধান লাগাইছিলাম। আমার মতো অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থিকা ঋণ কইরা ধান লাগাইছে। এহন ঋণের টাকা শোধ করমু কেমনে? সরকার যদি আমাগো দিকে না তাকায় তয় মইরা যামু।
হামজা গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন বলেন, এবারের বন্যায় ১৫০ শতাংশ জমির ভুট্টা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দু’চোখে অন্ধকার দেখছি।
ভোঁয়া গ্রামের লেবু চাষি মো: শাহনুর মিয়া বলেন, ৪৫ শতাংশ জমিতে তিন শতাধিক লেবুর চারা লাগানো হয়েছে। নিয়মিত গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করছি। বাগানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় আতঙ্কে আছি। বাগানের লেবু গাছ মারা গেলে সাথে সাথে আমিও মরে যাবো।
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্যায় উপজেলায় ৮০ শতাংশ ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে। আউশ ধানসহ বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
১নং বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো: হারুন-অর-রশিদ বলেন, বরাইদ ইউনিয়ন ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বিভক্ত। এ বছর বন্যায় ও নদী ভাঙনে ফসল ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক পরিবারকে ত্রাণ ও নগদ সহায়তা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। বানবাসিদের দ্রুত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সাংসদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: খলিলুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আশরাফুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শতাধিক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, চাল, টিন ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।