today-is-a-good-day

বঙ্গোপসাগরে ৫৫ দিন ধরে ভাসছে নিষিদ্ধ রুশ জাহাজ

The Daily Samakal

তাসনিম মহসিন

 ১৭ ফেব্রুয়ারি ২৩

রুশ জাহাজ (ফাইল ফটো)

রুশ জাহাজ (ফাইল ফটো)

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিল রাশিয়ার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম বহনকারী রুশ জাহাজও। গত ২৪ ডিসেম্বর সেটি মোংলা বন্দরে আসার কথা থাকলেও ভিড়তে পারেনি। ফলে অন্য কোনো দেশের বন্দরে খালাস করতে না পেরে ৫৫ দিন ধরে ভাসছে বঙ্গোপসাগরে। তাৎক্ষণিক জাহাজের অবস্থান শনাক্ত-সংক্রান্ত গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইট থেকে বৃহস্পতিবার রাতে সর্বশেষ হালনাগাদে এ তথ্য জানা গেছে।

ওই ট্রাফিক ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ভারতের সাগরবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে রুশ জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে নোঙর করে রয়েছে। জাহাজটি ঠিক কোথায় যাবে, তা এখনও সুনির্দিষ্ট গন্তব্য ঠিক করেনি। তবে গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিকের ১৫ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি তখন বঙ্গোপসাগরে ভারতের অংশে মাঝ সমুদ্রে নোঙর অবস্থায় ছিল। রুট পরিবর্তন করে চীনের সায়েনথো বন্দরে গন্তব্য সুনির্দিষ্ট করেছিল, যা গত ৩১ জানুয়ারি চীনের বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘তারা আসলে কী করছে, কোনো কিছুই পরিস্কার নয়। দেখে মনে হচ্ছে, যে কোনোভাবেই সরঞ্জাম খালাস করে তারা এ এলাকা ছাড়তে চায়। ঢাকার রুশ দূতাবাস খোলাখুলি কোনো কথা বলছে না। ঢাকা তার অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছে, পরাশক্তির লড়াইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে বলি হবে না বাংলাদেশ। ফলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজ থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করতে দেওয়া হবে না।’

জাহাজটি ডিসেম্বরে আসার পর কখনোই বঙ্গোপসাগর ছাড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার এমন আচরণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে ঢাকা। কারণ, তাদের এত জাহাজ থাকতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজে কেন পণ্য পাঠাতে হলো। এখন এ জাহাজ খালাস করতে দেওয়া হচ্ছে না দেখে এখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থের কিস্তি চাইছে রাশিয়া। বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করবে। তবে অর্থ পরিশোধ করতে নিরাপদ মাধ্যম চায় ঢাকা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যাংকে লেনদেন করবে না বাংলাদেশ।’

ইউক্রেন সংকট শুরুর পর রাশিয়ার একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থের কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করা যায়, তা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন দুই দেশের সংশ্নিষ্টরা। রাশিয়া চীনের মাধ্যমে চীনা মুদ্রা আরএমবিতে পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছিল। তবে এতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সরকারের মধ্যে সই হওয়া আন্তঃরাষ্ট্রীয় ঋণচুক্তি অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট খরচ হবে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। এ অর্থের ১০ শতাংশ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ। বাকি ৯০ শতাংশ ঋণ দেবে রাশিয়া। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১০ শতাংশ অর্থ প্রতিবছর ৪ কিস্তিতে বাংলাদেশ পরিশোধ করে আসছিল।

উরসা মেজর নামে রাশিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে তার আগেই ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায় যে ওই জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা ৩’ জাহাজ। রং ও নাম বদল করে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা জাহাজটি রূপপুরের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে, যা প্রকৃতপক্ষে ‘স্পার্টা ৩’-এর সনদ নম্বর। যাচাই করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয় বাংলাদেশ।

ফলে অন্য উপায় অবলম্বন করে জাহাজের পণ্য খালাস করে তা পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। জাহাজটি বাংলাদেশে ভিড়তে না দিলে সেটি ভারতের বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। তবে সেখানেও তা সম্ভব হয়নি। এরপর জাহাজটির চীনের দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি যায়নি।

মস্কোর কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জাহাজটি রাশিয়ায় ফেরত নিয়ে আসা হবে। অন্য একটি জাহাজে করে বাংলাদেশে পণ্য পাঠানো হবে।

জাহাজটির পণ্য খালাস নিয়ে মার্কিন পক্ষ থেকে এক প্রকার সতর্ক করা হয়েছে বাংলাদেশকে। জাহাজের পণ্য খালাস করতে না দিলে তা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ঢাকাকে জানিয়েছে রাশিয়া।