বগুড়ায় করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটে ৭ রোগীর মৃত্যু

Daily Nayadiganta

করোনায় ১ দিনে মৃত্যু ১১ জন, শনাক্ত ১০০

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে চিকিৎসাধীন সাতজন রোগী মারা গেছেন – ছবি- সংগৃহীত

করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে চিকিৎসাধীন সাতজন রোগী মারা গেছেন। চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। একইসাথে অরো ১০ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছে হাপসাতাল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আরো চারজন মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। একই সময়ে জেলায় নতুন করে ১০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তথা কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০ শয্যার ওই হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তি ছিল। যাদের বেশিরভাগেরই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালটিতে বর্তমানে মাত্র দু’টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থাকায় দু’জনের অতিরিক্ত কোনো রোগীকে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে ঘনীভুত অক্সিজেনের মাত্রা) ৮৭-এর নিচে তাদের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। তখন সেখানে সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেয়া হতো। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়লে একই বছরের জুনের শেষ দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়। পরবর্তীকালে শজিমেক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানেও রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হয়।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল নয়া দিগন্তকে জানান, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু হলেও সবগুলো শয্যায় উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এখনো যুক্ত হয়নি। এমনকি আট শয্যা নিয়ে চালু করা আইসিইউ ইউনিটেরও মাত্র দু’টিতে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। ফলে পুরো হাসপাতালের মধ্যে আইসিইউ ইউনিটের ওই দু’টি শয্যায় কেবল উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সররবরাহ করা সম্ভব। এর বাইরে ভর্তি দুই শতাধিক রোগীকে হয় ফেস মাস্ক অথবা রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে।

ডা: কাজল বলেন, ফেস মাস্ক দিয়ে একজন করোনা রোগীকে প্রতি মিনিটে মাত্র পাঁচ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব। অন্য দিকে রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। আর হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে একজন রোগীকে প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেয়া যায়। তিনি বলেন, যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-এর ওপরে কেবল তাদের ফেস মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব। আর যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-এর নিচে কিন্তু ৮৭-এর ওপরে তাদের রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে সুস্থ্য করে তোলা যায়। তবে যাদের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৭-এর নিচে তাদের জন্য অবশ্যই উচ্চ মাত্রার অর্থাৎ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাযুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন। তাছাড়া তাদের বাঁচানো কঠিন।

অক্সিজেন সঙ্কটে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা
২০০ শয্যার ওই হাসপাতালে শুক্রবার সকালে ২২৩ জন রোগী ভর্তির তথ্য দিয়ে ডা: কাজল বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতালে এখন যেসব রোগী আসছেন তাদের বেশিরভাগেরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ থেকে ৭২-এর মধ্যে। তাদের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের হাসপাতালে শুধু আইসিইউ ইউনিটের দু’টি শয্যায় ওই ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে দু’শতাধিক রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আরো অন্তত ১০ জনের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন।’

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ(শজিমেক) হাসপাতালেচিকিৎসাধীন আরো ৪জন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে মারা যাওয়া ১১ জনের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এছাড়া জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮০ নমুনার ফলাফলে নতুন করে ১০০ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ২৬ দশমিক ৩১ ভাগ। একই সময়ে সুস্থ হয়েছে ৫৩ জন। নতুন আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে সদরের ৬৪ জন, সোনাতলায় ১১ জন, শিবগঞ্জে দু’জন, আদমদীঘি দু’জন, দুপচাঁচিয়ায় তিনজন, কাহালুতে চারজন, ধুনটে পাঁচজন, গাবতলীতে তিনজন ও শাজাহানপুরে ছয়জন রয়েছে।

শুক্রবার অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান, বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা: সাজ্জাদ-উল-হক। তিনি জানান, ১ জুলাই শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ২৩৫ টি নমুনায় ৫৯ জনের, জিন এক্সপার্ট মেশিনে চার নমুনায় সবার নেগেটিভ ও এন্টিজেন পরীক্ষায় ১১৬ নমুনায় ২৫ জনের পজিটিভ এসেছে।

এছাড়া টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ২৫ নমুনায় ১৬ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ডা: সাজ্জাদ-উল-হক আরো জানান, এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত ১৪ হাজার ৭৩ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৪১০ জনের। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৯১৫ জন।