ঢাকা
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের একটা বড় আক্ষেপ আছে।
এ দেশের ফুটবল মানেই বড় এক আক্ষেপ, এক হাহাকার; তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, ফুটবলপ্রেমীদের সেই আক্ষেপ আবার কী! তাদের আক্ষেপটা দেশের ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি ক্লাব নিয়ে—আবাহনী ও মোহামেডান। সারা দেশে যে দুটি ক্লাবের লাখ লাখ সমর্থক, তারাই কিনা কার্যক্রমহীন, নির্জীব! নিজেদের দর্শক সমর্থন দিয়ে যে দুটি ক্লাব বদলে দিতে পারে দেশের ফুটবলের চেহারা, তারাই অনেক বছর ধরে মৌসুমপ্রতি একটা দল গড়েই নিজেদের দায়িত্ব সারছে। এ প্রজন্মের মধ্যে সমর্থন ছড়িয়ে দেওয়া, ক্লাব কার্যক্রমের আধুনিকায়ন—কোনো কিছু নিয়েই যেন উৎসাহ দেখাচ্ছিল না তারা।
অনেক দিন পর ফুটবলপ্রেমীদের সেই আক্ষেপের কি সমাপ্তি ঘটতে চলেছে! অন্তত আবাহনী লিমিটেডের সাম্প্রতিক কার্যক্রম তো সেটিই বলছে। এ ব্যাপারে মোহামেডান এখনো আগের তিমিরেই আছে। কিন্তু আবাহনী যেন নিজেদের অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছে।
এবারের মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট জিতেছে আবাহনী। গত শনিবার বসুন্ধরা কিংসকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে আবাহনী ২০১৮ সালের পর ঘরোয়া ফুটবলে নিজেদের প্রথম সাফল্যের দেখা পেয়েছে। কিন্তু মাঠের বাইরেও আবাহনী যে মৌসুমের শুরুতেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেকটা পথই এগিয়ে গেছে। আবাহনী যেন এবার আগের চেয়ে অনেকটাই গোছানো। পেশাদারির ছোঁয়া যেন আরও অনেক বেশি এবারের মৌসুমে।
ডিজিটাল এ যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুরুত্ব যে কতটা, সেটি না বললেও চলে। ফুটবলপ্রেমীমাত্রই এখন জানেন, ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় বিশ্বের বড় ক্লাবগুলো কতটা সক্রিয়। ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো তো বটেই, এশিয়া, এমনকি বাংলাদেশের আশপাশের দেশগুলোর ফুটবল ক্লাবও ভার্চ্যুয়াল জগৎকে গুরুত্ব দেয়। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, লিভারপুল, পিএসজির মতো ক্লাবগুলোর ফেসবুক, টুইটার পেজ তথ্যের আধার।
আবাহনীর ফেসবুক পোস্ট
বিভিন্ন পোস্টে তারা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছে সমর্থকদের সঙ্গে। ম্যাচের তথ্য বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনাও আলোচিত হয় অফিশিয়াল এসব পেজে। সর্বশেষ ম্যাচের ভিডিও, ছবি—কী নেই! পেজগুলোর অনুসারীর সংখ্যা ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বেই। এসব পেজে লাইক দিয়ে ক্লাবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন সমর্থকেরা। ইউরোপের ধনী ক্লাবগুলোর কথা বাদ দিন; ভারত, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও বড় ক্লাবগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়।
কলকাতার ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগানের ফেসবুক, ইউটিউব পেজ ভেরিফায়েড। লাখ লাখ অনুসারী এসব পেজে লাইক দিয়ে প্রিয় ক্লাবের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। এই জায়গাতেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো, বিশেষ করে জনপ্রিয়তম দুই ক্লাব। কিন্তু এবার আবাহনী দারুণভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজির হয়ে নিজেদের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মোহামেডান এটি নিয়ে আদৌ ভেবেছে কি না, সেটা জানা যায়নি। অন্তত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের কোনো অফিশিয়াল পেজ কারও চোখে পড়েনি।
প্রথম বাংলাদেশি ক্লাব হিসেবে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় নিজেদের উপস্থিতি ঘোষণা করেছিল বসুন্ধরা কিংস। প্রিমিয়ার লিগে পা দিয়েই বসুন্ধরা ফেসবুক আর টুইটারে তাদের অফিশিয়াল পেজ চালু করে। দুটিই এখন ভেরিফায়েড। এ মুহূর্তে বসুন্ধরা কিংসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার। কিংসের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেটি অবশ্য খুব বেশি সক্রিয় নয়। একটি পরিপূর্ণ পেশাদার ক্লাব হিসেবে গড়ে ওঠার উদ্দেশ্যেই বসুন্ধরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি বাড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সমর্থক তৈরিও তাদের বড় একটা উদ্দেশ্য।
আবাহনীর ইনস্টাগ্রাম পোস্ট
যুগের চাহিদাকে বসুন্ধরার মতোই প্রাধান্য দিয়েছে আবাহনী। মৌসুমের শুরু থেকেই ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে তারা সরব। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের ফেসবুক পেজের অনুসারীর সংখ্যা ৭২ হাজার অতিক্রম করেছে। টুইটারে এখনো অনুসারী খুব বেশি না হলেও ইনস্টাগ্রামে এটি হাজার ছড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতিটা খুব বেশি দিন না হলেও অন্তত ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের অনুসারী তাদের বাড়ছে ক্রমে। এটা দারুণ একটা ব্যাপার।
ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবাহনী নিজেদের কার্যক্রম আরও বাড়াবে বলেই জানিয়েছেন দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস, ‘আমরা মাত্র শুরু করেছি ব্যাপারটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা পেশাদার দল তৈরি করেছি। তারাই এটি এগিয়ে নিচ্ছে। সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া খুবই ইতিবাচক।’
আবাহনীর টুইটার পোস্ট
এবারের স্বাধীনতা কাপ ফুটবল ফাইনালে আবাহনী ক্লাব মাঠের দর্শকদের জার্সি বিতরণও করেছে। সেদিন বসুন্ধরার বিপক্ষে ফাইনালে গ্যালারিতে আবাহনীর জার্সি পরে প্রচুর দর্শককে দেখা গেছে। সত্যজিৎ বললেন, এটিই মার্চেন্ডাইজিং কার্যক্রম শুরুর প্রথম ধাপ, ‘পৃথিবীর প্রায় সব ক্লাবেরই নিজেদের মার্চেন্ডাইজিং থাকে। বাংলাদেশে এটি একদিন ছিল না। এখনই আমরা মার্চেন্ডাইজিংয়ে যাচ্ছি না। স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে ক্লাব থেকে সমর্থকদের মধ্যে বিনা মূল্যে জার্সি বিতরণ করা হয়েছে। এটা বাজার সৃষ্টির জন্যই। ভবিষ্যতে অবশ্যই আমরা ক্লাবের রেপ্লিকা জার্সি বিক্রির উদ্যোগ নেব।’
বসুন্ধরার পর আবাহনীর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের ফুটবলে সুবাতাস ছড়িয়ে দিক। মোহামেডান কেন পিছিয়ে থাকবে এ ক্ষেত্রে, প্রশ্নটা কিন্তু উঠছেই।