স্টাফ রিপোর্টার
১৩ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ২২৪ জনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে বিএনপি’র অফিসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাঙচুর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। আজ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।
গতকাল নয়াপল্টনের কার্যালয় পরিদর্শন করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ নেতারা। পরে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় অফিসের অবস্থা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপি’র কার্যালয়ের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও তছনছ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী। তিনি বলেন, নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত ৭ই ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী ভাঙচুর করার পাশাপাশি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইলপত্র, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ নগদ টাকা লুট করে। বিজয়ের মাসে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরকারের পেটোয়া বাহিনী যেভাবে আসবাবপত্র তছনছ করেছে, লুটপাট করেছে, নগ্ন সন্ত্রাস করেছে তা নজিরবিহীন।
তিনি বলেন, কার্যালয়ের প্রথম ফ্লোরে আমাদের চেয়ারপারসনের অফিস। সেটি সব সময় বন্ধ থাকে। চেয়ারপারসনের রুমের দরজা ভেঙে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
তৃতীয় তলায়ও তছনছ করেছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ তলায় আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিসেও ভাঙচুর করেছে। সেখান থেকেও কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইলপত্র, নথিপত্র সব নিয়ে গেছে। অ্যাকাউন্টস অফিস থেকেও সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বিএনপি’র কার্যালয়ে ৬ তলায় একটি লাইব্রেরি আছে। সেটিও রক্ষা পায়নি। জিয়াউর রহমানের মুরাল পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে।
৭ই ডিসেম্বর পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে দাবি করে মোশাররফ বলেন, যেভাবে হামলা চালিয়েছে তা বিশ্বে নজিরবিহীন। নিন্দা করার ভাষা নেই। অফিস থেকে সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য ছিল ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ বানচাল করা।
বিএনপি’র কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপি’র পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, রোববার আমরা অফিসে (কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে) আসতে পেরেছি। কার্যালয় থেকে কী কী খোয়া গেছে তার তালিকা করছি। তারপর সিদ্ধান্ত নেবো কী করবো। এসময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা প্রতিটি সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করার চেষ্টা করেছি। বরং সরকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে প্রতিটি সমাবেশে। সরকারের নির্দেশে তাদের দলের কর্মীরা ১০ তারিখ ঘিরে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করেনি। আতঙ্কিত করছে সরকার, বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে দেখিয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবো। এই সরকারকে বিদায় জানাবো। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল–আব্বাসসহ ২২৪ জনের জামিন নাকচ
পল্টন থানার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ২২৪ জনের জামিন আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন এই আদেশ দেন। জামিন না হওয়া অন্য নেতারা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক এমপি মো. ফজলুল হক মিলন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও সাবেক এমপি সেলিম রেজা হাবিব প্রমুখ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেছে। আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানি করেন জয়নুল আবেদীন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার। এ সময় এজলাসে বিএনপিপন্থি শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান।
শুনানিতে আবেদনের পক্ষে আইনজীবীরা বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ ২২৪ জনের জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তাদের আইনজীবীরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ মামলা দিয়েছে। সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এবার তাদের জামিন দিন। এজাহারে মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের নাম ছিল না। এজাহারভুক্ত দুই আসামি জামিন পেয়েছেন। কাজেই তারাও জামিন পাওয়ার হকদার। মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ অন্যরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। শুধু হয়রানি করার জন্যই তাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। সুতরাং ন্যায়বিচারের জন্য তাদের জামিন দেয়া উচিত। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর চলছে। তারা শহীদদের সম্মান জানাবেন। তাদের জামিন দিন। অসুস্থ বিবেচনায় খায়রুল কবীর খোকন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী হিসেবে আব্দুস সালামের জামিন চান তারা। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে যুক্তি তুলে ধরা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন।
জামিন আবেদন নাকচের পর আদালতের সামনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সরকার বিরোধী সেøাগান দিতে দেখা গেছে।
এর আগে, গত রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালতে মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসহ ৭ জনের জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। এরপর অপর আসামিদের জামিন আবেদন করা হয়।