
দেশে সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে যত প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে তার প্রায় অর্ধেক বা ৪৫ শতাংশই এসেছে পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক পাঁচটি হচ্ছে—ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে গত জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ৯২ কোটি মার্কিন ডলার, যা ওই মাসে আসা মোট প্রবাসী আয়ের ৪২ শতাংশ। জানুয়ারিতে দেশে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়–সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়ের দিক থেকে উল্লিখিত পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে তিন ব্যাংকের অবস্থানের অদলবদল ঘটেছে। গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় আনার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। ওই মাসে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৬ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসে অগ্রণী ব্যাংক পঞ্চম অবস্থানে নেমে গেছে। জানুয়ারিতে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে সাড়ে ১৩ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।
অগ্রণী ব্যাংক দ্বিতীয় অবস্থান থেকে পঞ্চম অবস্থানে নেমে যাওয়ায় জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে গত মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৮ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে এসেছিল ২১ কোটি ডলার। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা কমলেও শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে জানুয়ারিতে এক ধাপ উন্নতি হয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। গত মাসে এই ব্যাংকটি প্রবাসী আয় এনেছে ১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার। সেই হিসাবে ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় আসা কমলেও শীর্ষ তালিকায় এটি তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের মতো বেসরকারি খাতের ট্রাস্ট ব্যাংকেরও এক ধাপ উন্নতি হয়েছে। প্রবাসী আয় আনার দিক থেকে গত জানুয়ারিতে ব্যাংকটি উঠে এসেছে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে। গত মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে এসেছিল ১৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় আসা কিছুটা কমলেও শীর্ষ তালিকায় এক ধাপ ওপরে উঠেছে ব্যাংকটি।
এদিকে প্রবাসী আয় আনার দিক থেকে শীর্ষস্থানের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে ইসলামী ব্যাংক। গত মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২৮ কোটি ২২ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে এসেছিল প্রায় ৩৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা প্রায় ৯ কোটি ডলার কমেছে। তারপরও ব্যাংকটির শীর্ষ অবস্থানের কোনো হেরফের হয়নি। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশের শ্রমিকপ্রধান দেশগুলোতে ইসলামী ব্যাংকের উপস্থিতি অন্য যেকোনো ব্যাংকের চেয়ে বেশি। এ কারণে দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সাড়া পায় শরিয়াহভিত্তিক এই ব্যাংকটি।
প্রবাসী আয় আনার তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা প্রত্যেক ব্যাংকেরই প্রবাসী আয় ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে কমেছে। কারণ, সার্বিকভাবে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় ডিসেম্বরের চেয়ে কম এসেছে। গত জানুয়ারিতে সব মিলিয়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে যার পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় সাড়ে ৪৫ কোটি ডলার বা সোয়া ১৭ শতাংশ কম এসেছে। তবে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয় কয়েক মাস ধরেই ২০০ কোটি ডলারের ওপরে রয়েছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক।