প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় স্বতন্ত্র এমপিরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬২টি আসনে জয়লাভ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।  এর মধ্যে ৫৮ জন এমপি বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। উন্মুক্ত নির্বাচনে নৌকাকে পরাজিত করে ভোটে জয়লাভ করেন তারা। আর মাত্র দুইদিন পরই বসছে জাতীয় সংসদের অধিবেশন। কিন্তু ওই অধিবেশনে স্বতন্ত্র এমপিরা কি ভূমিকা পালন করবেন তা তারা নিজেরাও জানেন না। সাধারণত সংসদে সরকারের পক্ষে ও সরকারের বিপক্ষে এমপিরা ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু এবারের সংসদে বেশিরভাগ এমপি আওয়ামী লীগ দলীয় হওয়ায় তারা সংসদে সরকারের বিপক্ষে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখতে চান না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র এমপিদের দলীয় ব্যানারে নেয়া হবে না। সংসদে তাদেরকে বিরোধী দলের সঙ্গে রাখা হবে। গতকাল সংসদ সচিবালয়ের অধিবেশন কক্ষের আসন বিন্যাস চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সেখানে স্বতন্ত্র এমপিদের রাখা হয়েছে ১১টি আসন পাওয়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে। কিছু আসন রাখা হয়েছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের পাশে। স্বতন্ত্র কয়েক এমপি গত কয়েকদিন ধরে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। অন্য স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। মোর্চা গঠন করা যায় কিনা তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা করেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ স্বতন্ত্র এমপি তৎপর ওইসব এমপিদের স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দেবেন সে অনুযায়ী সংসদে তারা ভূমিকা পালন করবেন। এর বাইরে অন্য কোনোকিছু তারা ভাবছেন না।

এমন এক স্বতন্ত্র এমপি ঢাকা-৫ আসনের আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল মানবজমিনকে বলেন, কয়েকজন তার সঙ্গে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ করেছিল। তারা আমার মনোভাব জানতে চেয়েছিল। জোট বা মোর্চা গঠন করা যায় কিনা সে বিষয়ে ধারণা পেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তাদেরকে বলে দিয়েছি, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দেবেন সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবো। এর বাইরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সবমিলিয়ে সংসদে স্বতন্ত্র এমপিদের ভূমিকা কী হবে- এ নিয়ে কানাঘুষা চলছে দেশজুড়ে। নানা আলোচনার মধ্যেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাক পেয়েছেন স্বতন্ত্র এমপিরা। আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক থেকে কি ধরনের নির্দেশনা আসতে পারে এমন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা ও কয়েক স্বতন্ত্র এমপি মানবজমিনকে বলেন, সংসদে স্বতন্ত্র এমপিদের করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দেবেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনীতিতে দলের ঐক্য সংহত করতে তাদের করণীয় কী হবে-এ প্রসঙ্গে দিকনির্দেনা দেবেন। পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে আলোচনা হবে। স্বতন্ত্র এমপিরা আওয়ামী লীগের পদধারী হলেও সংসদে সরকারের বাহিরে থাকবেন তারা। নানা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনায়ও মুখর হবেন। এর আগে গত ১০ই জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ গ্রহণের পরপরই দলীয় এমপিদের নিয়ে সংসদীয় দলের সভা করে আওয়ামী লীগ। ওই সভায় থেকে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচন করা হয়।

স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের অবস্থান কী হবে- ওই বৈঠকে সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্বতন্ত্রদের সঙ্গে শেখ হাসিনা আলাদা করে বসবেন বলে ওই বৈঠকে অবহিত করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক এমপি জানান, স্বতন্ত্র এমপিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের পদধারী হলেও আপাতত তাদের সংসদীয় দলে নেয়ার পরিকল্পনা নেই। তাই স্বতন্ত্রদের আলাদা জোট গঠনের মাধ্যমেই সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। আর স্বতন্ত্র জোটের নেতাই যে বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা পাবেন, সেটা নিশ্চিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সব সিদ্ধান্ত নেবেন স্বতন্ত্র এমপিরা। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বতন্ত্র এমপিরা সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেবেন। এদিকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের কথা অবহিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে আসন বণ্টনের জন্য দল ও জোটওয়ারী পৃথক তালিকা করতে হবে। আইন অনুযায়ী সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার তারিখের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে এ তালিকা করতে হবে। নির্দলীয় সদস্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদান অথবা রাজনৈতিক দল বা নির্দলীয় সদস্যদের নিয়ে জোট গঠন করা হলে সে অনুযায়ী পৃথক তালিকা প্রস্তুতের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে জোট গঠন অথবা রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগদানের বিষয়টি নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী ২১ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে। এ অবস্থায় কোনো নির্দলীয় সংসদ সদস্য দলে বা জোটে যোগদান করেছেন কিনা; অথবা সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠিত হয়েছে কিনা, তা ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে অনুরোধ করা হয় ইসির চিঠিতে।

স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসির পাঠানো চিঠির কোনো জবাব এ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। গণভবনে বৈঠক শেষে ইসির চিঠির জবাব দেবেন তারা। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, এবার সংসদে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি, স্বতন্ত্র ৬২টি ও জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। অন্যান্য দল ৩টি। এর মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী, ৬ জন এমপি মিলে একজন নারীকে মনোনয়ন দিতে পারবেন সংরক্ষিত আসনের জন্য। সে অনুয়ায়ী, নারী আসন আওয়ামী লীগের কোটায় যাবে ৩৭টি। স্বতন্ত্র সদস্যরা ৬২টি আসন পাওয়ায় ১১টি নারী আসন যাবে স্বতন্ত্রদের কোটায়। জাতীয় পার্টি পাবে দুইটি আসন। আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট গঠন করে নারী এমপি নির্বাচিত করতে পারবেন। এ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেতে তদবির ও ধরনা দিতে শুরু করেছেন প্রত্যাশীরা। শুধু দলীয় নয়, এবার স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, উদ্যোক্তা, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারা। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী এমপিরাও পদ ধরে রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

manabzamin