প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্যর প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ঢাকায় গণস্বাস্থ্য ভ্রাম্যমাণ করোনা চিকিৎসা দলের প্রতি দুই সপ্তাহে ১০০০ (এক হাজার) করোনা রোগীর সাশ্রয়ী উন্নত চিকিৎসার উদ্যোগ ও সঙ্গে ১১টি সরকারের জরুরী কর্তব্য করণীয় উল্লেখ করে তিনি এই চিঠি দিয়েছেন।
রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষ থেকে ‘জনস্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি’টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। সোমবার (১৯ এপ্রিল) যমুনা নিউজকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পৌঁছেছে বলে নিজেই নিশ্চিত করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, আমি যা এই মুহূর্তে ভালো মনে করেছি সেটাই করেছি। আমি সবসময়েই দেশ ও জাতীর মঙ্গল কামনা করি ও তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাকীটা প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
খোলা চিঠিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন,
মাননীয়া ১৯ এপ্রিল ২০২‘১ ইং
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ
প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫
বিষয়: জনস্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি–
: ঢাকায় গণস্বাস্থ্য ভ্রাম্যমাণ করোনা চিকিৎসা দলের প্রতি দুই সপ্তাহে ১০০০ (এক হাজার) কোভিড-১৯ রোগীর সাশ্রয়ী উন্নত চিকিৎসার উদ্যোগ। সরকারের জরুরী কর্তব্য সমূহ
১. অক্সিজেন, ওষুধ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী থেকে বিশেষ SRO (Statutory Regulatory Order) এর মাধ্যমে সকল প্রকার শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, মূসক প্রভৃতি প্রত্যাহার করা।
২ . ICU পরিচালনার জন্য জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসক ও নার্স প্যারামেডিকদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা- ২০০ জন চিকিৎসক ও ৫০০ জন নার্স টেকনিশিয়ানকে ICU তে দ্রুত অক্সিজেন প্রদান (High Flow Nasal Canula), নন-ইনভেসিব শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া (Non-invasive Ventilatory Support),শ্বাসতন্ত্রে টিউব মারফত অক্সিজেন সরবরাহ (Intubation and Mechanical Ventilatory Support), অন্যান্য নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া (ECMO- Exracorporeal Membrane Oxygenation) এবং শ্বাসনালী ট্যাকিয়া (Tracheostomy) ছিদ্র করে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এক মাসের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা।
৩ . সকল ওষুধের মূল্য এবং রোগ পরীক্ষার পদ্ধতি সমূহের চার্জ সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া।
৪ . কারাগারে আবদ্ধ সকল ব্যক্তিকে দ্রুত টিকা দেবার ব্যবস্থা নেয়া এবং খুনের দায়ে এবং দুর্নীতির কারণে দণ্ডিত অভিযুক্ত ছাড়া অন্য সকলকে জামিনে মুক্তি দেয়া।
৫. সরকারী ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সমূহে প্রতিবছর ২০০০০ (বিশ হাজার) ছাত্র ভর্তি করা এবং MBBS পাশের পর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করা। অতীতে এই নিয়ম চালু করে দুই সপ্তাহ পর প্রত্যাহার করে ভুল করেছিলেন।
৬. আগামী বাজেটে সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনী সংস্কার, গভীর নলকূপ ও বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মেডিকেল, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ও টেকনিশিয়ানদের জন্য ডরমিটরি, ক্লাসরুম, লাইব্রেরী, ডাইনিং রুম এবং ৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ও টেকনিশিয়ান প্রধানদের জন্য ৬০০-৭০০ বর্গফুটের বাসস্থান, বহি:বিভাগ সহ ৩০ শয্যার হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও অপারেশন থিয়েটার নির্মাণের জন্য ৬ (ছয়) কোটি টাকা এবং অপারেশন থিয়েটার, এক্সরে আলট্রাসনোলজি, চক্ষু ও বিভিন্ন ল্যাবরেটরির যস্ত্রপাতির জন্য অন্যূন ৪ (চার) কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা নিন। এরূপ উন্নয়নে ইউনিয়নের প্রায় একলক্ষ জনগণের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
৭. লকডাউন কার্যকর করার জন্য দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারদের সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার পরিবর্তে বিনামূল্যে মাসিক রেশনে চাল, ডাল, আটা, আলু, তেল, চিনি, পিয়াজ, রসুন প্রভৃতি দিতে হবে। রেশন বিতরণের জন্য সামরিক বাহিনী, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং এনজিও কর্মীদের ব্যবহার সুফল দেবে।
৮. ট্রিপসের বাধ্যতামূলক (Compulsory) লাইসেন্সের মাধ্যমে ভ্যাকসিন উৎপাদন সুবিধা সৃষ্টির জন্য নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে আপনার বিশেষ দূত করে ইউরোপে পাঠান।
৯. ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য ০.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করুন, সুফল পাবেন।
১০. গত বছর দ্রুত সিনোজাকের ট্রায়াল অনুমোদন না দিয়ে যে ভুল করা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।
১১ . গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত এন্টিবডি এন্টিজেন অনুমোদন এক বছরে হয়নি। ড.বিজন কুমার শীলের ভিসা না হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না। ৬ মাস আগে ৪ বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে Real time PCR ল্যাবরেটরি স্থাপিত হলেও ব্যবহার শুরু করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অদ্যাপি অনুমতি দেয়নি। ক্ষতি হচ্ছে দেশের, বিষয়টি আপনাকে পুনরায় অবগত করলাম। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতির কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা সমধিক।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও নববর্ষের শুভ কামনায়
(জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী)
ট্রাষ্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
অনুলিপি: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসকে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুলিপি দেয়া হলো।